এক হাজার ফেরেশতার বাহিনী | বদরের যুদ্ধ-৩, সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, নবি করিম (সা) মুসলিম বাহিনীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানোর পর আবার কেবলার দিকে মুখ করে দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে দেওয়া আপনার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করুন। হে আল্লাহ, আপনি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমাকে দিন। হে আল্লাহ, আজ এই দলটি যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে আপনাকে উপাসনা করার আর কেউ থাকবে না।”

এক হাজার ফেরেশতার বাহিনী | বদরের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
এরপর তিনি আকাশের দিকে হাত উঁচু করে তুলে ধরলেন। নবিজি (সা) দুহাত তুলে দোয়া করতে করতে এত বেশি নিমগ্ন হয়ে পড়েন যে, একপর্যায়ে তাঁর শরীরের উপরের অংশের পোশাকটি নিচে পড়ে যায় এবং তাঁর পুরো বুকটি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তা দেখে আবু বকর (রা) পোশাক তুলে নিয়ে নবিজির (সা) গায়ে পরিয়ে দেন। তারপর তিনি তাঁকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “যথেষ্ট হয়েছে, হে আল্লাহর রসুল। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আপনাকে দেবেন।”
আবু বকর (রা) বলা শেষ করেছেন, তখনই নবিজি (সা) কিছুটা ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়লেন, যার অর্থ হলো শীঘ্রই ওহি আসছে। তিনি হাত নামানোর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব এল। এ বিষয়ে আবু দাউদের একটি হাদিস আছে, যেখানে নবিজি (সা) বলেন, “আল্লাহর বান্দা যখন হাত উপরে তোলে, তখন বান্দার খালি হাত ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জা বোধ করেন।” আমাদের কাছেও কেউ এসে কিছু চাইলে তাকে তা দিতে না পারলে আমরা লজ্জা অনুভব করি; তাহলে আল্লাহর কথাটি ভাবুন! তিনি তো ‘আল-করিম’ (২)।

তাঁর পক্ষে ফিরিয়ে দেওয়া কীভাবে সম্ভব? আর সেই ব্যক্তি যদি হয় তারই প্রিয় রসুল (সা), সেই হাত কি কিছু না পেয়ে ফিরে আসতে পারে? নবিজি (সা) হাত নামিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিব্রাইল (আ) ওহি নিয়ে আসেন। জানা যায়, নবিজি (সা) তখন তাঁর চোখ-দুটি শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছিলেন। ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন, ওহি আসা শেষ হলে যখন তিনি ফিরে তাকালেন তখন তাঁর মুখটি মনে হচ্ছিল চাঁদের মতো। তিনি আবু বকরকে (রা) বললেন, “খুশি হও, আবু বকর! নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর সাহায্য চলে এসেছে। এই হচ্ছে জিব্রাইল (নবিজি (সা) ইশারায় দেখিয়ে দিচ্ছেন), তিনি পাগড়ি পরে তাঁর ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে উপত্যকার ভেতর দিয়ে চলছেন। আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলেছেন:
“স্মরণ করো, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে কাতর প্রার্থনা করেছিলে, তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন (ও বলেছিলেন), ‘আমি তোমাকে সাহায্য করব এক সহস্র ফেরেশতা দিয়ে, যারা একের পর এক আসবে।’ [সুরা আনফাল, ৮:১] কুরাইশ বাহিনীকে ঘায়েল করার জন্য একজন ফেরেশতাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এক হাজার ফেরেশতা পাঠালেন! এ পর্যায়ে নবিজি (সা) তেলাওয়াত শুরু করলেন: “এ-দল তো শীঘ্রই পরাজয় বরণ ও পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে।” [সুরা কমর, ৫৪:৪৫]। উমর (রা) বলেন, তিনি কখনই এই আয়াতটির মর্মার্থ বুঝতে পারেননি, যতক্ষণ না নবিজি (সা) বদরের সকালে তা পাঠ করেন।
আরও পড়ুনঃ