কাবা পুনর্নির্মাণ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় প্রতীকী বিষয়গুলো | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কাবা পুনর্নির্মাণ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় প্রতীকী বিষয়গুলো | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু, আমরা কাবাঘরের কাহিনি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই কাহিনিতে কিছু গভীর প্রতীকী বিষয় আছে। কাবার কাহিনির অংশ হিসেবে আমরা ‘কালো পাথরের বিষয়টি সম্পর্কেও উল্লেখ করেছি। পাথরটি পরবর্তীকালে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। আব্বাসীয়রা টুকরাগুলো গলিয়ে আবার একখণ্ড পাথরে পরিণত করে। অর্থাৎ এখন আমরা কাবায় যে পাথরটি দেখি, সেটি মূল পাথর নয়।

কাবা পুনর্নির্মাণ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় প্রতীকী বিষয়গুলো | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কাবা পুনর্নির্মাণ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় প্রতীকী বিষয়গুলো | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

১) আমরা দেখতে পাই, নবি করিমের (সা) আগমনের পূর্বে কাবা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং ঠিক তাঁর জন্মের সময়েই তা পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল। এখানে প্রতীকী বিষয় বা রূপকটি হলো, ইব্রাহিমের (আ) ধর্ম এক সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এবং মহানবি মুহাম্মদ (সা) সেটি পুনর্নির্মাণ করতে যাচ্ছিলেন। অতএব কাবাকে রূপকার্থে ইব্রাহিমের (আ) ধর্মের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ (প্রার্থনাগৃহ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা ছিল বাক্কায় (মক্কার অপর নাম), তা আশীর্বাদপ্রাপ্ত ও বিশ্বজগতের দিশারি।” [সুরা আল-ই-ইমরান, আল্লাহর ইবাদতের প্রতিনিধিত্বকারী ঘর ধ্বংস হওয়া আর মানবজাতির দ্বারা ইব্রাহিমের (আ) ধর্মকে সংরক্ষণ করতে না পারা প্রতীকীভাবে সমার্থক। আবার মুহাম্মদের (সা) সময়ে এই ঘরের পুনর্নির্মাণ ইব্রাহিমের (আ) ধর্ম পুনরায় স্থাপনের রূপক বা প্রতীক।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

২) ইব্রাহিমের (আ) প্রতিষ্ঠিত ধর্মতত্ত্বকে ভিত্তি করে কাবা নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন এর পুনর্নির্মাণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মদ (সা) একই ধর্মতত্ত্ব (অর্থাৎ একেশ্বরবাদ) প্রতিষ্ঠা করতে এসেছেন। এর অবকাঠামো ঠিকই থাকছে, শুধু উপরিকাঠামোটা নতুন করে তৈরি হবে।

৩) নবি করিম (সা) যেমন তাঁর সম্প্রদায়কে যুদ্ধ ও রক্তপাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, তেমনি শেষ নবি হিসেবে তিনি আবার তাদের স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত করবেন।

৪) নবিজি (সা) যেমনভাবে (সবাইকে নিয়ে কাপড় ধরে কালো পাথর’ স্থাপন করার মাধ্যমে) সব গোত্রকে একত্রিত করেছিলেন, তেমনিভাবে সবাইকে ইসলামের পতাকাতলে একত্রিত করবেন। সুতরাং ‘কালো পাথর’ স্থাপন করাটাও ছিল একটি প্রতীকী বিষয়।

৫) এ ছাড়া, নবিজি (সা) কাবাঘরে প্রবেশ করার সময় সব গোত্রের মানুষের খুশি হওয়ার ঘটনায় তাঁর উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরই স্বীকৃতি মেলে।

 

কাবা পুনর্নির্মাণ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় প্রতীকী বিষয়গুলো | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বর্ণিত আছে, আবু জেহেল যখন কাবার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন সে বলেছিল, “আমরা আল্লাহর ঘর পুনর্নির্মাণ করছি। অতএব ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনি এখানে যে অর্থ দান করছেন তা আপনার হালাল উপায়ে উপার্জন থেকে এসেছে। এর মধ্যে কোনো প্রতারণা, রিবা, জুয়া, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি থেকে আয় করা অর্থ নেই।” ভাবতে অবাক লাগে, আবু জেহেলের মতো নোংরা প্রবৃত্তির একজন মানুষও বুঝতে পেরেছিল যে, মন্দ উপায়ে উপার্জিত অর্থ আল্লাহর পথে ব্যয় করা যাবে না।

এ ছাড়া ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাহেলি আরবরা যে বর্গাকার আকৃতির কাবাঘরটি নির্মাণ করেছিল তার মধ্যেও হয়তো এক ধরনের ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে। আমরা জানি, কাবার অভ্যন্তরে প্রার্থনা করতে পারা অত্যন্ত বরকতময় একটি কাজ। যদি এটি আয়তাকার কাঠামোয় নির্মিত হতো, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কাবার অভ্যন্তরে প্রার্থনা করা অসম্ভব হয়ে যেত কিন্তু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এটি একটি বিশাল আশীর্বাদ যে, কাবাঘর এখনও বর্গাকারই রয়ে গেছে। এর ফলে সবাই কাবাতেই প্রার্থনা করতে পারে। কীভাবে? কাবার মূল কাঠামোর বেশ খানিকটা (হিজর ইসমাইল) এখন বাইরে এবং তা সবার প্রার্থনার জন্য উন্মুক্ত। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, এখানে এক বড়ো ধরনের প্রজ্ঞা আছে।

আরো পড়ূনঃ

Leave a Comment