আবু লাহাবের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৭, কুরাইশদের মধ্যে সর্বশেষ যে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিটি বেঁচে গিয়েছিল, সে ছিল আবু লাহাব। স্মরণ করুন, আবু লাহাব নিজে যুদ্ধে অংশ না নিয়ে তার জায়গায় অন্য একজনকে ভাড়া করে পাঠিয়েছিল। কারণ, সে এই যুদ্ধের ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছিল না, যেখানে নিজেরাই নিজেদের গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যা-ই হোক, আবু জেহেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আবু লাহাব প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। সে বলল, “আমি নিজেই আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করব। আমি এইসব পালিয়ে আসা লোকদের কথা বিশ্বাস করতে পারছি না!”
অবশেষে আবু সুফিয়ান ফিরে এলে তারা দুজন আব্বাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা করল। আব্বাস যদিও সেই সময় যুদ্ধবন্দি হিসেবে মদিনায় অবস্থান করছিল, তবে তাঁর স্ত্রী ও চাকর বাড়িতেই ছিল। আমরা জানি, আবু লাহাব ছিল আব্বাসের বড় ভাই। আবু সুফিয়ান সেখানে গেলে আবু লাহাব তাকে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে ঠিক করে বলো তো, কী হয়েছে।”

আবু লাহাবের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৭ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আবু সুফিয়ান বলল, “আল্লাহর কসম, আমরা মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলা করতে না করতেই মনে হলো যেন তারা আমাদের পরাজিত করে ফেলেছে, আমরা কিছু করার আগেই যেন তারা আমাদের ওপর চেপে বসেছে। তারা যেন ইচ্ছামতো হত্যা করছিল, ইচ্ছামতো বন্দি করে যাচ্ছিল। তারপরও আমি আমাদের বাহিনীকে দোষ দিতে পারব না। কারণ আমি একদল ফর্সা মুখাবয়বের লোককে দেখেছি যারা সাদাকালো রঙের ঘোড়ায় চড়ে আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে বিচরণ করছিল; তাদের পরাজিত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।” এ কথা শোনার পর আবু লাহাব হতাশায় ভেঙে পড়ে।

[আনুষঙ্গিক বিষয়: বদরের যুদ্ধের আগ পর্যন্ত আব্বাস আসলে একজন নামেমাত্র মুসলিম ছিলেন। যদিও যুদ্ধবন্দি অবস্থায় তিনি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি একজন মুসলিম, তবু নবিজি (সা) তাঁর গোপন অর্থ লুকানোর ব্যাপারটি প্রকাশ না করা পর্যন্ত ইসলামের প্রতি তাঁর পুরোপুরি ইমান আসেনি। তাঁর স্ত্রী উম্মে আল-ফাদল ও দাস আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। বলা হয়, তাঁর স্ত্রী ছিলেন খাদিজার (রা) পরে ইসলাম গ্রহণকারী দ্বিতীয় নারী। ধারণা করা হয়, আব্বাস হয়তো তার স্ত্রীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই নামেমাত্র মুসলিম হয়েছিলেন ।]
আৰু লাহাব ও আবু সুফিয়ান যখন কথা বলছিল তখন আব্বাসের দাস তাদের কথোপকথন শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে ওঠে, “যারা মুসলিমদের সাহায্য করেছে তারা আসলে ফেরেশতা ছিল!” দাসের মুখে এ কথা শুনে এবং কুরাইশদের পরাজয়ে তাকে আনন্দিত হতে দেখে আবু লাহাব নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। ক্রোধান্বিত হয়ে সে দাসটিকে মাটিতে চেপে ধরে তাকে মেরে ফেলার উপক্রম করে। দাসটির আত্মরক্ষার চেষ্টা করার কোনো উপায় ছিল না।
সে চেষ্টার পরিণতি আরও খারাপ হতো। এই অবস্থায় উম্মে আল-ফাদল ঘর থেকে বেরিয়ে দাসটিকে আবু লাহাবের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে আবু লাহাব উল্টো তাকেই আঘাত করে। আবু লাহাবের হিতাহিত জ্ঞান তখন পুরোপুরি লোপ পেয়েছে। এই পর্যায়ে উম্মে আল-ফাদল তাকে বলে, “তার মানে, সাইয়িদ (অর্থাৎ আব্বাস) না থাকলে আপনি তার পরিবারের সাথে এমন আচরণ করেন?!” অর্থাৎ, আপনি কেমন নেতা? ভাইয়ের স্ত্রীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবু লাহাব লজ্জা, অপমান ও অপরাধবোধে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।
এই ঘটনার পর আবু লাহাবের দেহে এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। সিরাহের বইগুলোতে বিভিন্ন রোগের কথা উল্লেখ আছে। কেউ কেউ বলেন, তার শরীরে এক ধরনের কীট বাসা বাঁধে। তারপর থেকে তাকে আর কখনও জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এর কিছুদিন পরেই সে মারা যায়। কুরাইশদের মধ্যে মন্দ ব্যক্তিদের শেষজন আবু লাহাবের পরিণতি আল্লাহ তায়ালা এভাবেই চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ