উরওয়ার মুখে সাহাবিদের বর্ণনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২, শেষ পর্যন্ত আপস-আলোচনা ভেঙে যায়। উরওয়া কুরাইশদের কাছে ফিরে যাওয়ার পর সাহাবিদের সম্পর্কে এক চমৎকার বর্ণনা দেয়। সে বলে, “আমি রোমের সিজার, পারস্যের কিসরা এবং আবিসিনিয়ার নাজাশিসহ অনেক রাজা- রাজরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, তাদের রাজপ্রাসাদেও গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি কখনও কোন রাজাকে এতটা শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে দেখিনি যেমনটা মুহাম্মদের (সা) সঙ্গীসাথিরা তাঁর প্রতি প্রদর্শন করে।
মুহাম্মদ থুতু ফেললে তা মাটিতে পড়ার আগেই তাঁর সাথিদের কেউ না কেউ তা নিয়ে নিজের মুখে বা গায়ে ঘষে । তিনি যখন হাত-মুখ ধোন (ওজু করেন), তখন তা থেকে ছিটিয়ে পড়া পানির ফোঁটার কিছু অংশ পেতে তাঁর সাথিরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে । তাঁর সামনে কথা বলে মাথা নামিয়ে নিচু স্বরে, শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ কেউই সরাসরি তাঁর চোখের দিকে তাকায় না।”
উরওয়ার মুখে সাহাবিদের বর্ণনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

উল্লেখ্য, নবিজি (সা) সাহাবিদের কখনও এসব করতে বলেননি; তাঁরা তাঁর প্রতি অত্যধিক শ্রদ্ধাবশত এসব করতেন। উরওয়া শুরুতে সাহাবিদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল, ‘এই লোকজন সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেগে চলে যাবে।’ আর এর কয়েক ঘণ্টা পরেই সে বলছে, *আমি কখনও কোনো রাজাকে এতটা শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে দেখিনি।’ সাহাবিদের মাত্র কয়েক ঘণ্টা দেখেই উরওয়া নবিজির (সা) প্রতি তাদের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসের প্রমাণ পেয়ে যায় ।

তারপর সে কুরাইশদের বলে, “আমি তোমাদের দুই দলের শক্তিমত্তাই হিসাব করে দেখেছি। জেনে রেখো, তোমরা যদি যুদ্ধ চাও, তাহলে তাঁরাও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আমি এমন একটি দলকে দেখে এসেছি, যারা তাদের সাথির কোনো ক্ষতি হলে তাদের নিজেদের কী হবে তা নিয়ে পরোয়া করে না। (অর্থাৎ তারা মুহাম্মদকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু করবে)। এমনকি তাদের মধ্যে নারীরাও তাঁকে (মুহাম্মদকে) কোনো মূল্যেই হস্তান্তর করবে না। তাই আমার পরামর্শটা নাও। আমি ভয় পাচ্ছি, তোমরা কোনোভাবেই তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না।
উরওয়া কুরাইশদের বোঝাতে চায়, মুসলিম বাহিনী খুবই শক্তিশালী, যদিও সংখ্যায় কুরাইশরা ছিল তাঁদের তিন গুণ ।
উরওয়ার পক্ষ পরিবর্তন
তারপর উরওয়া যোগ করল, “তা ছাড়া সে (মুহাম্মদ) তো এসেছে এই কাবাঘরকেই সম্মান জানাতে এবং কোরবানির পশুও সাথে নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার বদলে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এখানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” আমরা দেখতে পাচ্ছি, এরই মধ্যে উরওয়া পক্ষ পরিবর্তন করে ফেলেছে। সে কুরাইশদের এই বলে মক্কা ত্যাগ করেছিল, ‘তোমরা তো জান আমি তোমাদের পক্ষেই আছি।’ আর নবি করিমের (সা) সঙ্গে দেখা করার পর তার হৃদয় এখন মুসলিমদের সঙ্গে । কুরাইশরা উরওয়ার মুখ থেকে এসব কথা শুনে রেগে গিয়ে বলে, “হে ইয়াফুরের পুত্র, আমরা তোমার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করেছিলাম।” তারপর তারা বলে, “কিন্তু আমরা তাকে (মুহম্মদকে) এই বছর মক্কায় প্রবেশ করার অনুমতি দেব না।”
আরও পড়ুনঃ