নবিজি (সা) খিরাশ ইবনে উমাইয়া আল-খুজাইকে পাঠালেন | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নবিজি (সা) খিরাশ ইবনে উমাইয়া আল-খুজাইকে পাঠালেন | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২, উরওয়া ফিরে যাওয়ার পর তার প্রস্তাব কুরাইশরা প্রত্যাখ্যান করলে সাকিফরাও পিছুটান দেয়। অর্থাৎ তারা কুরাইশদের সঙ্গে মিলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে আর অংশ নেবে না। এভাবে একটু একটু করে কুরাইশদের জোটবদ্ধ গোত্রগুলো সরে যেতে থাকে । এবার নবিজি (সা) তাঁর পক্ষ থেকে কাউকে কুরাইশদের কাছে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তিনি খুজা গোত্র থেকে খিরাশ ইবনে উমাইয়া নামের একজন সাহাবিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। খুজা গোত্র নিরপেক্ষ হওয়ার কারণেই তাদের একজনকে বেছে নেওয়া হলো ।

নবিজি (সা) খিরাশ ইবনে উমাইয়া আল-খুজাইকে পাঠালেন | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজি (সা) খিরাশ ইবনে উমাইয়া আল-খুজাইকে পাঠালেন | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজি (সা) যে যুদ্ধ চান না তা প্রমাণ করার জন্য খিরাশকে কুরাইশদের কাছে পাঠালেন নিজের একটি উটে করে, উটটির নাম ছিল আল-খালাব। তখনকার দিনে লোকেরা পরস্পরের ঘোড়া ও উটকে চিনতে পারত । তাই নবিজি চিনতে পেরেও ছিল। কিন্তু তারা উটটি দেখে শান্ত হওয়ার পরিবর্তে উত্তেজিত (সা) নিজের উটটিকে বেছে নেন যাতে কুরাইশরা চিনতে পারে। 

হয়ে চেঁচামেচি শুরু করে, একপর্যায়ে উটের হাঁটু থেকে একটি লিগামেন্ট কেটে ফেলে। তারা একপর্যায়ে খিরাশকে হত্যা করতে উদ্যত হলে মক্কার বাসিন্দা খুজা গোত্রের এক লোক এসে তাদের শান্ত করে। শেষে কুরাইশরা খিরাশের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই তাকে ফেরত পাঠায়। এই ঘটনা থেকে নবিজি (সা) বুঝতে পারেন যে কোনো নিরপেক্ষ গোত্রের লোককে দিয়ে কাজ হবে না ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কুরাইশরা আল-হুলায়েস ইবনে আলকামা আল-কিনানিকে পাঠাল

এবার কুরাইশদের পালা। উরওয়ার মতো এবারও যে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এল তার নাম আল-হুলায়েস ইবনে আলকামা আল-কিনানি। নামের শেষে আল-কিনানি থেকেই বোঝা যায়, তিনি ছিলেন কিনানা গোত্রের। নবিজি (সা) তাকে আসতে দেখে দূর থেকেই চিনতে পারলেন। তিনি সাহাবিদের বললেন, “এ হলো কিনানা গোত্রের আল-হুলায়েস ইবনে আলকামা । তাঁর গোত্রের লোকেরা মানুষকে সম্মান করে এবং কোরবানির প্রাণীকে পবিত্র মনে করে।” কিনানা গোত্র কোরবানির প্রাণী সাজানোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তিনি বললেন যে, তাঁকে যেন কোরবানির প্রাণীগুলো ভালোভাবে দেখানো হয় ।

আল-হুলায়েস যখন হেঁটে আসছিলেন, তখন সাহাবিরা কুরবানির জন্য সজ্জিত শত শত উট বাইরে বের করে রাখলেন। উল্লেখ্য, সাহাবিরা অনেক উট এনেছিলেন, ছিল বেশ কিছু ভেড়া এবং ছাগলও। সব প্রাণীই মালা, ফিতা, দড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো ছিল যা থেকে বোঝা যায় যে এগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির স্বার্থে মক্কার দরিদ্র জনগণের জন্য নিবেদিত।

আল-হুলায়েস দেখতে পেলেন, পুরো উপত্যকাটি মক্কার দরিদ্রদের জন্য নিয়ে যাওয়া উটে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তিনি সেখানে উপস্থিত মুসলিমদের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তালবিয়া পড়তেও দেখতে পেল । এই দৃশ্য দেখে তিনি মুসলিমদের শিবিরের দিকে আর না এগিয়ে সোজা কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “এই প্রাণীগুলোকে তাদের গন্তব্যে যেতে বাধা দেওয়া এবং হজযাত্রীদের আল্লাহর ঘরে যাওয়া থেকে বিরত রাখার অনুমতি আপনাদের নেই।”

আমরা দেখছি, নবিজির (সা) সঙ্গে একটি কথা না বলেও তিনি মত পরিবর্তন করে ফেলেছেন। এখানেও আমরা মহানবি মুহাম্মদের (সা) অপরিসীম প্রজ্ঞা এবং কূটনীতির প্রমাণ পাই। এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে তিনি আগে থেকেই আল- হুলায়েসের সম্ভাব্য দুর্বল জায়গাটি (কোরবানির প্রাণীকে গুরুত্ব দেওয়া) অনুধাবন করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছেন ।

 

নবিজি (সা) খিরাশ ইবনে উমাইয়া আল-খুজাইকে পাঠালেন | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এখানে আরেকটি বিষয়ও লক্ষ করার মতো: ওই কঠিন সফরের মধ্যে কেবল সাহাবিরা নয়, তাঁদের উটগুলোও ছিল ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। উটগুলো যদি সময়মতো কাবায় পৌঁছতে না পারে, তাহলে দরিদ্র মানুষরা কোরবানির মাংস খেতে পারবে না, তা নষ্ট হয়ে যাবে। আল-হুলায়েস দেখতে পাচ্ছিল, উটগুলো শুকিয়ে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। তাই কুরাইশদের বিরুদ্ধে তার প্রচণ্ড ক্ষোভের অনুভূতি তৈরি হয়েছিল।

কুরাইশরা যখন শুনল যে আল-হুলায়েস পক্ষ পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন, তখন তারা তাঁকে অপমান করার জন্য বলল, “তুমি তো একজন অজ্ঞ বেদুইন ছাড়া কিছু নও। তোমাকে পাঠানোই আমাদের ভুল ছিল।” এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আল-হুলায়েস আল্লাহর শপথ করে বললেন, কোনো আহাবিশ (মক্কার বাইরের গোত্র) আর কুরাইশদের সমর্থন করবে না। কুরাইশদের জন্য এ ছিল একটি বিশাল ক্ষতির বিষয়।

উল্লেখ্য, আল-হুলায়েস একজন বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। তাই তাঁকে ‘অজ্ঞ বেদুইন’ বলা কুরাইশদের দিক থেকে এক প্রকার জাতিগত বৈরিতার পরিচায়ক। দেখা যাচ্ছে, একটু একটু করে অন্য গোত্রগুলো কুরাইশদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বাকি থাকবে কেবল তারা নিজেরাই ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment