ইসলাম-বিদ্বেষীদের অভিযোগের বিষয়ে আমাদের অবস্থান | বনু কুরায়জা উপজাতি, বনু কুরায়জাকে দেওয়া শাস্তি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। এটা ব্যবহার করে ইসলামোফোবরা নবিজির (সা) ওপর কলঙ্কলেপনের চেষ্টা করে। রাজনৈতিকভাবে তাঁর বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রথমেই তারা যে অভিযোগটি আনে তা হলো, “তিনি একটি গোটা গোত্রকে হত্যা করেছিলেন’। তারপরে তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা, ইহুদি-বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের অভিযোগ আনা হয়। এগুলো গুরুতর অভিযোগ। সুতরাং এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের খোলামেলাভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন।
ইসলাম-বিদ্বেষীদের অভিযোগের বিষয়ে আমাদের অবস্থান | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আমাদের সময়ে বেশিরভাগ মুসলিমই সিরাহের এই বিষয়গুলো এলে এড়িয়ে যায়; এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করে না। কিন্তু আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে আমাদের বারবার সিরাহের এইসব অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিবরণের মুখোমুখি হতে হয়। তাই একজন ইসলাম-বিদ্বেষীর কথা শোনার চেয়ে ভালো হবে যদি আপনি কোনো অভিজ্ঞ মুসলিম পণ্ডিতের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে নেন।
সন্দেহ নেই যে এই ঘটনার বিবরণে এমন কিছু আছে যা সমস্যাপূর্ণ। কিন্তু আমরা যদি ঘটনার প্রসঙ্গটি বুঝতে চেষ্টা করি তাহলে দেখতে পাব, বনু কুরায়জার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার কারণে। এই কারণ এতটাই যৌক্তিক যে এর জন্য আমাদের কুণ্ঠিত হওয়া বা কোনো কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই । আমাদের সময়ে এমন অনেক মুসলিম আছেন যাঁরা এই ঘটনা নিয়ে এত বিব্রত হন যে ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্বীকার করতে চান না। তবে ঘটনাটি সহিহ হাদিসের গ্রন্থগুলো ছাড়াও সব সিরাহের বইতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাই এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

সাদ ইবনে মুআদ সম্পর্কে
১. ইবনে ইসহাক, ইবনে সাদ ও অন্যান্য সিরাহ লেখকের বর্ণনা অনুসারে, সাদ ইবনে মুআদ ছিলেন লম্বা, শুশ্রুমণ্ডিত, ফর্সা সুদর্শন ব্যক্তি। তিনি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেন।
২. সাদ হলেন পুরো সিরাহে একমাত্র ব্যক্তি, নবিজি (সা) যাঁকে সম্মান জানানোর জন্য অন্যদের উঠে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৩. আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছিলেন।
৪. সাহাবিরা তার মৃতদেহ জানাজার জন্য বহন করার সময় মন্তব্য করেছিলেন, “আমরা কখনও তাঁর চেয়ে হালকা কাউকে বহন করিনি।” শুনে নবিজি (সা) বলেছিলেন, “তা (হালকা) হবে না-ই বা কেন? নিশ্চয়ই ৭০ হাজার ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন। তাঁরা আগে কখনও এভাবে পৃথিবীতে নেমে আসেননি। তাঁরা তাঁর দেহটি তোমাদের সঙ্গে বহন করেছেন।”
৫. সাদকে দাফন করার সময় নবিজি (সা) তাঁকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, “আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিক। তুমি আল্লাহর প্রতি তোমার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছ। এখন আল্লাহ তোমাকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন।”
৬. তাঁকে কবরে নামানোর সময় নবিজির (সা) চেহারা বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল। তিনি বলছিলেন, “সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ…।” জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে উপস্থিত সব সাহাবি নবিজির (সা) সঙ্গে একই জিকির উচ্চারণ করেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বলে ওঠেন, “আল্লাহু আকবার।” সাহাবিরা যখন জিকিরের এই পরিবর্তন নিয়ে বলাবলি করছিলেন, ঠিক তখনই নবিজি (সা) উপস্থিত সবাইকে সেই সুন্দর হাদিসটি বলেন।
তিনি বলেন, “এই সেই নেক বান্দা যার জন্য আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল, আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল এবং ৭০ হাজার ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন, যাঁরা আগে কখনও এখানে আসেননি। কবরের চাপ থেকে যদি কাউকে অব্যহতি দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সে সাদ ইবনে মুআদ ।”
আরও পড়ুনঃ