আমর ইবনুল আসের দ্বিতীয় চেষ্টা | আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত), ফিরে গিয়ে আমর তার সহযোগীকে বলল, “চিন্তা করো না। আমার আরেকটা কৌশল আছে। আমরা আগামীকালই আবার নাজাশির কাছে ফিরে যাব।” তার সহযোগী বলল, “বাদ দাও, আমর। এরা তো আমাদেরই স্বজাতি ও স্বগোত্রীয় লোক; আত্মীয়স্বজনও বটে।” কিন্তু আমর এ কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতের ওপর অটল রইল। পরের দিন আবার নাজাশির দরবারে উপস্থিত হয়ে আমর বলল, “হে সম্রাট, আমরা আপনাকে একটি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, তারা আপনার ঈশ্বর যিশু সম্পর্কে মানহানিকর কথা বলেছে।”
এ কথা শোনার পর নাজাশি আবারও মুসলিমদের প্রাসাদে ডেকে পাঠালেন। এতে মুসলিমরা বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন এটা আমরের কাজ। জাফর সবাইকে আশ্বস্ত করার জন্য বললেন, “নবিজি (সা) আমাদেরকে যা বলতে বলেছেন, আমরা তা-ই বলব। যিত যে কুমারী মরিয়মের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী এবং আল্লাহর বান্দা ও রসুল, সে অবস্থান থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।”

আমর ইবনুল আসের দ্বিতীয় চেষ্টা | আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত) | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
[আনুষঙ্গিক দ্রষ্টব্য: আবিসিনিয়ার মুসলিমরা সেখানকার বিদ্যমান ব্যবস্থার। সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে তাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ ছিল না। তাঁরা নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীর নাজাশিকে ব্যবহার করেছেন। আমরাও এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আদালত, মিডিয়া, জনমত ইত্যাদি সব ধরনের মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা ইসলাম-বিদ্বেষীদের প্রতিহত করতে পারি। সবার জন্য যে সুযোগ রয়েছে, আমাদেরও তার সদ্ব্যবহার করতে হবে।
যা-ই হোক, জাফরের নেতৃত্বে মুসলিমরা আবার নাজাশির দরবারে গিয়ে হাজির হলেন। নাজাশি এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “আমি এ কী শুনছি, তোমরা নাকি যিশুখ্রিষ্ট সম্পর্কে মানহানিকর কথা বলেছ?” জাফর বললেন, “হে রাজকীয় মহিমা! আমরা তা-ই আপনাকে বলব, যা আমাদের নবি মুহাম্মদ (সা) আমাদের বলেছেন। যিশু ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও রসুল। তাঁর মা মরিয়ম ছিলেন একজন কুমারী ও আল্লাহর দৃষ্টিতে একজন উচ্চমর্যাদার নারী।”

লক্ষ করুন, জাফর ট্রিনিটি অধার্মিক ধারণা, ঈশ্বরের পুত্রের ধারণাটি অবমাননাকর ইত্যাদি কিছু বলেননি। যদিও কোরানে তাই বলা আছে। কিন্তু জাফর এ ক্ষেত্রে সত্য গোপন করেননি। মুসলিম হিসেবে আমরা কখনোই মিথ্যা বলতে পারি না। তাই বলে শুরুতেই আমাদের আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত নয়। জাফর বিচক্ষণতার সঙ্গে যথার্থ শব্দচয়নের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য নাজাশির সামনে উপস্থাপন করলেন ।
নাজাশি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “তার মানে তোমরা মনে কর না যে যিশুখ্রিষ্ট ঈশ্বরের পুত্র?” বোঝা যাচ্ছিল, নাজাশি আসলে ট্রিনিটিতে বিশ্বাসী ছিলেন না, তাই জাফরের কথা শুনে আরো মুগ্ধ হলেন, কারণ তিনি নিজেই তা বিশ্বাস করতেন না। যে যিশুখ্রিষ্ট ঈশ্বরের পুত্র। নাজাশি একটি ছোট্ট গাছের শাখা জাফরের সামনে তুলে ধরে বললেন, “আল্লাহর কসম, যিশুখ্রিষ্ট যা বলে গেছেন, তা থেকে তুমি এই ছোট্ট শাখাটির চেয়েও কিছু বাড়িয়ে বলনি।” অর্থাৎ, ‘তোমার বার্তাই যিশুখ্রিষ্টের বার্তা।
এ পর্যায়ে নাজাশি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। তিনি আমর ও তার সহযোগীর দিকে ফিরে বললেন, “তোমরা এখনই এখান থেকে চলে যাও। তোমাদের আনা সব উপহারও সঙ্গে নিয়ে যাও। ওগুলোর আমার কোনো দরকার নেই।” আগের দিন নাজাশি অন্তত উপহারগুলো গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু এবার সবই প্রত্যাখ্যান করলেন। উম্মে সালামা তাঁর বর্ণনা এভাবে শেষ করেছেন, “তারা দুজনেই অপমানিত ও হতাশাজনকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে দরবার থেকে বেরিয়ে গেল। অবশেষে আমরা নবিজির (সা) কাছে ফিরে না যাওয়া অবধি নাজাশির রাজত্বে তাঁর উত্তম আতিথেয়তায় সম্মানের সঙ্গে রয়ে গেলাম।
আরো পড়ূনঃ
- স্কলারদের যুক্তি-তর্ক | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় ফিরে আসা | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- উসমান ইবনে মাজউন | আবিসিনিয়ায়-দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত) | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবু সালামা | আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত) | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন