উয়ায়না ইবনে হিসন | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২, আহজাবের আরেক নেতা ছিল উয়ায়না ইবনে হিসন। সে ছিল সত্যিকারের বেদুইন। অমার্জিত আচরণের জন্য তার কুখ্যাতি ছিল। সে একবার মদিনা এসেছিল নবিজির (সা) সঙ্গে কোনো চুক্তি করা যায় কি না তা যাচাই করার জন্য (ইসলাম গ্রহণের জন্য নয়)।
উয়ায়না ইবনে হিসন | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সময়টা ছিল হিজাবের আয়াত নাজিল হওয়ার আগে। জানা যায়, সে দরজায় টোকা না দিয়েই নবিজির (সা) ঘরে ঢুকে পড়ে। নবিজি তাকে বলেন, “হে উয়ায়না, তুমি তো ঘরে প্রবেশের আগে আমার অনুমতি নিলে না।” (অর্থাৎ, ‘তুমি কি ভদ্রতা জানো না?’) উনায়না বলে, “আমি জীবনে কোনো বাড়িতে ঢোকার জন্য কখনও কারও অনুমতি চাইনি।” তারপর সে আয়েশার (রা) দিকে আঙুল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এই লাল রঙের যুবতীটি কে?” নবিজি (সা) বলেন, “ইনি আয়েশা।”
উনায়না বলে, “যদি আমি আপনাকে এর চেয়েও বেশি সুন্দরী কাউকে এনে দেই? আমি আপনাকে আমার নিজের স্ত্রীদের মধ্যে একজনকে দিয়ে দেব।”
নবিজি (সা) বলেন, “আল্লাহ এই কাজকে হারাম করেছেন।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাহেলি যুগে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে অন্য কাউকে দান করা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
উনায়না চলে যাওয়ার পর আয়েশা (রা) নবিজিকে (সা) জিজ্ঞেস করলেন, “কে এই লোক?”
উত্তরে নবিজি (সা) বললেন, “এ সেই নিরেট গর্ধভ প্রকৃতির লোক যাকে তার সম্প্রদায়ের সবাই মান্য করে ।”
আয়েশা (রা) বললেন, “সে চলে যাওয়ার পর আপনি কেন তার সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করছেন?” নবিজি (সা) বললেন, “তুমি কি কখনও আমাকে কোনো অশ্লীল (‘ফাহিশ’) ব্যক্তির সঙ্গে অশ্রীল আচরণ করতে দেখেছ?” (অর্থাৎ অসভ্য লোকের অসভ্যতা থেকে বাঁচতে হলে তোমাকে তাদের সামনে ভদ্র আচরণ করতে হবে।)

উয়ায়নার মতো অসভ্য ও বর্বর ব্যক্তি কীভাবে একটা গোত্রের নেতা হতে পেরেছিল? সে কাহিনি একটু অন্যরকম। উনায়না ইবনে হিসনরা ছিল দশ ভাই। তাদের বাবা হিসন জীবনের শেষভাগে অত্যন্ত এক গুরুতর রোগে ভুগছিল, তা ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। সে তার দশ ছেলেকে ডেকে বলল, “আমি যদি আমার মৃত্যুশয্যায় তোমাদের একটা কাজ করতে বলি, তোমরা কি তা করবে?” সবাই প্রতিশ্রুতি দিল, “অবশ্যই।”
তারপর সে তাদের হাতে ছুরি দিয়ে বলল, “এই নাও, এই ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করো, যাতে আমার এই যন্ত্রণার অবসান হয় (অর্থাৎ ‘আমাকে মেরে ফেলো।’)। ” উয়ায়না ছাড়া প্রত্যেক ছেলেই অস্বীকৃতি জানিয়ে বলল, “তুমি কি কখনও শুনেছ যে কোনো পুত্র তার নিজের পিতাকে হত্যা করে?” তা ছাড়া সেই জাহেলি গোষ্ঠীতন্ত্রের যুগে তো এই কাজ ছিল একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু উয়ায়না তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, “এর বিনিময়ে আমি কী পাব?” বাবা জবাবে বলল, “যে আমার কথা শুনবে, আমার পরে সে-ই হবে গোত্রের নেতা।” তারপর উয়ায়না ইবনে হিসন নিজের বাবাকে নিজ হাতে হত্যা করে বন ফিজারা গোত্রের নেতা হয় ।
সিরাহের শেষের দিকে যখন আরবের সবাই ইসলাম গ্রহণ করে, তখন উয়ায়নাও ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তুলায়হা ইবনে ওয়ালিদ ইবনে নওফাল নিজেকে নবি দাবি করলে উয়ায়না এই তৃতীয় ভণ্ড নবির পক্ষে যোগ দেয় । তাই রিদ্দার যুদ্ধে (১২ হিজরিতে ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে) খালিদ ইবনে আল-ওয়ালিদ উয়ায়নাকে বন্দি করে মদিনায় এনে বেঁধে রাখেন। সে সময় মদিনার লোকেরা তাকে তিরস্কার করে বলেছিল, “তুমি একজন মুসলিম হয়ে কীভাবে তুলায়হার সঙ্গে যোগ দিলে?”
উত্তরে সে বলেছিল, “আমি তখন মন থেকে ইসলাম গ্রহণ করিনি।” , কিছু বাদানুবাদের পর সে আবার ইসলাম গ্রহণ করলে খলিফা আবু বকর (রা) তাকে ছেড়ে দেন। আল্লাহ ভালো জানেন, সে আসলে কী অবস্থায় মারা গিয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ