খতমে নবুয়ত | কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ

খতমে নবুয়ত আজকের আলোচ্য বিষয়। “খতমে নবুয়ত [ Khatme Nabuyat ]” ক্লাসটি মাদ্রাসার দাখিল [Dakhil] অষ্টম শ্রেণীর [Class 8] কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ [Quran Majeed Tajweed] বিষয়ের পাঠ। যা ৩ অধ্যায়ে [ Chapter 3 ] ১ম পরিচ্ছেদের ৩য় পাঠে পড়ানো হয়।

 

খতমে নবুয়ত

খতমে নবুওয়াত ইসলামী শরীয়তে একটি বিষয়। ইসলামি পরিভাষায় মুহাম্মদ সর্বশেষ নবী ও রাসূল এরূপ বিশ্বাসকে খতমে নবুওয়াত বলা হয়। পবিত্র কুরআনের ৩৩:৪০ আয়াতে মুহাম্মদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী, আর আল্লাহ সব-কিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞাতা।

 

খতমে নবুয়ত

 

ধারণা

“খতমে নবুয়ত” শব্দটি আরবি শব্দ। খতম (‎ﺧَﺗَﻢَ‏‎) অর্থ শেষ, সমাপ্তি আর নবুয়ত ‎(ﻨَّﺒِﻭَ‏‎) পয়গম্বরী, নবিত্ব)। সুতরাং খতমে নবুয়ত অর্থ নবিগণের সমাপ্তি। ইসলামি পরিভাষায়, হজরত মুহাম্মদ (সা) কে শেষ নবি হিসাবে মেনে নেওয়াকে খতমে নবুয়ত বলে। যার মাধ্যমে এ ক্রমধারা শেষ হয় তিনি হলেন খাতামুন নাবিইন বা শেষ নবি। আর ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী শেষ নবি হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা),যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের কিছু সময় পূর্বে আগমন করেছিলেন।

 

খতমে নবুওয়াতের প্রমাণ

কুরআনের দলিল

খতমে নবুওয়াত একটি প্রমাণিত বিশ্বাস। নিম্নে এর দলিল দেওয়া হল:

আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করছেন,

‎”মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।

— সূরা আহযাব, আয়াতঃ৪০, কুরআন

তাফসীর কারক আল্লামা ইমাম ইবনে কাসীর বলেন,

হাদিসের দলিল

মুহাম্মদ বলেন,

“আমার উম্মতের মধ্য থেকে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আসবে প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমি হলাম শেষ নবী; আমার পরে কোন নবী নেই।”

সাহাবী আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত, মুহাম্মাদ বলেন:

“আমি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উদাহরণ হল, এক লোক একটি দালান অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরী করল। কিন্তু দালানটির এক কোনে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিল। লোকজন চর্তুদিকে ঘুরে ঘরে তার সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট বসালে কতই না সুন্দর হত!” তিনি আরো বলেন, “আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী।”

উক্ত হাদিস অনুযায়ী, দালানটির সর্বশেষ ইটটি লাগালেই দালানের কাজ পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। ঠিক তেমুনি, হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমনের ফলে নবুওয়াতের দায়িত্ব সমাপ্ত হলো। কাজ পরিপূর্ণ হওয়ায় দালানটিতে যেমন আর নতুন করে ইট লাগানোর প্রয়োজন নেই, ঠিক তেমুনি নবুওয়াতের দায়িত্ব সমাপ্ত হওয়ায় নতুন কোনো নবি বা রাসূলের আগমনেরও প্রয়োজন নেই। কারণ হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাধ্যমেই নবুওয়াতের দায়িত্ব সমাপ্ত হয়েছে।

যৌক্তিক প্রমাণ

যুক্তি থেকে বিচার করলে দেখা যায় নবিরা আসতেন তিনটি কারণে:

  • পূর্ববর্তী নবির প্রচারিত শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে
  • পূর্ববর্তী নবি কোনো নির্দিষ্ট কাল বা স্থানের জন্য প্রেরিত হলে,
  • পূর্ববর্তী নবির প্রচারিত শিক্ষা অসম্পূর্ণ অথবা তাতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন হলে

কিন্তু মুহাম্মদের জন্য এদের একটিরও প্রয়োজন নেই। তাই আর নবী আসার প্রয়োজন নেই। কারণ-

  • যুক্তি ১: হজরত মুহাম্মদ (সা) এর শিক্ষা ও আদর্শ এখনো বিদ্যমান।
  • যুক্তি ২: হজরত মুহাম্মদ (সা) সর্বকালের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তার প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।
  • যুক্তি ৩: হজরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

“আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম ও ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা: ০৩)

 

কাদিয়ানি আন্দোলনে

কাদিয়ানিদের ধর্মের কুফরি আকিদা অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ নবি নন। তারা মির্জা গোলাম আহমদকে হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরের নবি বলে মানে।

 

ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস

 

খতমে নবুয়ত নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুনঃ 

 

Leave a Comment