খননের সময় খাদ্যঘাটতি | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

খননের সময় খাদ্যঘাটতি | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২, নবিজি (সা) পরিখার প্রতিটি অংশ খননের জন্য ১০ জন করে সাহাবি নিযুক্ত করলেন। পরিখার সঠিক দৈর্ঘ্য ও অবস্থান আমাদের জানা নেই, আমরা শুধু অনুমান করতে পারি। তবে সফিউর রহমান মোবারকপুরীসহ আধুনিক যুগে কিছু সিরাহ লেখকের গবেষণা অনুসারে, পরিখাটি আনুমানিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০-১৩ ফুট প্রশস্ত এবং ৭-৯ হাত গভীর ছিল। কিন্তু কেন তা মাত্র দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল? শহরের বাকি অংশের জন্য কী ব্যবস্থা ছিল? মদিনা শহরের পূর্ব ও পশ্চিম দিক আগ্নেয় শিলার পর্বত দিয়ে সুরক্ষিত; আর শহরের দক্ষিণ দিক জুড়ে ছিল খেজুর গাছের ঘন উদ্যান, যার ভেতর দিয়ে ১০ হাজার সেনার একটি বাহিনীর ঢোকার সুযোগ ছিল না।

খননের সময় খাদ্যঘাটতি | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

খননের সময় খাদ্যঘাটতি | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তাহলে মদিনায় প্রবেশের জন্য বাকি রইল শুধু উত্তর দিকটি। তারপরও দুই কিলোমিটার লম্বা পরিখা খনন করা সেই সময়ের জন্য ছিল এক বিরাট কর্মযজ্ঞ । কারণ, তখন মুসলিমদের বুলডোজার, খননযন্ত্র, অন্যান্য সরঞ্জাম, এমনকি পর্যাপ্ত জনবলও ছিল না। কিন্তু এসব ছাড়াই ১০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে এত প্রশস্ত এবং গভীর একটি পরিখা খনন করার মূলে ছিল সাহাবিদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম। এখানে লক্ষ রাখতে হবে, পরিখা খননের আসল উদ্দেশ্য ছিল শত্রু বাহিনীকে সাময়িকভাবে আটকে দেওয়া।

সাহাবিরা দিনরাত অবিরাম পরিশ্রম করে বিরাট একটি কাজ শেষ করলেন। সে কাজে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবারই অংশগ্রহণ ছিল, এমনকি নবিজিও (সা) নিজেও পরিখা খননের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। জানা যায়, তিনি নিজে দাগ দিয়ে পরিখার সীমারেখা নির্ধারণ করেছিলেন। নবিজিকে (সা) নিজেদের পাশে পাওয়া ছিল সাহাবিদের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার বিষয়। আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেছেন, “এক শীতের সন্ধ্যায় মুহাজির ও আনসাররা যখন পরিখা খনন করছিলেন, তখন নবিজি (সা) সেখানে উপস্থিত হন। তিনি খননরত সাহাবিদের অত্যন্ত ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের মঙ্গলের চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। সুতরাং আপনি আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি দয়া করুন।’ সাহাবিরা তাঁকে বলেন, ‘আমরাই আপনাকে জেহাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যতদিন আমরা বেঁচে আছি, ততদিন আমরা তা পালন করে যাব।”

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আরেক বিখ্যাত সাহাবি আল-বারা ইবনে আজিব বলেছেন, “আমি খন্দকের দিন নবিজিকে (সা) মাটি বহন করতে দেখেছি। তাঁর গায়ে এত ধুলাবালি লেগে ছিল যে তাঁর পুরো বুকের লোমগুলো ধুলায় ঢেকে গিয়েছিল।” আল-বারা আরও বলেন, “তিনি আমাদের সঙ্গে কবিতাও আবৃতি করেছিলেন: অতএব আপনি আমাদের ওপর শান্তি বর্ষন করুন; এবং শত্রু এলে আমাদের পাগুলোকে দৃঢ় করে দিন। অবশ্যই শত্রুরা আমাদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে; *ও আল্লাহ, আপনি ব্যতিরেকে আমরা কোনো হেদায়েত পাই না, আপনার জন্য ছাড়া আমরা দান কিংবা প্রার্থনাও করি না। তারা ফিতনা চায়, কিন্তু আমরা তা চাই না, চাই না।’ আর যখন তিনি আবৃত্তি করেন, ‘চাই না, চাই না’, তখন সাহাবিরা সঙ্গে উচ্চস্বরে গলা মেলান।”

খাদ্যঘাটতি

পরিখা খননের শুরু থেকেই মদিনায় খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। কী কারণে তা আল্লাহ ভালো জানেন। তবে আমরা নিচের কারণগুলো অনুমান করতে পারি: ১. খন্দকের যুদ্ধ হয়েছিল শীতকালে, যে সময়ে ফল উৎপাদন হতো না। এ কারণে সাহাবিদের সঞ্চিত খাবারের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। ২. তাঁরা অবরোধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।

 

খননের সময় খাদ্যঘাটতি | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

৩. সবাই খননকাজে ব্যস্ত থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য সরবরাহ কমে গিয়েছিল। সহিহ বুখারিতে উল্লিখিত আছে, সাহাবিরা সঞ্চিত শুকনো বার্লি ও তেল মিশিয়ে কোনোরকমে খিদে মেটাতেন। মাঝে মাঝে খাবারে কিছুটা দুর্গন্ধ পেলেও তারা তা উপেক্ষা করে খেয়ে নিতেন। কখনও কখনও তাঁদের কাছে খেজুরের বীচি ছাড়া খাওয়ার মতো আর কিছুই থাকত না ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment