উরওয়ার জাহেলি মানসিকতা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২, উরওয়া জাহেলি দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল: “হে মুহাম্মদ, তুমি কি তোমার আগে কখনও এমন একজন আরবের কথা শুনেছ যে নিজের গোত্রকে ধ্বংস করেছে? (অর্থাৎ কুরাইশদের সঙ্গে তোমার বৈরিতাই তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে ।) আর যদি অন্য কিছু হয় (অর্থাৎ কুরাইশরা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জিতে যায়), তাহলে ভিন্ন ভিন্ন জাতি থেকে আসা তোমার এই লোকজন সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে ছেড়ে পালাবে।”
উরওয়ার জাহেলি মানসিকতা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সে বলতে চাচ্ছে যে, সাহাবিরা নবি করিমের (সা) প্রতি অনুগত থাকবে না, কারণ জাতি ও গোত্রের দিক থেকে তারা ভিন্ন। এখানে উরওয়া পুরো বিষয়টি দেখছে গোত্রভিত্তিক বিভাজনের ভিত্তিতে। তার ধারণা অনুসারে, যে কোনো পরিস্থিতিতে আপনি আপনার গোত্রের সঙ্গে থাকবেন। জীবনে এই প্রথমবারের মতো সে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও গোত্রকে একত্রিত হতে দেখছে; এর কোনো ব্যাখ্যা সে খুঁজে পাচ্ছে না । ইসলাম কীভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করল, তা তার মাথায় আসছে না।
‘সাহাবিরা নবিজির (সা) প্রতি অনুগত থাকবে না’—উরওয়ার এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার উদ্দেশ্যে একটি জঘন্য গালি (‘উমসুস বুজর আল-লাত’) শোনা গেল । প্রসঙ্গক্রমে, এই গালিটি এতই অশ্লীল ছিল যে তার পুরো অর্থ না করে এর অংশগুলো বলছি; আপনারা বুঝে নেবেন: (১) তায়েফের লোকদের প্রধান মূর্তি আল-লাত, (২) নারীর গোপনাঙ্গ এবং (৩) চোষা ।

এই আশ্রাব্য গালিটি যে সাহাবির কাছ থেকে এসেছিল তাঁর কাছ থেকে এমন কথা আসবে তা কেউ কখনও ভাবতে পারেনি; তিনি আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা)।
উরওয়া বলল, “কে বলল?”
আবু বকর: ইবনে আবি কুহাফা ।
উরওয়া: আল্লাহর কসম, তুমি আমাকে ধার দিয়ে যে অনুগ্রহ করেছ, যা আমি এখনও ফেরত দেইনি, তা না হলে আমিও তোমাকে একই রকম মন্তব্য করে জবাব দিতাম ।
আবু বকর: তুমি কি সত্যিই মনে কর যে আমরা নবিজিকে (সা) পরিত্যাগ করব?
লক্ষ করুন, এখানে আবু বকর (রা) নবিজিকে (সা) অপমান করার কারণে রাগান্বিত হয়েছিলেন, তাঁকে (আবু বকরকে) অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়। সন্দেহাতীতভাবে, আবু বকর ছিলেন সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র ও কোমল স্বভাবের। কিন্তু তিনিও তো একজন মানুষ। তাই যখন তিনি নবিজিকে (সা) অপমানিত হতে দেখলেন, তখন মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। তিনি যে মুশরিকদের একটি মূর্তিকে অশ্লীল গালি দিলেন, তা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণীয় নয় ।
আল্লাহ তায়ালা কোরানে বলেছেন: “আর তারা আল্লাহ তায়ালার বদলে যাদেরকে ডাকে, তোমরা তাদের গালিগালাজ কোরো না, নইলে তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে।” [সুরা আনআম, ৬:১০৮] উরওয়া নবিজিকে (সা) তাঁর পরিকল্পনা ত্যাগ করে মদিনায় ফিরে যেতে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে গেল। সেই সময়ের রীতি অনুসারে দুজন নেতার দেখা হলে ভ্রাতৃত্বের লক্ষণ হিসেবে একে অপরের দাড়ি ধরত।
উরওয়া বেশ কয়েকবার নবিজির (সা) দাড়ি স্পর্শ করার চেষ্টা করে। কিন্তু যতবার সে তা করতে যায়, ততবারই সে একটি তলোয়ারের হাতলের খোঁচার সঙ্গে আওয়াজ শুনতে পায়, “হাতটি কাটা পড়ার আগেই নবিজির (সা) দাড়ি থেকে হাতটি সরিয়ে নিন।” কয়েকবার এমন খোঁচা খেয়ে সে বলে, “কে এই কথা বলছে?” দেখা গেল, সেই ব্যক্তি ছিলেন তার নিজেরই ভাতিজা মুগিরা ইবনে শুবা আল-সাকাফি।
আরও পড়ুনঃ