আল-ইয়ামানের (রা)-শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আল-ইয়ামানের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩, সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল হুদায়ফার (রা) পিতা হুসায়েল ইবনে জাবির ওরফে আল- ইয়ামানের (রা) মৃত্যু। হুসায়েল ছিলেন মদিনার বাইরের আবাস গোত্রের লোক। জাহেলি যুগে তিনি একজনকে খুন করার কারণে তাঁর লোকেরা তাঁকে সমাজচ্যুত করে। তখন তিনি  মদিনার এক গোত্রের সঙ্গে জোট গঠন করেন। ওই গোত্র পরবর্তী সময়ে হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে তিনি মদিনার আনসারদের মিত্র হয়ে যান। আনসারদের সঙ্গে জোট গঠন করার পর আবাস গোত্রের লোকেরা হুসায়েলকে ‘ইয়ামানি’ বলে ডাকা শুরু করে। উল্লেখ্য, মদিনার আরবরা মূলত ইয়েমেন থেকে আগত; তাই তার ডাকনাম রাখা হয়েছিল ‘আল-ইয়ামান’। পরে তিনি মদিনার এক নারীকে বিয়ে করেন।

আল-ইয়ামানের (রা)-শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আল-ইয়ামানের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

হুসায়েল ছিলেন মদিনায় ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম দিকের একজন। তাঁর পুত্র হুদায়ফাও হিজরতের আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হুদায়ফা সাহাবিদের মধ্যে গোপনীয়তার রক্ষক হিসেবে খ্যাত ছিলেন, তাঁর কাছে নবি করিম (সা) সব মুনাফেকের নাম বলে রেখেছিলেন। নবিজি (সা) মদিনায় হিজরত করার পর আল-ইয়ামান তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি আনসার না মুহাজির?” কারণ তিনি মক্কারও ছিলেন না, মদিনারও ছিলেন না ।

জবাবে নবিজি (সা) বলেছিলেন, “তুমি আনসার ও মুহাজির, উভয়ই।” আমরা ৩৬তম পর্বে বর্ণনা করেছি, বদরের যুদ্ধের আগের হুদায়ফা ও তাঁর পিতা আল-ইয়ামান মক্কার কুরাইশদের হাতে ধরা পড়ার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁরা তাদের (কুরাইশদের) বিরুদ্ধে লড়াই করবেন না। নবিজি (সা) সব শুনে বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করো। মদিনায় ফিরে যাও।” ওহুদের যুদ্ধের সময় আল-ইয়ামানের যথেষ্ট বয়স হয়েছিল। তিনি ছিলেন ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক দুজনের একজন। তাই নবিজি (সা) তাঁদের বলেন, “যাও, শহরে অবস্থান করো। আমাদের সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তাঁরা দুজন লড়াইয়ে অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি পেয়ে নিজ নিজ পরিবারের নারী ও শিশুদের সঙ্গে মদিনাতেই অবস্থান করছিলেন। এক সময় যুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা তাতে অংশগ্রহণের ইচ্ছায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন। আল- ইয়ামান বলেন, “আমাদের তো অনেক বয়স হয়েছে। আমাদের বেঁচে থাকার আর কতটুকুই বা সময় আছে?” অপর বৃদ্ধ সাহাবি সায় দিয়ে বলেন, “আপনি ঠিক বলেছেন। সম্ভবত আল্লাহ শাহাদাতের মাধ্যমে আমাদের জীবনের সমাপ্তি লিখে রেখেছেন।”

সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁরা মদিনা থেকে ওহুদ গিয়ে হাজির হলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সময়টা ছিল এমন, যখন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ আক্রমণ করে ফেলেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি চলছে। ওই অবস্থার মধ্যে একদল মুসলিম আল-ইয়ামানকে চিনতে না পেরে হত্যা করেন। হুদায়ফা দূর থেকে তাঁর পিতাকে চিনতে পেরে চিৎকার করে বলেন, “তিনি আমার বাবা! তিনি  আমার বাবা! থামুন!” কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে হুদায়ফার কথা কারও কানে পৌঁছে না।

 

আল-ইয়ামানের (রা) শাহাদাতবরণ | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ফলে, নিজ দলের লোকদের হাতে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আল-ইয়ামানের জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। যুদ্ধ শেষে সেই মুসলিমরা হুদায়ফার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি তাদের পবিত্র কোরানের আয়াত থেকে বলেন, “আল্লাহ আপনাদের ক্ষমা করুন। তিনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” [সুরা ইউসুফ, ১২:৯২)। নবিজি (সা) তাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার (‘বায়তুল মাল’) থেকে রক্তমূল্য হিসেবে ১০০টি উট প্রদান করেন। হুদায়ফা এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের পুরোটাই গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment