কুরাইশদের যুদ্ধের প্রস্তুতি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কুরাইশদের যুদ্ধের প্রস্তুতি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১, বুসর ইবনে সুফিয়ান একজন সাধারণ হজযাত্রী সেজে মক্কায় যান। তিনি খবর নিয়ে যখন ফিরে আসেন ততক্ষণে নবি করিম (সা) ও সাহাবিরা মক্কার কাছাকাছি আসফান নামক স্থানে পৌঁছে গেছেন। বুসর সেখানে গিয়ে খবর দিলেন যে, কুরাইশরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েছে, এমনকি ‘চিতাবাঘের চামড়া’ পরেছে, যা স্পষ্টতই যুদ্ধপ্রস্তুতির লক্ষণ। তারা তাদের নারীদেরও সঙ্গে নিয়েছে, যেমনটি ওহুদের যুদ্ধের সময় নিয়েছিল। তারা মুসলিমদের মক্কায় ঢুকতে বাধা দেওয়ার জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে একটি দলকে মক্কার ঠিক বাইরে ঘুমায়েম নামক স্থানের কাছাকাছি শিবির স্থাপন করতে পাঠিয়েছে।

কুরাইশদের যুদ্ধের প্রস্তুতি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কুরাইশদের যুদ্ধের প্রস্তুতি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজি (সা) এই খবর শুনে বললেন, “কুরাইশদের জন্য ধিক্কার! যুদ্ধ তাদের পেয়ে বসেছে। তারা যদি আমাকে ও অন্য আরবদের মক্কায় যেতে দেয় তাহলে তারা কী হারাবে? যদি অন্য আরবরা আমাকে আক্রমণ করে এবং জিততে পারে, তাহলে তারা (কুরাইশরা) যা চেয়েছিল তা তো পেয়েই গেল। আর আমি যদি অন্য আরবদের বিরুদ্ধে জয়ী হই, তাহলে সম্মান তো তাদেরই হবে।”  নবিজি (সা) সর্বোপরি একজন কুরাইশ। তাঁর জিতে যাওয়া তো কুরাইশদেরই জিতে যাওয়া।

তিনি আরও বললেন, “আমাকে বাধা দিয়ে কী হবে বলে কুরাইশরা মনে করে? আল্লাহর কসম, আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তিনি আমাকে বিজয় দান করেন, কিংবা আমার এই গর্দান কাটা পড়ে।” তিনি গভীর যন্ত্রণা ও ক্ষোভ থেকে এসব কথা বলছেন ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আলোচনা ও পরামর্শ (‘শুরা’)

নবিজি (সা) বুসরের মুখে পুরো খবর শোনার পর তাঁর কাফেলা আসফানের একটি উপযুক্ত স্থানে থামিয়ে শিবির স্থাপন করলেন। তারপর সবাইকে নিয়ে একটি সভা আহ্বান করলেন। সভা শুরু করলেন আল্লাহর প্রশংসাসূচক খুতবার মাধ্যমে। সেখানে তিনি সবাইকে জানালেন যে কুরাইশরা খালিদ ইবনে ওয়ালিদের নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠিয়েছে, তারা অমুক স্থানে শিবির স্থাপন করেছে।

তারপর তিনি বললেন, “আমাদের এখন উচিত হবে আশেপাশের উপজাতিদের মধ্যে যারা কুরাইশদের সাথে যোগ দিয়েছে তাদের আক্রমণ করা।” এই বলে তিনি প্রথমে নিজের মত প্রকাশ করলেন, তারপর সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কী মনে কর, আমাদের এখন কী করা উচিত?” আবু বকর (রা) দাঁড়িয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি তো কেবল আল্লাহর ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। আপনি তো কোনো যুদ্ধ চাননি। তাই চলুন, আমরা তা-ই করি যা করার নিয়ত প্রথমে করেছিলাম। তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে, তাহলেই শুধু আমরা যুদ্ধ করব।” 

নবিজি (সা) আবু বকরের এই পরামর্শ মেনে নিলেন; তিনি বললেন, “চলো, আমরা আল্লাহর নামে অগ্রসর হই।”  নবিজি (সা) সব সময়ই পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন, যা ছিল একজন সত্যিকারের নেতার লক্ষণ। আরেকটি বিষয় লক্ষ করুন, নবিজি (সা) এখানে নিজের মত পরিবর্তন করেছেন; নিজের প্রাথমিক মত থেকে সরে এসে আবু বকরের (রা) মত গ্রহণ করেছেন। নবিজি (সা) যে মাঝে মাঝে ইজতেহাদ করতেন, এই ঘটনা তারও একটি উদাহরণ।

 

কুরাইশদের যুদ্ধের প্রস্তুতি | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সালাত আল-খাওফ

বর্ণিত আছে যে, কুরাশইদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় নবি করিম (সা) আসফানে ‘সালাত আল-খাওফ’ আদায় করেছিলেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment