মুসলিমদের কাছে খবর ফাঁস হয়ে যাওয়া | ওহুদের যুদ্ধ-১, ওই অবস্থায় সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। মক্কাবাসীরা ইতোমধ্যে মদিনা থেকে এক কিংবা দুই দিনের দূরত্বে চলে এসেছে। নবি করিম (সা) আনসার নেতাদের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করার পর একটি সাধারণ সভা আহ্বান করলেন। এখানে নবিজির (সা) বিচক্ষণতার ব্যাপারটি লক্ষ করুন। তিনি প্রথমে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জানালেন, তারপর তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার পরই কেবল তিনি বাকি সবাইকে জানালেন। তিনি এ ক্ষেত্রে একজন দায়িত্বশীল নেতার মতোই আচরণ করছেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না ।

মুসলিমদের কাছে খবর ফাঁস হয়ে যাওয়া | ওহুদের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
সাধারণ সভার দিনটি ছিল শুক্রবার। তাই এমনিতেই সবাই মসজিদে একত্রিত হয়েছিল। তার ওপর সেদিন একটি জানাজাও ছিল, সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল। নবিজি (সা) তাঁদের পুরো ঘটনা খুলে বলে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের এখন কী করা উচিত বলে তোমরা মনে কর?” তার আগে তিনি নিজের মতটিও জানিয়ে দিলেন, “আমি নিজেকে একটি সুরক্ষিত দুর্গের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি।”
অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, “আমার মনে হয় আমাদের মদিনাতেই থাকা উচিত; যেমনটি তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন।” মদিনা ছিল প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত একটি শহর। এর পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি আগ্নেয় শিলার পাহাড় যার উপর দিয়ে কেউ চলাফেরা করতে পারত না। উত্তরে বিশাল ওহুদ পর্বতমালা। দক্ষিণে (মক্কার দিকে) ছিল অসংখ্য খেজুর গাছের বাগান যার ভেতর দিয়ে যে কোনো সেনাবাহিনীর পক্ষে মার্চ করে আসা ছিল অত্যন্ত কঠিন।

সুতরাং নবিজি (সা) সবাইকে মদিনায় থেকে শহরটিকেই প্রাকৃতিক দুর্গ হিসেবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিলেন। শত্রুরা মদিনা আক্রমণ করলে রাস্তায় রাস্তায় লড়াই চালানো যাবে, তাতে মুসলিমরা সহজেই জয়ী হতে পারবেন। কারণ, তারা ব্যারিকেড স্থাপন, ফাঁদ পাতাসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারবেন। বিস্ময়করভাবে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলও নবিজির (সা) এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। সে বলল, “হ্যাঁ, এটিই ঠিক সিদ্ধান্ত। মদিনা আক্রমণ করে কেউ কখনও সফল হয়নি।” ধারণা করা যায়, প্রস্তাবটি সঠিক মনে করেছিল বলেই সে তা সমর্থন করেছিল, নবিজির (সা) প্রতি আনুগত্য থেকে নয়। তা ছাড়া অভিজ্ঞতার কারণে সে ছিল মদিনাবাসীর মধ্যে সবচেয়ে ঝানু যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ।
আলোচনা সভায় যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহী বেশ কিছু তরুণ সাহাবিও ছিলেন। তাঁরা বললেন, “আমরা কেন কাপুরুষের মতো ঘরে থাকব? বরং আমাদের বীরপুরুষের মতো রণক্ষেত্রে গিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করা উচিত।” তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের বদরের যুদ্ধে অংশ না নিতে পারার কারণে আফসোস ছিল; তাই তাঁরা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নবিজির (সা) ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ সাহাবিরা এ বিষয়ে কোনো মত না দিয়ে নীরব থাকেন। অবশেষে, নবিজি (সা) যখন বুঝতে পারেন যে সাহাবিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে আগ্রহী, তখন তাতে সম্মতি দেন এবং নিজের বর্ম পরার জন্য বাড়ির ভেতরে চলে যান।
নবিজি (সা) সভাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পরপরই প্রবীণ সাহাবিরা মুখ খোলেন। তাঁরা তরুণ সাহাবিদের তিরস্কার করে বলেন, “আল্লাহর রসুল (সা) তো শুরুতেই তাঁর মত আমাদের জানিয়েছেন। তবু তোমরা কেন তাঁর মতের বিপরীতে গিয়ে জোরাজুরি করেছ? তোমরা কীভাবে তা করতে পারলে?” এবার তরুণ সাহাবিরা বিব্রত বোধ করলেন। তাঁরা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে দিয়ে নবিজির (সা) কাছে খবর পাঠালেন, “আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি।” হামজা যখন নবিজির (সা) ঘরে প্রবেশ করলেন, ততক্ষণে তাঁর বর্ম পরে ফেলেছেন। তিনি বললেন, “নবি একবার কোনো বর্ম পরিধান করলে শত্রুর সঙ্গে লড়াই না করা পর্যন্ত তা খুলে ফেলা সমীচীন নয়।” অর্থাৎ তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই হাদিসটি মুসনাদ ইমাম আহমদে বর্ণিত আছে।
আরও পড়ুনঃ