কিশোর সাহাবি | ওহুদের যুদ্ধ-২, বদরের যুদ্ধের মতো ওহুদের যুদ্ধ সম্পর্কেও সাহাবিদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনার বিবরণ রয়েছে। কিন্তু কোন ঘটনার পর কোনটি ঘটেছিল তা নির্ণয় করতে গেলে সমস্যা দেখা দেয়। ধরুন, আপনি সারাদিন ধরে খুব জটিল একটি কাজে খাটাখাটুনি করে শেষ করলেন। দিনশেষে আপনি আপনার সন্তানদের কাছে যদি সেই কাজের বর্ণনা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই প্রতিটি ঘটনার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করবেন না। উল্লেখ করার মতো একটি বা দুটি বড় ঘটনাই বলবেন। একইভাবে সাহাবিরাও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে গেছেন। তাই যুদ্ধের ঘটনাগুলো সময়ের ক্রমানুসারে সাজানোর ক্ষেত্রে জটিলতা রয়ে গেছে।

ওহুদের যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরও প্রকট, কারণ ওহুদে একটি চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যদি পাঁচটি ভিন্ন সিরাহের বই পড়েন, তবে এই যুদ্ধের ঘটনাগুলোর পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন কালানুক্রমিক বর্ণনা পাবেন। তাই আমরা এই পর্বে এবং পরের দুই-তিনটি পর্বে যুদ্ধের ঘটনাগুলো সাজানোর চেষ্টা করব। সিরাহের অন্যান্য বইতে সেগুলোর বর্ণনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে।
কিশোর সাহাবি | ওহুদের যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ওহুদের যুদ্ধে নবি করিম (সা) বাহিনী গঠন থেকে শুরু করে প্রতিটি যোদ্ধার তদারকি করা এবং তাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনের কাজটি নিজেই করেন। বর্ণিত আছে, অন্তত ১২ জন সাহাবির বয়স ১৫ বছরের কম ছিল বলে তিনি তাঁদের ওই বাহিনীতে নেননি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে উমর, জায়েদ ইবনে সাবিত (পবিত্র কোরানের বিখ্যাত সংকলক), উসামা ইবনে জায়েদ ইবনে হারিসা, আবু সাইদ আল-খুদরি, জায়েদ ইবনে আরকাম প্রমুখ। উসামা ইবনে জায়েদের বয়স তখন মাত্র ১১-১২ বছর । বাদ পড়া কিশোরদের অধিকংশই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টায় নানা যুক্তি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন সফলও হন।
নবিজি (সা) ১৮ বছর বয়সী রাফি ইবনে খাদিজকে ফিরে যেতে বললে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর এক আত্মীয় আর্জি জানায়, “হে আল্লাহর রসুল, সে তির-ধনুক চালনায় খুব পারদর্শী।” নবিজি (সা) রাফিকে থাকার অনুমতি দেন। তারপর ১৮ বছর বয়সী সামুরা ইবনে জুন্দুর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি রাফিকে থাকার অনুমতি দিয়েছেন, আমি তো রাফির চেয়েও শক্তিশালী; আমি তাকে বেশ কয়েকবার কুস্তিতে হারিয়েছি। তাই আমাকে বাদ দেওয়াটা ন্যায্য হচ্ছে না!” এক বর্ণনা অনুসারে, সামুরা নিজের শক্তির প্রমাণ দেওয়ার জন্য রাফির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নবিজি (সা) শেষে সামুরা ও রাফি উভয়কে বাহিনীতে থাকার অনুমতি দেন।
আরও পড়ুনঃ