আবু লাহাব: অংশ নেবে কি নেবে না | বদরের যুদ্ধ ২, উটের কাফেলার বিপদের মুখে পড়া নিয়ে দামদামের বর্ণনা শুনে কুরাইশরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে কী করা উচিত তা নিয়ে আলোচনার জন্য তারা একটি সভা ডাকে। সভায় অনেক বিতর্কের পরে তারা প্রায় সর্বসম্মতক্রমে কাফেলাটি রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবেই মক্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে একত্রিত করা হয়। পুরো আয়োজন শেষ করে আক্ষরিকভাবে মাত্র একদিনের মধ্যেই তারা মক্কা ত্যাগ করে।
ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেছেন, মক্কার একটি পরিবারও বাকি ছিল না যে পরিবারের অন্তত একজনকেও পাঠানো হয়নি। আতিকা স্বপ্ন দেখেছিলেন যে মক্কার প্রতিটি পরিবারকে একটি পাথরখণ্ড এসে আঘাত করবে, এটি তার সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। যাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে লোক পাঠাতে পারেনি, তারা বাইরে থেকে অন্য কাউকে ভাড়া করে পাঠিয়েছে ।

আবু লাহাব: অংশ নেবে কি নেবে না | বদরের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আবু লাহাব: অংশ নেবে কি-নেবে না
এদিকে বনু হাশিমের নেতা আবু-লাহাব কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল । আল-আস ইবনে ওয়াইল নামের এক ব্যক্তির আবু-লাহাবের কাছে চার হাজার দিরহাম পরিমাণ অর্থ দেনা ছিল। আবু ‘লাহাব তাকে বলল, “আমার জায়গায় তুমি যাও। তোমার দেনা আমি মাফ করে দিচ্ছি, তোমাকে আর তা শোধ করতে হবে না।” দেনা পরিশোধের এই সহজ সুযোগ লোকটি হাতছাড়া করেনি।

আবু ‘লাহাব কেন যায়নি সে বিষয়ে সিরাহর বইগুলোতে কিছুর উল্লেখ নেই। হয়তো শত্রুর মুখোমুখি হলে মারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ যাওয়ার স্বাভাবিক ভয় এবং কিছুটা কাপুরুষতাও তার মধ্যে কাজ করেছিল। হয়তো দিনশেষে নিজের ভাতিজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়টি সে ব্যক্তিগতভাবে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। আল্লাহ ভাল জানেন ।
যদিও আবু-লাহাব প্রশংসার যোগ্য নয়, তবু মাঝে মাঝে আমরা তার মধ্যে মহত্ত্বের কিছু নমুনা দেখতে পাই। তবে সেই মহত্ত্ব তার নিজস্ব রীতি বা চর্চা অনুসারে, ইসলাম অনুসারে নয়। যেমন, নবি করিমের (সা) জন্মের পরে সে খুশি হয়ে একজন ক্রীতদাসকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া সে আবু তালিবের মৃত্যুর পরে নবিজিকে (সা) কিছু সময়ের জন্য সুরক্ষা দেওয়ার সময় বলেছিল, “যা-ই হোক, সে (মুহাম্মদ) আমার গোত্রের, আমার ভাতিজা: আমাকে অবশ্যই তাকে রক্ষা করতে হবে।”
এসব থেকে মনে হয়, তার মনের গভীরে এক ধরনের মহৎ অনুভূতি কাজ করেছিল যা তাকে নবিজির (সা) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত রেখেছিল ।
আরও পড়ুনঃ