আবু লুবাবার তওবা | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আবু লুবাবার তওবা | বনু কুরায়জা উপজাতি, শাস ইবনে কায়েস (অথবা অন্য একজন দূত) আবার নবিজিকে (সা) অনুরোধ করে, “আবু লুবাবাকে আমাদের কাছে পাঠান। আমরা চাই, তিনি আমাদের দুর্গে আসুন ” নবিজির (সা) আদেশে আবু লুবাবা বনু কুরায়জার দুর্গের ভেতরে গেলেন। তিনি ছিলেন একজন আউস। জাহেলি যুগে আউসদের সঙ্গে বনু কুরায়জার মিত্রতা ছিল। বিশেষ করে আবু লুবাবা ছিলেন তাদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত সুহৃদ। তাই এখন তারা তাঁকে তাদের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজে লাগাতে চায় ।

আবু লুবাবার তওবা | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আবু লুবাবার তওবা | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এখানে উল্লেখ্য, আবু লুবাবা ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাহাবি। তিনি বদরের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। নবিজি (সা) তাঁকে বদরে অন্য একটি দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে তিনি যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু যেহেতু তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন, তাই বদরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাঁকে গণ্য করা হয়। তিনি ওহুদসহ অন্যান্য যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। তাই সাহাবি হিসেবে তাঁর মর্যাদা ছিল অনেক উঁচুতে।

ইবনে ইসহাক লিখেছেন, বনু কুরায়জার লোকেরা তাঁকে দেখে একদিকে খুব খুশি হয়, অন্যদিকে নারী ও শিশুরা কান্নাকাটি করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু  করে। এসব দেখে আবু লুবাবার মন নরম হয়ে যায়। তাই যখন তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি মনে হয় আমাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত?”, তখন তিনি বলেন, “হ্যাঁ, তোমাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত, কিন্তু…।” কথার শেষে ‘কিন্তু’ বলে তিনি তাঁর গলার ওপর নিজের হাত ঘুরিয়ে এমন একটি অঙ্গভঙ্গি করলেন যার অর্থ হলো, তোমরা সবাই মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছ।

আবু লুবাবা পরবর্তী সময়ে নিজের জবানিতে এই ঘটনা সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি এই কথা বলার পর যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখান থেকে নড়তে পারছিলাম না। আমার পা সেই জায়গায় আটকে গিয়েছিল। আমি তখনই বুঝতে পারছিলাম যে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা) সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলেছি।” কীভাবে?

প্রথমত, তাদের ভাগ্যে কী হবে তা নিশ্চিতভাবে না জেনেই তিনি কথাটি বলে ফেলেছেন।

দ্বিতীয়ত, যেখানে শত্রু মারাত্মক অপরাধ করেছে, সেখানে শত্রুর প্রতি সহানুভূতি দেখানোও এক ধরনের ভুল বলা যেতে পারে। তিনি আরও বর্ণনা করেছেন, বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুর্গ থেকে বেরিয়ে সবাইকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত মসজিদুন নববিতে চলে যান, সেখানে নিজেকে মসজিদের একটি অন্যের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। তারপর তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম, আল্লাহ আমার তওবা কবুল না করা পর্যন্ত আমি এই স্তম্ভের সাথেই বাঁধা অবস্থায় থাকব।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আর যেখানে (বনু কুরায়জার দুর্গে) আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে (সা) অমান্য করেছি, সেই স্থানে আমি কখনও যাব না।” এই খবর কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নবিজি (সা) শুনে বলেন, “সে যদি আমার কাছে আসত, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য ক্ষমা চাইতাম । কিন্তু যেহেতু সে নিজে নিজেই এই কাজ করেছে, আমি এখন আর কিছুই করতে পারব না।” কারণ, এটি ছিল একটি প্রতিজ্ঞা (‘মানত’), যা আৰু লুবাবা আল্লাহর কাছে করেছিলেন। তাই তিনি সেখানে সেভাবেই (বাঁধা অবস্থায়) পড়ে রইলেন।

তার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পরের ঘটনা। নবিজি (সা) ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপন মনে বেশ হাসছিলেন। উম্মে সালামা (রা) জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আপনার হাসির কারণ কী?”

নবিজি (সা): আল্লাহ আবু লুবাবার তওবা কবুল করেছেন। উম্মে সালামা: আমার কি এই খবরটি তাকে গিয়ে বলা উচিত নয়?

নবিজি (সা): হ্যাঁ, যদি তুমি চাও । উম্মে সালামার ঘর থেকে মসজিদে প্রবেশের জন্য সরাসরি একটি দরজা ছিল। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বললেন, “হে আবু লুবাবা, আনন্দ করো!

আল্লাহ তোমার তওবা কবুল করেছেন!” উল্লেখ্য, তখনও হিজাবের আয়াত নাজিল হয়নি। যে সাহাবিরা ফজরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাঁরা আবু লুবাবাকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তিনি বলেন, “না। যতক্ষণ না নবিজি (সা) আসেন এবং আমাকে খুলে না দেন ততক্ষণ আমি এভাবেই থাকব।” আসলে তিনি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন আল্লাহ তাঁর তওবা সত্যিই কবুল করেছেন কি না। কিছুক্ষণের মধ্যে নবিজি (সা) গিয়ে নিজহাতে তাঁর বাঁধন খুলে দেন।

 

আবু লুবাবার তওবা | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মসজিদের যে স্তম্ভটিতে আবু লুবাবা নিজেকে বেঁধে রেখেছিলেন, সেটিকে ‘আৰু লুবাবার স্তম্ভ’ বা ‘তওবার স্তম্ভ’ বলা হয়। স্তম্ভটি এখনও মসজিদুন নববিতে সংরক্ষিত আছে। বলা হয়, আবু লুবাবার (রা) কারণে পবিত্র কোরানের দুটি আয়াত নাজিল হয়েছিল। প্রথমটি সুরা আনফালের ২৭তম আয়াত: “হে মুমিনগণ, জেনেশুনে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করবে না।” [৮:২৭]

দ্বিতীয়টি সুরা তওবার ১০২তম আয়াত, যেখানে আৰু লুবাবার তওবার উল্লেখ আছে। “(তোমাদের মধ্যে) আরও কিছু লোক আছে, যারা (অকপটে) নিজেদের গুনাহসমূহের কথা স্মরণ করে, তারা তাদের নেক কাজকে গুনাহের কাজের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ হয়তো তাদের ক্ষমা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [৯:১০২]

ইবনে আব্বাস ব্যাখ্যা করেছেন, আল্লাহ তায়ালা যখন বলেন ‘সম্ভবত’ বা ‘হয়তো’, তখন তার অর্থ তিনি তা করবেন। হাসান আল বসরি বলতেন, “পুরো কোরানের মধ্যে এই আয়াতটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী করে তোলে।” আমরাও আমাদের কৃত পাপ স্বীকার করে তওবা করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment