নবিজি (সা) ও ইহুদিদের মধ্যে উত্তেজনা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ, মদিনায় হিজরতের পরের বছর থেকেই নবিজির (সা) ও ইহুদিদের মধ্যে এক উত্তেজনা শুরু হয়। প্রথমদিকে নবিজি (সা) ইহুদিদের মধ্যে বসবাসের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ছিলেন। এর কারণ, তিনি এমন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলেন যারা ইব্রাহিমের (আ) প্রবর্তিত ধর্মে বিশ্বাস করত এবং যারা একই ঈশ্বর ও নবিগণের ওপর ইমান এনেছে। ইতিমধ্যে তাদের প্রধান রাবাই আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

নবিজি (সা) ও ইহুদিদের মধ্যে উত্তেজনা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইহুদিরা একজন নবির আগমনেরও অপেক্ষায় ছিল। তারা নিশ্চিতভাবেই জানত যে, মুহাম্মদই (সা) সেই নবি, যার জন্য তারা অপেক্ষা করছে, যেমনটি আল্লাহ কোরানে বলেছেন, “আমি যাদের কিতাব দিয়েছি তারা তাঁকে (মুহাম্মদকে) তেমনি চেনে যেমন তারা চেনে নিজেদের সন্তানদেরকে; তবুও তাদের একদল জেনেশুনে সত্য গোপন করে থাকে।” [সুরা বাকারা, ২:১৪৬] আয়েশার (রা) বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) মদিনায় আসার পর অনেক ক্ষেত্রে ইহুদিদের মতো আচার-আচরণ শুরু করেন।

এর মাধ্যমে তিনি ইহুদিদের যথাসম্ভব বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তাদের সঙ্গে মুসলিমদের অনেক মিল রয়েছে, যাতে তারা (ইহুদিরা) স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা বাড়লে নবিজি (সা) মুসলিমদের ইহুদিদের থেকে আলাদা থাকার ও দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
একপর্যায়ে এটি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ইহুদিরা মুহাম্মদকে (সা) নবি হিসেবে গ্রহণ করবে না বলে মনিস্থর করে ফেলেছে। তাদের ঔদ্ধত্যই এর মূল কারণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবিজি (সা) তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করেন। তিনি ইহুদিদের আচরণে এতটাই বিরূপ হন যে, এমনকি তারা যেদিকে মাথার চুলের সিঁথি করত, তিনি মুসলিমদের তার উল্টোদিকে সিঁথি করতে বলেন। ইহুদিরা তাদের নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব চলার সময়ে স্পর্শ করে না।
তাই তাদের চেয়ে আলাদা হওয়ার জন্য নবিজি (সা) মুসলিমদের বলেন, “(নারীদের মাসিকের সময়) তোমরা নারীদের সঙ্গে আহার করো, উঠাবসা করো, শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়া ছাড়া আর সবকিছু করো।” শেষ পর্যন্ত কেবলা পৃথক হওয়ার ব্যাপারটিই ইহুদিদের সঙ্গে মূল পার্থক্য হিসেবে চলে আসে। নবিজি (সা) ও ইহুদিদের মধ্যে উত্তেজনা সম্পর্কে আমরা ভবিষ্যতের পর্বগুলোতে দীর্ঘ ও বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরও পড়ুনঃ