উমর রা ও আবু বকরের সা মধ্যে কথা চালাচালি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫, নবিজির (সা) কাছ থেকে আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে উমর (রা) আবু বকরের (রা) কাছে গেলেন। [এ থেকে আমরা ইসলামে আবু বকরের (রা) উচ্চতর মর্যাদার পরিচয় পাই। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকরই প্রথম, এমনকি উমরও তা জানতেন ।] তিনি আবু বকরকে ঠিক সেই তিনটি প্রশ্নই জিজ্ঞেস করলেন যা তিনি নবিজিকে (সা) করেছিলেন।
প্রশ্ন শুনে আবু বকর কিছুটা রাগান্বিত হয়ে উত্তর দিলেন, “ইয়া রাজুল (এটা একটু কড়া ভাষায় কাউকে সম্বোধন করা), ভুলে যেও না, তিনি আল্লাহর রসুল, তিনি তাঁর প্রতিপালকের অবাধ্য হবেন না।” আমরা আবু বকরকে (আ) অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও কোমল মনের মানুষ হিসেবে জানি। কিন্তু কেউ তাঁকে উসকে দিলে তাঁর স্বভাবের বিপরীত দিকটি বেরিয়ে আসে।
উমর রা ও আবু বকরের সা মধ্যে কথা চালাচালি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আমরা দেখতে পাচ্ছি, আবু বকর (রা) পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। নবিজি (সা) যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা মেনে নিতে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। সন্দেহ নেই, তিনিও কুরাইশদের ওপর রেগে আছেন এবং কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর জ্ঞানের ওপর তিনি পুরোপুরি আস্থাশীল। তারপর তিনি উমরকে (রা) ঠিক একই কথা বললেন যা নবিজিও (সা) বলেছিলেন, “হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তিনি বলেছিলেন আমরা তাওয়াফ করব। কিন্তু তিনি কি বলেছিলেন যে আমরা এ বছরই তা করব? তিনি তো তা বলেননি। অতএব আমরা আবার ফিরে আসব এবং পরের বছর তাওয়াফ করব।” লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, নবিজি (সা) আবু বকরকে (রা) এ সম্পর্কে কিছুই বলেননি, কিন্তু আবু বকর (রা) একই উত্তর দিলেন।
উমর (রা) ও আবু বকরের (রা) মধ্যে এই কথা চালাচালি নিয়ে উমর পরবর্তী সময়ে অনেক অনুতাপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “তারপর থেকে আমি এই আশায় আরও বেশি বেশি সৎকাজ করতে থাকলাম, যাতে সেদিন আমি যা করেছি তার জন্য আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন।” জানা যায়, তিনি প্রায়শ্চিত্তের অংশ হিসেবে অনেক ক্রীতদাসকে মুক্ত করেন, অনেকদিন ধরে রোজা রাখেন, অনেক রাত বিনিদ্র থেকে নামাজ পড়েন। অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে হুদায়বিয়ার দিনে তিনি সীমা অতিক্রম করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর খেলাফতের সময় মন্তব্য করেছিলেন, “হুদায়বিয়ার দিন নবিজি (সা) আমাদের ওপর একটি শর্ত চাপিয়েছিলেন। তিনি না হয়ে অন্য কোন নেতা হলে আমি কখনই তা মেনে নিতাম না।”

কোরান ও সুন্নাহকে দোষারোপ করার আগে নিজের মতামতকে দোষারোপ করো আমাদের মনে রাখতে হবে, কথাগুলো উমর (রা) বললেও তিনি একা ছিলেন না । একমাত্র তিনিই সরাসরি নবিজির (সা) কাছে গেলেও অন্য সাহাবিদের মধ্যেও এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ছিল। অনেক বছর পর সিফফিনের যুদ্ধের সময় (৩৭ হিজরিতে) যখন মুসলিমদের এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সারিবদ্ধ হয়েছিল, তখন সাহাবি সাহল ইবনে হানিফ সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি তাঁদের বলেন, “কোরান ও সুন্নাহকে দোষারোপ করার আগে নিজের মতামতকে দোষারোপ কোরো। সত্যিই, আবু জান্দালের দিনে আমি যদি নবিজির (সা) আদেশ প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম, তাহলে তা করতাম।”
তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, কোরান ও সুন্নাহ অনুসরণ করো, এমনকি তা বুঝতে না পারলেও। রক্তপাত এড়িয়ে চলো এবং শুধু আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করো। লক্ষ করুন, সাহল ইবনে হানিফ দিনটিকে হুদায়বিয়ার দিন না বলে ‘আবু জান্দালের দিন’ বলেছেন। কল্পনা করুন, সেদিন আবু জান্দালের পরিণতি তাঁকে কতটা মানসিক আঘাত ও যন্ত্রণা দিয়েছিল । সাহাবিরা সেদিন আবু জান্দালকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করে মারা যাওয়াকেই শ্রেয়তর বলে মনে করেছিলেন । যদিও সাহলের আবেগতাড়িত মন সেদিন নবিজির (সা) অবাধ্য হতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ এবং তাঁর রসুলই ভালো জানেন ।
আরও পড়ুনঃ