আবু উবাইদা আমির ইবনুল জাররাহর পিতা | বদরের যুদ্ধ-৪, আবু উবায়দা আমির ইবনুল জাররাহ (রা) ছিলেন জান্নাতের প্রতিশ্রুতিপ্রাপ্ত দশজন সাহাবির মধ্যে একজন। তাঁর মুশরিক পিতা জাররাহ পুত্রের ইসলাম গ্রহণ মোটেই মেনে নিতে পারেনি। বদরের যুদ্ধে সে নিজের পুত্রকে হত্যা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, এমনই ছিল তার মুসলিম-বিদ্বেষ। যুদ্ধের ময়দানে জাররাহ যখনই তার পুত্র আবু উবায়দাকে দেখতে পাচ্ছিল, তখনই সে তাকে হত্যা করার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে উবায়দা তাঁর পিতাকে দেখতে পেলেই পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কারণে প্রতিবারই অন্য কোনো দিকে সরে যাচ্ছিলেন।

আবু উবাইদা আমির ইবনুল জাররাহর পিতা | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
কিন্তু এভাবে শেষ রক্ষা হয়নি। কোনো এক সুযোগে হঠাৎ জাররাহ তার পুত্রের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কোনো উপায়ান্তর না দেখে নিতান্তই আত্মরক্ষার জন্য আবু উবায়দা তাঁর নিজের পিতাকে হত্যা করতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে অনেকেই বলাবলি করত, উবায়দা নিজের পিতাকে হত্যা করেছে। এতে আবু উবায়দা মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেতেন। তিনি ভাবতেন, ‘এ আমি কী করেছি!’ পুত্রের হাতে পিতার নিহত হওয়া সব যুগেই মানবতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত বিষয়। আর জাহেলি যুগের গোষ্ঠীতান্ত্রিক সমাজে তো ব্যাপারটি আরও অনেক খারাপ চোখে দেখা হতো। আবু উবায়দার এমন মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে একটি আয়াত নাজিল করেন:

“তুমি এমন কোনো সম্প্রদায় পাবে না যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে অথচ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতাকারীদের ভালোবাসে; হোক না তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা বা জ্ঞাতি-গোত্র। আল্লাহ তাঁদের অন্তরে ইমান সুদৃঢ় করেছেন এবং নিজের রূহ দিয়ে তাঁদের শক্তিশালী করেছেন। (কেয়ামতের দিন) তিনি তাঁদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে; (সর্বোপরি) আল্লাহ তাদের ওপর প্রসন্ন হবেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হবে। এরাই আল্লাহর দল। আর হ্যাঁ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”
[সুরা মুজাদালা, ৫৮:22] এই আয়াতটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আবু উবায়দার প্রতি প্রশংসা ও সান্ত্বনার বাণী। আমাদের ধর্মের বিধান অনুসারে, একমাত্র আল্লাহর প্রতি আনুগত্যই চূড়ান্ত। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও প্রতি আনুগত্যই প্রশ্নাতীত নয় । এই বিষয়টি ইসলামি শরিয়ার অন্যতম মূল প্রতিপাদ্য।
আরও পড়ুনঃ