কুরদার সারিয়া | কাব ইবনুল আশরাফের প্রাণনাশ কারকারাত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কুরদার সারিয়া | কাব ইবনুল আশরাফের প্রাণনাশ কারকারাত, সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য আরেকটি ঘটনা হলো ‘কুরদার সারিয়া যা ওহুদের যুদ্ধের কয়েক মাস আগে সংঘটিত হয়েছিল। সময়টা ছিল সম্ভবত ৩য় হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাস। এই সারিয়াটি ছিল আসলে ওহুদের যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ ।

 

কুরদার সারিয়া | কাব ইবনুল আশরাফের প্রাণনাশ কারকারাত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কুরদার সারিয়া | কাব ইবনুল আশরাফের প্রাণনাশ কারকারাত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কুরাইশরা সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য তাদের বার্ষিক বাণিজ্যিক কাফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কাফেলা নিয়ে কীভাবে যাবে, কোন পথ দিয়ে যাবে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার জন্য তারা একটি সভার আয়োজন করে। সাফওয়ান ইবনে উমাইয়াকে দেওয়া হলো এই বছরের কাফেলার দায়িত্ব। সমস্যা হলো, বদরের যুদ্ধের কারণে প্রচলিত ও প্রধান পথ দিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। সাফওয়ান কুরাইশদের সেই সভায় পরামর্শ চেয়ে বলল, “মুহাম্মদ ও তার সাথীরা তো আমাদের প্রধান পথ আটকে রেখেছে। এখন যদি আমরা পশ্চিম দিকের সমুদ্রের কাছাকাছি দিয়ে যাই, সেখানেও ইতিমধ্যে বেশিরভাগ মানুষই মুহাম্মদের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়ে তাঁর ধর্ম গ্রহণ করেছে। তাহলে এখন আমরা কী করতে পারি?”

বোঝা যাচ্ছে, ইসলাম তখন দ্রুতই প্রসার লাভ করছিল। উপকূলীয় সীমানার দিকে মুসলিমদের দ্বারা তখন পর্যন্ত কোনো অভিযান চালানোর সম্পর্কে সিরাহ লেখকদের বর্ণনা নেই। লেখকরা মূলত মদিনা পর্বের যুদ্ধগুলোর বর্ণনাই লিপিবদ্ধ করেছেন। তাই আমাদের অন্যান্য ঘটনা ও বক্তব্য থেকেও তথ্য আহরণ করতে হবে। যেমন, সাফওয়ানের একটি বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই তখন মুসলিমদের সঙ্গে মেলামেশা ও দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের বাণী পৌঁছে গিয়েছিল ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সাফওয়ান আরও বলল, “এখন যদি আমরা কাফেলা নিয়ে সিরিয়া সফরে না যাই, তাহলে অর্থ উপার্জন করতে পারব না। এভাবে একসময় আমাদের অর্থ নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমাদের জীবনধারণ তো নির্ভর করছে শীত ও গ্রীষ্মের সফরের (‘রিহলাত আল-সিতায়ি ওয়া আল-সায়েফ) ওপর।” তখন আল-আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিব নামের এক প্রবীণ কুরাইশ বলল, “চলো, আমরা ইরাকের দিকের পথ দিয়ে যাই।” এই পথ দিয়ে গেলে প্রথমে উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে গিয়ে আবার উল্টো দিকে ঘুরে সিরিয়ার আসতে হবে। কুরাইশদের এই কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, তারা সিরিয়া যাওয়ার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে পড়েছিল। যা-ই হোক, তারা সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার নেতৃত্বে মালামালসহ কাফেলা প্রস্তুত করল। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল বদরের যুদ্ধের দ্বিতীয় অংশ।

কুরাইশরা তাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করার চেষ্টা করলেও নবি করিম (সা) তা জেনে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি মুসলিমদের একটি দলকে কাফেলার উদ্দেশ্যে অভিযানে পাঠান। কিন্তু তিনি কীভাবে তাদের পরিকল্পনা জানতে পারলেন? বর্ণিত আছে, কুরাইশদের সমম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের একজন এই খবর জানত। সে মদ্যপান করার সময় সালিত ইবনুল নুমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে গর্ব করে বলছিল “কুরাইশরা এবার এমন একটি পরিকল্পনা করেছে যার ওপর কোনোরকম চালাকি করে সুবিধা করা যাবে না। আমরা অমুক অমুক পথ দিয়ে সিরিয়ায় যাব।” সালিত আসলে ছিলেন মক্কায় বসবাসকারী একজন গোপন মুসলিম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে নবিজিকে (সা) সব খবর জানিয়ে দেন।

 

কুরদার সারিয়া | কাব ইবনুল আশরাফের প্রাণনাশ কারকারাত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কাফেলাটিতে ১০০টি উট ছাড়াও অনেক মালামাল ছিল। বাণিজ্যিক কাফেলা হওয়ায় তাদের সঙ্গে কোনো সেনাবাহিনী ছিল না। তাই এর দখল নেওয়া কঠিন হবে না বলেই মনে করা হয়েছিল। নবিজি (সা) এই অভিযানে জায়েদ ইবনে হারিসার নেতৃত্বে মুসলিমদের একটি দল পাঠান। কাফেলাটির পথ রোধ করে সব উট, পশুর চামড়া ও অন্যান্য জিনিসপত্রসহ ৫০ হাজার দিরহাম খুব সহজেই মুসলিমদের করায়ত্ত হয় ।

আমরা এবার একটু অতীতে ফিরে যাই। স্মরণ করুন, আল্লাহ বদরের যুদ্ধের সময় মুসলিমদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, “দুই দলের মধ্যে এক দল তোমাদের আয়ত্তে আসবে।” [সুরা আনফাল, ৮:৭] কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পেলাম, আল্লাহ তাদের উভয়ই দিয়েছিলেন। সুবহানআল্লাহ! বদরের যুদ্ধের সময় মুসলিমরা চেয়েছিলেন নিরস্ত্র কাফেলার দখল, কিন্তু তাঁরা তা পাননি। কুরদার সারিয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁদের তা-ই দিলেন, যা তাঁরা আগে চেয়েছিলেন। এই পুরো অভিযানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এই ঘটনার ফলে কুরাইশরা অত্যন্ত মরিয়া হয়ে ওঠে, তার ফলে ওহুদের যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment