উমাইয়া ইবনে খালাফ: অংশ নেবে কি নেবে না | বদরের যুদ্ধ-২, বেলালের (রা) মনিব উমাইয়া ইবনে খালাফ ছিল একজন চিহ্নিত কাপুরুষ। স্থূলকায় শরীরের এই মানুষটি অত্যন্ত দামি ও সৌখিন পোশাক পরত। তার প্রচুর অর্থবিত্ত ও অনেক ক্রীতদাস ছিল। তবে যুদ্ধবিদ্যায় তার কোনো দক্ষতা কিংবা পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল না। উমাইয়া যুদ্ধের কথা শোনা মাত্রই তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য টাকা-পয়সা দিয়ে এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে। তারপর সে সবাইকে বলে, “এই লোকটি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।”
নিজের বদলে অন্য একজনকে পেয়ে উমাইয়া বেশ খুশি। কিন্তু সে ছিল কুরাইশদের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। যুদ্ধে তার উপস্থিতি সেনাবাহিনীতে মনোবল বাড়াবে এই যুক্তিতে আবু জেহেল তাকে বলে, “তুমি যদি না যাও তবে অনেকেরই মনোবল ভেঙে পড়বে। তুমি তো এই পুরো অঞ্চলের ‘সাইয়িদ’ (সম্মানিত ব্যক্তি, নেতা)।” অর্থাৎ তোমাকে তো অবশ্যই যেতে হবে। এরপরও উমাইয়া যাবে কি যাবে না তা নিয়ে দোটানায় ছিল।

উমাইয়া ইবনে খালাফ: অংশ নেবে কি নেবে না | বদরের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
এবার আবু জেহেল উকবার কাছে গেল এবং উমাইয়াকে যুদ্ধে যেতে রাজি করানোর জন্য দুজনে একটি ফন্দি আটল। উমাইয়া যখন তার লোকজনের মধ্যে বসে ছিল, তখন উকবা তার কাছে এমন কিছু আতর-সুগন্ধি নিয়ে গেল যা সচরাচর মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে। উকবা বলল, “হে উমাইয়া, এটি তোমার জন্য উপহার! তুমি নিজের শরীরের সেই সুগন্ধি লাগাও যে-জাতীয় সুগন্ধির তুমি যোগ্য!” (অর্থাৎ ‘তুমি একজন পুরুষই নও।’) উমাইয়া বুঝতে পারছিল কী ঘটতে যাচ্ছে; তাই সে উঠে দাঁড়িয়ে উকবা ও আবু জেহেলকে অনেক গালমন্দ করল।
এই ঘটনায় উমাইয়া এতটাই অপমানিত বোধ করেছিল যে শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। কিন্তু তারপরেও তার কাপুরুষতা রয়ে যায়। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুসারে, সে বাড়ি ফিরে গিয়ে তার স্ত্রীকে বলেছিল, “যত টাকা লাগুক, আমার জন্য বাজারের সবচেয়ে ভালো উটটি কিনে নিয়ে এসো।” (যাতে প্রয়োজন হলেই সে পালাতে পারে)। ওদিকে তার স্ত্রী তাকে কাতরকণ্ঠে মিনতি জানাল, “আপনি যুদ্ধে যাবেন না। আপনি তো জানেন না, আপনি সেখানে মরেও যেতে পারেন!” কিন্তু উমাইয়ার মনে তো যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, তাই সে স্ত্রীকে শান্ত করার জন্য বলল, “চিন্তা কোরো না।

আমার আসলেই যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি কেবল লোকদেরকে দেখানোর জন্য যাচ্ছি। আমি সেখানে চুপচাপ লুকিয়ে থাকব, আর সুযোগ বুঝে পেছন দিয়ে পালিয়ে আসব।” তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যার জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করে রেখেছেন তার মৃত্যু হবেই, যেমনটি তিনি পবিত্র কোরানে বলেছেন: “কিন্তু আসলে যা ঘটার ছিল আল্লাহ তা ঘটালেন দুই দলকে যুদ্ধক্ষেত্রে (একত্র করে), যাতে করে যার ধ্বংস হওয়ার কথা সে যেন (সত্যাসত্যের) প্রমাণ স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয় এবং যার জীবিত থাকার কথা সে যেন (সত্যাসত্যের) প্রমাণ স্পষ্ট প্রকাশের পর জীবিত থাকে।” [সুরা আনফাল, ৮:৪২] শেষ পর্যন্ত উমাইয়া কুরাইশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে । কিন্তু সে জানত না যে সে আসলে নিজের মৃত্যুর জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
কুরাইশদের দোয়া
আল-সুদ্দির তাফসিরে উল্লেখ আছে, কুরাইশ বাহিনী মক্কা ত্যাগ করার আগে কাবার চারপাশে সমবেত হয়ে একটি দোয়া করেছিল। তারা কাবার কাপড় স্পর্শ করে বলেছিল, “হে আল্লাহ, এই দুই বাহিনীর মধ্যে আপনার দৃষ্টিতে যে অধিক সম্ভ্রান্ত, তাঁকে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, এই দুই দলের মধ্যে যে অধিক মর্যাদাবান তাঁকে বিজয় দান করুন। হে আল্লাহ, এই দুটি উপজাতির মধ্যে যে উত্তম তাঁকে সাহায্য করুন।”
তারা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না যে, তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে দোয়া করেছে । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা আনফালেও এ-প্রসঙ্গে বলেছেন (এই সুরাতে বদরের যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে উল্লেখ আছে); “(হে কুরাইশরা!) তোমরা মীমাংসা চেয়েছিলে, তা তো তোমাদের কাছে এসেছে। যদি তোমরা বিরত হও, তবে তা তোমাদের জন্য ভালো, যদি তোমরা আবার যুদ্ধ করো তবে আমিও আবার শাস্তি দেব। আর তোমাদের দল সংখ্যায় বড় হলেও তা তোমাদের কোনো কাজে আসবে না; আর (এর কারণ হলো) আল্লাহ তো মুমিনদের সাথে রয়েছেন।” [৮:১৯]
আরও পড়ুনঃ