আল-ফারিতে মহিলা ও শিশু | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আল-ফারিতে মহিলা ও শিশু | খন্দকের যুদ্ধ-১, নবি করিম (সা) সাহাবিদের ডেকে বললেন, “আমাদের সব নারী ও শিশুকে একত্র করে বনু হারিসার দুর্গে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।” বনু হারিসা ছিল আনসারদের একটি গোত্র। তাদের নিজেদের দুর্গ ছিল। দুর্গটির নাম ছিল আল-ফারি। সেটি ইহুদিদের দুর্গের মতো উচ্চমানের ছিল না বটে, তবে আনসারদের মধ্যে সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় এবং সুরক্ষিত।

আল-ফারিতে মহিলা ও শিশু | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আল-ফারিতে মহিলা ও শিশু | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজি (সা) ইতিমধ্যে পরিকল্পনা করলেন, সব পুরুষ মদিনার সীমান্ত এলাকা পাহারা দিয়ে শহরকে সুরক্ষিত রাখবে। মদিনা শহরের অভ্যন্তরে আওলি নামের একটি এলাকায় তখনও ইহুদি উপজাতি বনু কুরায়জা বাস করত। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, বাকি দুটি ইহুদি উপজাতিকে (বনু কায়কা ও বনু নাদির) ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বনু কুরায়জা আল্লাহর নামে আলাদাভাবে তিনবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা চুক্তি ও সংবিধান মেনে চলবে: (১) নবিজির (সা) হিজরতের পরে; (২) বনু কায়নুকাকে বহিষ্কারের পরে; এবং (৩) বনু নাদিরকে বহিষ্কারের সময়।

মুসলিম-বিরোধী পক্ষগুলো সবাই জোটবদ্ধ হয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে যখন মদিনা আক্রমণের জন্য আসছে, তখন যদি বনু কুরায়জা মুসলিমদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাহলে মুসলিমদের জন্য বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হবে। নবিজি (সা) তাই পরিখা খননের নির্দেশ দিয়েই নারী ও শিশুদের বনু হারিসার দুর্গ আল-ফারিতে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে তাদের কেমন কেটেছিল সে সম্পর্কে আমাদের কাছে খুব বেশি তথ্য নেই। আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের সেখানে ছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৪-৫   বছর। উমর ইবনে আবি সালামাও (নবিজির (সা) স্ত্রী উম্মে সালামার প্রথম পক্ষের সন্তান) আল-ফারিতে ছিলেন।

সেই সময় হাসান ইবনে সাবিতকে কেন্দ্র করে একটি বিব্রতকর ঘটনা ঘটে। যদিও ঘটনাটি ছিল আরও এক সপ্তাহ বা তারও কিছু পরের, তবু আল-ফারি দুর্গের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে এখানে তা নিয়ে আলোচনা করব। নারী ও শিশুদের ছাড়াও এক বা দুজন ৭০-৮০ বছরের অন্ধ বৃদ্ধকেও ওই দুর্গে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে ষাটের মাঝামাঝি বয়সের একজন মাত্র পুরুষ লোককে পাঠানো হয়েছিল; তিনি ছিলেন হাসান ইবনে সাবিত।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের পরবর্তী সময়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করেন, যা মুসনাদ ইমাম আহমাদে লিপিবদ্ধ আছে: “হাসানকে নারী ও শিশুদের সঙ্গে একই দুর্গে রাখা হয়েছিল, কারণ তিনি ছিলেন ভীতু প্রকৃতির মানুষ।” জানা যায়, তিনি তলোয়ার ধরতেই ভয় পেতেন, ভয়ে কাঁপতেন। আল্লাহ মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যেমন, যাঁরা শিল্পসাহিত্যের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের সাধারণত শৌর্যবীর্যের খ্যাতি থাকে না। হাসান কবি ছিলেন, তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন তাঁর কবিতার জন্য। তাঁর তলোয়ার চালাতে না পারার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না।

সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কুরাইশ ও গাতাফানরা মদিনা শহরের প্রান্তসীমায় এসে হাজির হলো। আর মুসলিমদের দুর্বল অবস্থায় পেয়ে বনু কুরায়জা প্রতিশ্রুতি ভেঙে ডিগবাজি দিল। তারা প্রথমে আল-ফারি দুর্গের সব নারী ও শিশুকে হত্যা করার পরিকল্পনা করল। দুর্গটি কেমন সুরক্ষিত, তা দেখে আসার জন্য তারা (বনু কুরায়জা) রাতের বেলা দুজন স্কাউটকে পাঠায়।

 

আল-ফারিতে মহিলা ও শিশু | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

মাঝরাতে সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিবের ঘুম ভেঙে গেল। তিনি দুর্গের গা বেয়ে কারও উঠে আসার শব্দ শুনতে পেলেন। আসলেই বনু কুরায়জার দুই স্কাউট উঠে আসছিল। সাফিয়া তাড়াতাড়ি হাসানকে ডেকে তুলে বললেন, “বাইরে যাও, কিছু একটা করো।” উত্তরে হাসান বললেন, “হে আল্লাহর রসুলের ফুপু, আল্লাহ আপনাকে বরকত দিন এবং পুরস্কৃত করুন। আমাকে আর অপমান করবেন না। আপনি তো জানেন, আমি এসব পারি না।”

উপায়ান্তর না দেখে সাফিয়া নিজেই একটি পুরুষের শাল গায়ে জড়িয়ে একটি চাকু কামড় দিয়ে ধরে জানালা গলে বেরিয়ে পড়েন; অন্ধকারে তাদের খোঁজার চেষ্টা করেন। একজনকে দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ আক্রমণ করেন; তার গলা কেটে মাথাটি আলাদা করে দ্বিতীয় স্কাউটটির দিকে ছুঁড়ে দেন। সঙ্গীর কাটা মুণ্ডু দেখে দ্বিতীয় স্কাউটটি দৌড়ে পালিয়ে যায়; বনু কুরায়জা বুঝতে পারে আল- ফারি দুর্গ ভালোভাবেই সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। সাফিয়া মৃত লোকটির অস্ত্রগুলো হাসানকে নিতে বলেন। কিন্তু উত্তরে হাসান বলেন, “আমার এসবের কোনো দরকার নেই।”

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment