আবিসিনিয়ার মুসলিমদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় | আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন?, সব অমুসলিম দেশ এক রকম নয়। অমুসলিমদের কিছু কিছু দেশে মুসলিমরা শাস্তিপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতের জন্য বসতি স্থাপন করতে পেরেছিল; আবার কিছু দেশে পরিস্থিতি ছিল বিরূপ। মক্কা ও আবিসিনিয়া এক রকম ছিল না। আমাদের ধর্মে এ বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা রয়েছে: আমাদের সেসব দেশেই বসবাস করা উচিত, যেখানে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে আল্লাহর ইবাদত করতে পারি। যদি সেখানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা থাকে, তাহলে আমাদের উচিত হবে সেই দেশের রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলা ।

আবিসিনিয়ার মুসলিমদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় | আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আবিসিনিয়ার মুসলিমদের মডেল থেকে আমরা পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসকারী মুসলিমরা শিক্ষণীয় কিছু ধারণা পেতে পারি, যদিও আমরা জানি যে দুই প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। মডেলটি হলো: ‘আপনি সংখ্যালঘু হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম দেশে বাস করলে সেই দেশের আইন মেনে চলবেন। আপনাকে মেনে নিতে হবে যে আপনি সেই দেশের সরকারের অধীনে একজন নাগরিক। এবং আপনি সেই দেশের গঠনতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করা বা সরকারকে উৎখাত করার কোনো পরিকল্পনা করবেন না।”
আবিসিনিয়ার মুসলিমরা নাজাশিকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেননি, তাঁরা সেখানে নির্ঝঞ্ঝাটে বসবাস করতে ও নির্বিঘ্নে উপাসনা করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা সেখানকার সামাজিক কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছিলেন। অনেক উগ্রপন্থি মুসলিমের মতে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশে বাস করা হারাম। এর জবাবে বলা যায়, যে মুসলিমরা আবিসিনিয়ায় বাস করতেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর ইবাদত করা। তাঁরা সেখানে ১৪ বছর ধরে বসবাস করেছেন।

এমনকি হিজরতের সাত বছর পরেও মুসলিমরা আবিসিনিয়ায় ছিলেন। খায়বারের যুদ্ধের পরে (৭ম হিজরি সালে) নবিজি (সা) জাফর ইবনে আবি তালিবকে চিঠি পাঠিয়ে মদিনায় ফিরে আসতে বলেন। এখানে লক্ষণীয়, মদিনায় সম্পূর্ণরূপে কার্যকর ‘দারুল ইসলাম’ প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও আবিসিনিয়ায় মুসলিমদের একটি দল বসবাস করছিল।
আরও লক্ষণীয়, নবিজি (সা) আবসিনিয়ার নাজাশি (সম্রাট) আসহামা ইবনে আবজারকে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি তাঁর প্রজাদের ওপর সদয় ছিলেন, তাঁদের ধর্মচর্চায় কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। আমাদের মধ্যে কিছু সংকীর্ণ মানসিকতার মুসলিম আছেন যাঁরা মনে করেন ইসলামি রাষ্ট্রে অন্য সব ধর্ম নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা খ্রিষ্টানদের প্রশংসা করব ধর্মপালনের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য, কিন্তু আমাদের শরিয়তে সেই স্বাধীনতা দেব না-এটা কীভাবে সম্ভব? এটা তো স্ববিরোধিতার নামান্তর। ইসলামি সরকারের কোনো অধিকার নেই অন্য ধর্ম নিষিদ্ধ করার, কারণ আমাদের নবিজি (সা) ধর্মীয় স্বাধীনতা দানকারী সম্রাটকে ন্যায়পরায়ণ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাই বলা যায়, ব্যক্তির ধর্মপালনের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা ইসলামবিরোধী।
ঐতিহাসিকভাবে বলতে গেলে, মুসলিম ভূখণ্ডে সর্বদাই সংখ্যালঘু অমুসলিমদের বসবাস ছিল। এখনও মিশরের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ কপটিক খ্রিষ্টান। ধর্মীয় স্বাধীনতা শুধু কিতাবিদের জন্যই প্রযোজ্য কি না তা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। তবে সঠিক মত হলো, এটা যে কোনো ধর্মের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য । এটা ঠিক যে, নবিজি (সা) শুধু ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কথাই বলেছেন। কিন্তু মুসলিমরা যখন পারস্য জয় করেন, তখন সেখানকার বেশিরভাগ অধিবাসী ছিল জোরাস্ট্রিয়ান, যারা কিতাবি নয়। সেই সময় মুসলিম স্কলাররা সর্বসম্মতভাবে জোরাস্ট্রিয়ানদের ওপরও কিতাবিদের জন্য প্রযোজ্য ফতোয়াটি প্রয়োগ করেছিলেন। সুতরাং সঠিক মতটি হলো, এটা যে কোনো ধর্ম, এমনকি পৌত্তলিকতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আল-কাইয়িমও এই মত সমর্থন করেছেন।
আরো পড়ূনঃ