আৰু আইয়ুব আল-আনসারির বাড়িতে | মদিনা যুগের সূচনা, নবি করিমের (সা) নিজের ঘর ও মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ হতে প্রায় ছয় মাস লেগেছিল। এই সময়টা তিনি আৰু আইয়ুব আল-আনসারির বাড়িতে ছিলেন। আবু আইয়ুব ছিলেন সচ্ছলতার নিরিখে উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির। তাঁর বাড়িটি ছিল দোতলা, সেখানে নবিজি (সা) ও আবু বকরসহ (রা) আরো কয়েকজন সাহাবির থাকার ব্যবস্থা সহজেই হয়েছিল। আবু আইয়ুব ও তাঁর স্ত্রী দোতলায় উঠে যান, আর নবিজি (সা) ও আবু বকর (রা) থাকেন নিচের তলায়।

আৰু আইয়ুব আল-আনসারির বাড়িতে | মদিনা যুগের সূচনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন, এক রাতে আবু আইয়ুব ঘুমাচ্ছিলেন। একসময় ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরিতে গিয়ে ধাক্কা লেগে পানির জারটি মেঝেতে পড়ে যায়। পানি গড়িয়ে নিচের তালায় নেমে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় তিনি তৎক্ষণাৎ স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তারপর দুজন তাঁদের কম্বল দিয়ে পানি শুষিয়ে নিতে নিতে রাত পার করে দেন।
মুসনাদ ইমাম আহমদের অন্য বর্ণনায় উল্লেখ আছে, এক সন্ধ্যায় আবু আইয়ুব ও তাঁর স্ত্রী নিচতলার মেঝেতে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ তাঁদের মনে হলো যে, নবিজির (সা) মাথার ওপরে তাঁরা পা ফেলছেন (যেহেতু তারা দোতলায় ছিলেন)। এটা তাঁদের কাছে ভীষণ অনুচিত মনে হলো। তাই তাঁরা পা ওপরে তুলে সাৱা রাত বসে রইলেন। সকাল হলে তাঁরা নবিজিকে (সা) বললেন, “হে আল্লাহর রসুল! দয়া করে আপনি ওপরের তলায় থাকুন।” নবিজি (সা) উত্তরে বললেন, “নিচের তলায় থাকাই আমার জন্য সুবিধাজনক।” এর অর্থ, ‘তোমাদেরও প্রাইভেসির ব্যাপার আছে; আর আমার কাছে অনেক অতিথি আসে।

একথা শোনার পরও আবু আইয়ুব বললেন, “না, আল্লাহর রসুল, আমরা কখনোই আপনার ওপরে থাকতে পারব না। আমরা এমন কোথাও থাকতে পারব না যার নিচে আপনার মাথা থাকবে।” লক্ষ করুন, নবিজির (সা) প্রতি শ্রদ্ধার কারণে তাঁরা তাঁর কথা শুনলেন না।ফলে নবিজি (সা) ও আবু বকর (রা) দোতলায় উঠে গেলেন। পরের কয়েক সপ্তাহ তাঁরা দোতলাতেই ছিলেন। আরো বর্ণিত আছে, আবু আইয়ুব ও তাঁর স্ত্রী খাবার রান্না করে সব খাবার আগে নবিজির (সা) কাছে পাঠাতেন। নবিজির (সা) খাওয়া শেষ হলে যা অবশিষ্ট থাকত তা তাঁরা নিজেরা খেতেন। শুরুতেই আবু আইয়ুব জিজ্ঞেস করতেন, নবিজি (সা) কোন অংশ থেকে খেয়েছেন?”
নবিজি (সা) খাবারের বাটির যেখান থেকে খেয়েছেন, আবু আইয়ুব সেখান থেকেই খেতেন। একদিন খাবারের বাটি যেভাবে পাঠানো হয়েছিল তেমন অবস্থায় ফিরে এল। এতে আবু আইয়ুব চিন্তিত হয়ে ওপরের তলায় ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রসুল! আমি কী ভুল কিছু করেছি?”
নবিজি (সা): না। তবে খাবারে রসুন আছে।
আবু আইয়ূব: রসুন কি হারাম?
নবিজি (সা): না। তবে আমি যাদের সঙ্গে কথা বলি (অর্থাৎ ফেরেশতা), তুমি তো তাদের সঙ্গে কথা বল না।
[আনুষঙ্গিক বিষয়: আমাদের সময়ে বেশিরভাগ মানুষই ভুল করে মনে করে থাকে যে, রসুন খাওয়া ‘মাকরুহ’ (অর্থাৎ অপছন্দের, নিরুৎসাহিত করা হয়েছে)। আসলে এখানে কাঁচা (যা রান্না করা হয়নি এমন) রসুনকেই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ এতে কটু গন্ধ থাকে। রসুন রান্না করলে গন্ধ থাকে না, তাই তা খেতে সমস্যা নেই। এমনকি আপনি যদি কাঁচা রসুনও খান, তবুও তা হালাল। তবে নবিজি (সা) রসুন খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ মসজিদ এমন একটি স্থান যেখানে ফেরেশতারা আসেন। সুতরাং রসুনের কারণে যদি আপনার মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হয়, তাহলে সেই দুর্গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।]
আরও পড়ূনঃ