উসমান ইবনে আফফান (রা) এবং অন্যান্য সাহাবি সম্পর্কে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

উসমান ইবনে আফফান (রা) এবং অন্যান্য সাহাবি সম্পর্কে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩, উসমানের (রা) প্রতি তিক্ততা ও বৈরিতা নতুন কিছু নয়। তাঁর খেলাফতের সময় খারিজিরা {১} তাঁর দোষ খুঁজে বের করে সমালোচনা করত, এমনকি তারা তাঁকে হত্যাও করেছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে, খারিজিদের একজন মক্কায় একবার আবদুল্লাহ ইবনে উমরের (রা) কাছে গিয়ে বলে, “হে ইবনে উমর, তোমাকে আমার কিছু প্রশ্ন করার আছে।”

উসমান ইবনে আফফান (রা) এবং অন্যান্য সাহাবি সম্পর্কে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

উসমান ইবনে আফফান (রা) এবং অন্যান্য সাহাবি সম্পর্কে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইবনে উমর: বলুন, কী জিজ্ঞেস করবেন।

লোকটি: আমি আল্লাহর কসম করে জিজ্ঞেস করছি, উসমান কি ওহুদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল?

ইবনে উমর: আপনি আমাকে আল্লাহর কসম করে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি আপনাকে উত্তর দিচ্ছি। হ্যাঁ, তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।

লোকটি: উসমান কি বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনে উমর: আপনি আমাকে আল্লাহর কসম করে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি আপনাকে উত্তর দিচ্ছি। হ্যাঁ, তিনি বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন।

লোকটি: তিনি কি রিদওয়ানে অঙ্গীকারের সময় নিখোঁজ ছিলেন?

ইবনে উমর: আপনি আমাকে আল্লাহর কসম করে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি আপনাকে উত্তর দিচ্ছি। হ্যাঁ, তিনি রিদওয়ানের অঙ্গীকারের সময় নিখোঁজ ছিলেন।”

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এরপর লোকটি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ফিরে চলে যাচ্ছিল। ইবনে উমর তাকে ডেকে বললেন, “ফিরে আসুন, আমার কথা শুনুন। আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমি বলছি, হ্যাঁ, উসমান ওহুদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ সুরা আলে ইমরানে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, যারা পালিয়ে গিয়েছিল তিনি তাঁদের ক্ষমা করেছেন [৩:১৫৫]। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলছি, তিনি রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদকে বিয়ে করেছিলেন, রুকাইয়া বদরের যুদ্ধের সময় মারাত্মক অসুস্থ ছিলেন।

নবিজি (সা) নিজে তাঁকে (উসমানকে) সেই সময় মদিনায় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি গনিমতের অংশ পাওয়ার মধ্য দিয়ে বদরের যুদ্ধের একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। আপনার তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, রিদওয়ানের অঙ্গীকারের ঘটনা শুধু উসমানের কারণেই ঘটেছে । এখন এই সব কথা আপনার লোকদের কাছে গিয়ে বলুন “

উসমান ইবনে আফফান (রা) ছিলেন অত্যন্ত নরম মনের মানুষ। তাঁর ভদ্রতা ছিল সর্বজনবিদিত। তিনি ছিলেন লাজুক স্বভাবের। তাঁর লাজুকতা নিয়ে নবিজি (সা) একবার বলেছিলেন (যার উল্লেখ বুখারি ও মুসলিমে আছে) যে, এমনকি ফেরেশতারাও তাঁর ব্যাপারে লজ্জা বোধ করেন।”

রিদওয়ানের অঙ্গীকারে ১,৪০০ সাহাবি অংশ নেন, তাঁদের মধ্যে প্রধান সব সাহাবিই ছিলেন। আমরা ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত’ হিসেবে বিশ্বাস করি যে সাহাবিরা আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এটিই সুন্নি ইসলামের মূল ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত বলতে বুঝায়, যারা সুন্নত ও জামাতের অনুসরণ করে। এখানে জামাত বলতে যাঁদের বুঝব তাঁদের প্রথমেই আছেন সাহাবিরা।

 

উসমান ইবনে আফফান (রা) এবং অন্যান্য সাহাবি সম্পর্কে সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সাহাবিদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি কোরান ও সুন্নাহয় সমর্থিত, সেটা আমরা আমাদের সাধারণ বিচার-বুদ্ধিতেও বুঝতে পারি। সাহাবিরা ছাড়া পবিত্র কোরান আর কার মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে? সাহাবিরা ছাড়া নবিজির (সা) সুন্নাহ আর কার মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে? সাহাবিদের ছাড়া ইসলামের জ্ঞানই বা আমাদের কাছে আসত কীভাবে? একজন পণ্ডিতের ভাষায়, “আপনি যদি ইহুদিদের প্রশ্ন করেন তাদের ধর্মে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক লোক কারা, তারা বলবে সেই ৭০ জনের কথা যারা সিনাই পর্বতে মুসার সঙ্গে ছিলেন। যদি আপনি খ্রিষ্টানদের জিজ্ঞেস করেন তাদের ধর্মের সবচেয়ে বেশি ধার্মিক লোক কারা, তারা বলবে যিশুর ১২ জন শিষ্য।”

কিন্তু আমাদের মুসলিমদের মধ্যে একদল আছে যারা সাহাবিদের উচ্চতর মর্যাদার বিষয়টি মানে না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এমনকি তারা সাহাবিদের মন্দ লোক বলেও মনে করে। সাহাবিদের প্রশংসাসূচক নবিজির (সা) হাদিসকেও তারা অস্বীকার করে। কিন্তু সুরা ফাতহের আয়াতকে (৪৮:১৮) তারা অস্বীকার করবে কীভাবে, যেখানে আল্লাহ নিজেই বলছেন যে তিনি মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন যখন তাঁরা নবিজির (সা) কাছে আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন? প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, পবিত্র কোরানের এই আয়াত থেকেই আমরা সুন্নিরা “রাদি আল্লাহু আনহু” শব্দমালা পেয়েছি।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment