আবদুল্লাহ ইবনে উনায়েসের অভিযান | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা, এই পর্বে আমরা আলোচনা করব দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যেখানে বেশ বড় সংখ্যক সাহাবি নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছিলেন। আল-রাজি ও বির মাউনা নামের দুটি কূপের কাছে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছিল ।
আবদুল্লাহ ইবনে উনায়েসের অভিযান | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আরবের বেদুইনরা এদিক-ওদিক অভিযান চালিয়ে লুট, চুরি ইত্যাদির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। ওহুদের যুদ্ধের পর মদিনার আশেপাশের কয়েকটি বেদুইন উপজাতি ভেবেছিল তারা এখন খুব সহজেই মদিনা আক্রমণ করতে পারবে। এ ছাড়া ধর্মীয় বিদ্বেষ, ওহুদের যার কিছুটা নমুনা দেখা গিয়েছিল, তা ক্রমে আরও বেড়ে যায়। আগে যা ছিল মুসলিম ও কুরাইশদের মধ্যে সংঘাত, তা ধীরে ধীরে ইসলাম ও শিরকের মধ্যে সর্বাত্মক সংঘাতের রূপ নিতে থাকে। ওহুদের পর বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সংঘর্ষ হয়। সেগুলোর একটি ছিল, নবিজি (সা) ১৫০ জন মুসলিমের একটি দলকে পাঠিয়েছিলেন বনু আসাদ নামের একটি ছোট গোত্রকে বশীভূত করার জন্য। এই গোত্রের নেতা ছিল তুলায়হা আল-আসাদি (সে নবিজির (সা) মৃত্যুর পর নিজেকে নবি বলে প্রচার করেছিল)।

আবদুল্লাহ ইবনে উনায়েসের অভিযান
নবিজি (সা) জানতে পারেন, হুদায়েল নামের মদিনার উত্তরের এক বড় বেদুইন গোত্র অতর্কিতে মদিনা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে; তাদের নেতা খালিদ ইবনে সুফিয়ান আল হুদায়েলি ইতিমধ্যে একটি বাহিনী সংগঠিত করাও শুরু করে দিয়েছে। তখন নবিজি (সা) সিদ্ধান্ত নিলেন, খালিদ আক্রমণ চালানোর আগেই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উনায়েস আল- জুহানিকে এই দায়িত্ব দিলেন। তিনি আবদুল্লাহকে বললেন, “তুমি আরানা উপত্যকায় গেলে তাকে দেখতে পাবে।”
আবদুল্লাহ: সে দেখতে কেমন?
নবিজি (সা): তুমি যখন তাকে দেখবে তখন তোমার মধ্যে এত বেশি আতঙ্ক জাগবে যা আগে কাউকে দেখে হয়নি। নবিজি (সা) কিন্তু খালিদ ইবনে সুফিয়ানকে আগে কখনও দেখেননি অবশ্যই আল্লাহ তাকে তার সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।
আবদুল্লাহ নিজের তলোয়ার নিয়ে আরানা উপত্যকার দিকে রওনা হলেন। তিনি পরে বর্ণনা করেছেন, “আমি যখন তাকে দূর থেকে দেখলাম, তখন মনে হলো আমি এতটা আতঙ্কিত এর আগে কখনও হইনি। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসুল সত্য বলেছেন।”
তখন জোহরের সময় হয়ে গেছে। কাজ শেষ করতে করতে নামাজের সময় পেরিয়ে যেতে পারে, এই ভেবে আবদুল্লাহ হাঁটতে হাঁটতে ইশারার মাধ্যমে তাঁর নামাজ শেষ করলেন। উল্লেখ্য, তখনও ‘সালাতুল খাওফ’-এর বিধান আসেনি। তিনি খালিদ ইবনে সুফিয়ানের কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, সে মদিনা আক্রমণ করার জন্য কোনো বাহিনী গঠন করছে কি না। খালিদের সম্মতিসূচক জবাবের পর তিনি অনুরোধ করলেন, “আমাকেও আপনার বাহিনীতে যোগ দিতে দিন।” এটি ছিল একটি কৌশল। যা-ই হোক, বাহিনীতে যোগ দিয়ে কোনো এক সুবিধাজনক সময়ে তিনি তাকে হত্যা করেন।
আরও পড়ুনঃ