নবিজির (সা) হাতে নিহত হওয়া একমাত্র মুশরিক: উবাই ইবনে খালাফ | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নবিজির (সা) হাতে নিহত হওয়া একমাত্র মুশরিক: উবাই ইবনে খালাফ | ওহুদের যুদ্ধ-৪, সম্ভবত সাহাবিরা পাহাড়ে উঠে আসার কিছু আগে আরও একটি ঘটনা ঘটে। উবাই ইবনে খালাফ ছিল একজন নোংরা প্রকৃতির মুশরিক। অশ্লীল গালিগালাজ ছাড়াও তার খারাপ কাজের তালিকা ছিল অনেক দীর্ঘ। সেই কারণেই হয়তো আল্লাহ তাকে চরমভাবে অপমানিত করেছেন। সে-ই ছিল একমাত্র মুশরিক যাকে নবিজি (সা) নিজ হাতে হত্যা করেন।

নবিজির (সা) হাতে নিহত হওয়া একমাত্র মুশরিক: উবাই ইবনে খালাফ | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজির (সা) হাতে নিহত হওয়া একমাত্র মুশরিক: উবাই ইবনে খালাফ | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সেই ঘটনার পটভূমি বুঝতে আমাদের একটু অতীতে ফিরে যেতে হবে। বর্ণিত আছে, মক্কার দিনগুলোতে উবাই ইবনে খালাফ নবিজিকে (সা) নিয়ে অনেক ব্যঙ্গবিদ্রুপ করত। এমনকি সে একদিন নবিজিকে (সা) এমন কথা পর্যন্ত বলে: “আমার একটা বিশেষ প্রজাতির ঘোড়া আছে। আমি সেটাকে ভালো ভালো শস্য খাওয়াচ্ছি যেন সে তাগড়া হয়ে, যেন এই ঘোড়ার পিঠে চড়েই আমি তোমাকে হত্যা করতে পারি।”

নবিজি (সা) সাধারণত এ ধরনের কটূ কথার জবাব দিতেন না, তবে সেদিন তিনি বলেন ফেলেন, “না, আসলে আমিই তোমাকে হত্যা করব, ইনশাআল্লাহ।” উবাই নিজের সেই ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েই ওহুদের যুদ্ধে যোগ দেয়। সে নবিজিকে (সা) দূর থেকে দেখতে পেয়ে তার ঘোড়ায় চড়ে তাঁর দিকে অগ্রসর হয়। আমরা জানি, যুদ্ধের সময় ঘোড়ার পিঠে থাকলে আলাদা কিছু সুবিধা পাওয়া যায়; যেমন ছুটন্ত ঘোড়ার গতির কারণে তলোয়ারের আঘাতের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়; ঘোড়ার পিঠ থেকে নিচের পদাতিক যোদ্ধাকে আঘাত করা যত সহজ, পদাতিক যোদ্ধার পক্ষে অশ্বারোহীকে আঘাত করা তত সহজ নয়, তা ছাড়া পদাতিক যোদ্ধা অশ্বারোহীর মাথার নাগাল পায় না।

উবাইকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে নবিজির (সা) দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সাহাবিরা নবিজিকে (সা) সুরক্ষা দিতে চারদিক থেকে তাঁকে ঘিরে মানবব্যূহ রচনা করলেন। কিন্তু নবিজি (সা) তাঁদের বললেন, “না, সে আমার।” অর্থাৎ তোমাদের কিছু করতে হবে না, আমিই তার ব্যবস্থা করব। তারপর তিনি সাহাবিদের কাছ থেকে একটি বর্শা হাতে নিলেন। উবাই তার ঘোড়া নিয়ে খুব  কাছাকাছি এলে তিনি কায়দা করে বর্ণাটি সরাসরি ছুড়ে মারেন। বর্ণাটি উবাইয়ের বর্ম পুরোপুরিভাবে ভেদ করতে না পারলেও তার ঘাড়ের ভেতরে খানিকটা ঢুকে যায়।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উবাই সেখান থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়ে “মুহাম্মদ আমাকে মেরে ফেলেছে।” বলে চিৎকার করতে করতে খালিদের বাহিনীর কাছে ফিরে যায়। তারা বর্ণাটি টেনে বের করে বলে, “চিন্তা করো না, এই জখম সেরে যাবে।” কিন্তু উবাইয়ের মনে তখন ভয় ঢুকে গেছে। সে বলে, “এটা কোনো সামান্য ক্ষত নয়, এ থেকে আমি মরে যাব। আল্লাহর কসম, সে (মুহাম্মদ) আমার মুখের ওপর থুতু ফেললেও আমি মরে যেতাম!” উৰাই ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, নবিজির (সা) উচ্চারিত সেই প্রতিশ্রুতি (না, আসলে আমিই তোমাকে হত্যা করব, ইনশাআল্লাহ!) পূরণ হতে চলেছে। যুদ্ধের পর মক্কায় ফেরার পথে সারিফ উপত্যকায় উবাই ইবনে খালাফ মারা যায়। তার কোনো আশ্রয় মেলেনি। তাকে অচেনা কোনো এক ভূমিতে কবর দিয়ে কুরাইশরা মক্কায় ফিরে যায় ।

সিরাহের বইগুলোতে উল্লেখ আছে, অনেক বছর পরে ইবনে উমর (রা) এক রাতের বেলা এই উপত্যকার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি সেখানে এক অস্বাভাবিক আগুনের ফুলকি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যান; তারপর সে আগুনের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখেন, উবাই ইবনে খালাফের চেহারার মতো কিছু একটা সেই আগুন থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করছে, “পিপাসা। পিপাসা।” সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পেছন থেকে একজন ফেরেশতা বলে ওঠেন, “তাকে কিছু দিও না । এই সেই ব্যক্তি যাকে নবিজি (সা) হত্যা করেছেন।”

নবিজির (সা) ক্ষতগুলো কতটা গুরুতর ছিল?

 

নবিজির (সা) হাতে নিহত হওয়া একমাত্র মুশরিক: উবাই ইবনে খালাফ | ওহুদের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে, নবিজি (সা) বাড়ি ফিরে এলে ফাতেমা (রা) তাঁর রক্তাক্ত মুখমণ্ডলের ক্ষতগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। আলি (রা) সেখানে ক্রমাগতভাবে পানি ঢেলে যাচ্ছিলেন, কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। অবশেষে ফাতেমা কিছু খেজুর পাতা থেকে একটি মণ্ড তৈরি করেন এবং তা ক্ষতগুলোত উপর লেপে দেন। তারপর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment