উম্মে সালামা (রা) | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

উম্মে সালামা (রা) | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে, এর কয়েক মাস পরে, নবি করিম (সা) উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া আল-মাখজুমিয়া নামের এক কুরাইশকে বিয়ে করেন। উম্মে সালামার নাম আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি। নবিজির (সা) স্ত্রীদের মধ্যে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। বর্ণিত আছে, ওহুদের সময় তিনি মাথায় পানি নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের চারপাশে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। সেই সময় তিনি আবু সালামা আবদুল্লাহ ইবনে আবদ আল-আসাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। উম্মে সালামা উভয় হিজরতেই (আবিসিনিয়া ও মদিনা) অংশগ্রহণ করেছিলেন। মদিনায় হিজরতকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম নারী।

উম্মে সালামা (রা) | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

উম্মে সালামা (রা) | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজির (সা) সব স্ত্রীই মজবুত ইমানের বলে বলীয়ান ছিলেন: প্রত্যেকেরই ইসলামের জন্য অনেক অবদান ছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর রসুলের (সা) স্ত্রী হিসেবে তাঁদেরই বেছে নিয়েছিলেন যাঁরা সেই মর্যাদার যোগ্য ছিলেন। উম্মে সালামার সঙ্গে তাঁর স্বামী আবু সালামার দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। ওহুদের যুদ্ধে আবু সালামা গুরুতরভাবে আহত হন এবং কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যান।

উম্মে সালামা স্বামীর মৃত্যুশয্যায় তাঁকে বলেছিলেন, “আমি শুনেছি, কোনো জান্নাতি পুরুষ মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী যদি আবার বিয়ে না করে, তবে সে সরাসরিভাবে তার সঙ্গে জান্নাতে যাবে (অর্থাৎ তারা জান্নাতে পুনরায় মিলিত হবে)। আর কোনো জান্নাতি নারী মারা যাওয়ার পর তার স্বামী যদি আর বিয়ে না করে, সে ক্ষেত্রেও তারা জান্নাতে পুনরায় মিলিত হবে। সুতরাং এসো আমরা একে অপরের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করি, আমাদের মধ্যে একজন মারা গেলে অন্যজন আর বিয়ে করব না।” ভালোবাসার কী দারুণ বহিঃপ্রকাশ। তিনি স্বামীকে বলার চেষ্টা করছেন, “চিন্তা করো না, তোমার পরে আমি আর কাউকে বিয়ে করছি না।’

আৰু সালামা: আমি যদি একটি কথা বলি, তুমি কি আমার কথাটি রাখবে? উম্মে সালামা: হ্যাঁ, অবশ্যই রাখব।

আবু সালামা: তাহলে আমি মারা যাওয়ার পরে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে কোরো।

অতঃপর আবু সালামা নিজের মৃত্যুশয্যায় দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমার চেয়ে উত্তম স্বামী দান করুন, যিনি তাঁর যত্ন নেবেন এবং কখনও তার কোনো ক্ষতি করবেন না।”

কত মহৎ হৃদয়ের একজন মানুষ, কত উদার মনের একজন স্বামী! উম্মে সালামার বয়স তখন মাত্র তিরিশের কোঠায়। আবু সালামা চাননি, তাঁর স্ত্রী বাকি জীবনটা একা থাকুন ।

আমরা উম্মে সালামার এই বিখ্যাত গল্পটি জানি, যা সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে। তিনি বলেছিলেন, “একদিন আমার স্বামী খুব খুশি হয়ে ঘরে এসে বললেন, ‘আমি নবিজির (সা) কাছে সুন্দর একটি হাদিস শুনেছি।’ আমি বললাম, কী সেটি? তিনি জানালেন যে নবিজি (সা) বলেছেন, কেউ কখনও বিপদগ্রস্ত হলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং এই দোয়াটি করে: “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করব।

হে আল্লাহ, আমার দুর্দশার জন্য আমাকে পুরস্কার দিন এবং এর বদলে আমাকে আরও উত্তম কিছু দান করুন।” আবু সালামা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উম্মে সালামার এই হাদিসটির কথা মনে পড়ে যায়। তারপর তিনি ওই দোয়াটি করেন। কিন্তু মনের গভীরে তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন, “আবু সালামার চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে?” আবু সালামার মৃত্যুর পরে প্রথম যে ব্যক্তিটি তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি আবু বকর (রা)। তিনি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।

লক্ষ করুন, সেই সময় বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক সাহাবিই একা থাকতেন না। স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া থাকা তাঁদের কাছে খুব স্বাভাবিক ছিল না। এখনকার সময়ে আমরা স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে মানুষকে বিধবা বা বিপত্নীকের তকমা লাগিয়ে দেই, যা মোটেই উচিত নয়। সেই যুগে সাহাবিদের মধ্যে এই ধারণাই ছিল না। এর কিছুদিন পর নবিজি (সা) নিজেই উম্মে সালামাকে প্রস্তাব দেন। জবাবে উম্মে সালামা বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি কেন খুশি হব না যখন আপনি আমার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন?

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কিন্তু তিনটি বিষয় আপনার জানা উচিত:

১) আমি একজন ঈর্ষাপরায়ণ মহিলা। ইতিমধ্যে আপনার কয়েকজন স্ত্রী আছেন। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, (আপনার অন্য স্ত্রীদের প্রতি) আমার ঈর্ষাবোধ আপনাকে অসন্তুষ্ট করবে, তা আল্লাহ তায়ালাকেও অসন্তুষ্ট করবে।

 

উম্মে সালামা (রা) | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিয়ে | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

২) আমি এখন আর একজন যুবতী নই। আমার বয়স এখন মধ্য তিরিশে। ৩) আমার চার সন্তানসহ একটি পরিবার আছে।”

নবিজি (সা) বললেন, “তোমার ঈর্ষাপরায়ণতার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব (ইনশাআল্লাহ তোমার অন্তর থেকে ঈর্ষা মুছে যাবে)। তোমার বয়সের ব্যাপারে বললে আমিও তোমার মতো একই দুর্দশার মধ্যে আছি (এখানে নবিজির (সা) কৌতুকপ্রিয়তার দিকটিও লক্ষ করুন)। আর তোমার পরিবারের কথা বললে, তোমার পরিবার তো আমারও পরিবার।”

উম্মে সালামার সঙ্গে নবিজির (সা) বিয়ে হয় সম্ভবত হিজরতের চতুর্থ বছরের কোনো এক সময়ে। তিনি ছিলেন নবিজির (সা) ষষ্ঠ স্ত্রী। উম্মে সালামা  তুলনামূলকভাবে দীর্ঘজীবন বেঁচে ছিলেন। ৫৯ হিজরি সালে তাঁর মৃত্যু হয়, তখন তাঁর বয়স আশির কোঠায়। আবু হুরায়রা (রা) তাঁর জানাজায় নেতৃত্ব দেন। তাঁকে বাকি আল-ঘারকাদে কবরস্থ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment