উমাইয়া ইবনে খালাফের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

উমাইয়া ইবনে খালাফের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৪, যুদ্ধের একপর্যায়ে কুরাইশ বাহিনী পালিয়ে যেতে শুরু করলে উমাইয়া ইবনে খালাফ সাহায্যের জন্য তার আশেপাশে নিজ দলের লোক খুঁজতে থাকে। সে সময় সে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা আবদুর রহমান ইবনে আওফকে (রা) দেখতে পায়। এই আবদুর রহমান জাহেলি যুগে তার অন্যতম কাছের বন্ধু ছিল। আবদুর রহমান ইসলাম গ্রহণ করার পরেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। [আনুষঙ্গিক বিষয়: ইসলাম গ্রহণ করার আগে আবদুর রহমানের নাম ছিল আবদ আমর। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তিনি এই নতুন নাম গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর বন্ধু উমাইয়া তাঁকে বলে, “আমি তোমাকে এই নামে ডাকতে পারব না, কারণ আমি এই রহমানকে চিনি না।”

 

উমাইয়া ইবনে খালাফের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

উমাইয়া ইবনে খালাফের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আবদুর রহমান: আমার পুরানো নাম ‘আবদ আমর’ বলে ডাকলে আমিও সাড়া দেব না।

উমাইয়া: ঠিক আছে, তাহলে আমি তোমাকে ‘আবদ আল-ইলাহ’ বলে ডাকব। আবদুর রহমান: এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।

এরপর থেকে উমাইয়া তাঁকে সবসময় আবদ আল-ইলাহ বলেই ডাকত। আবদুর রহমানের হাতে ছিল একটি বর্ম। উমাইয়া তাঁর দুহাত চেপে ধরে অনুনয়ের সুরে বলল, “হে আবদ আল-ইলাহ, আমি যদি তোমাকে এই বর্মটির চেয়েও বেশি কিছু দিই? যদি তোমাকে অনেক উট দেই যারা প্রচুর পরিমাণে দুধ দেবে? তুমি বরং বর্মটি ফেলে দিয়ে আমাকে সুরক্ষা দাও, আমাকে বন্দি হিসেবে নিয়ে যাও। তুমি যা চাইবে, আমি সবই তোমাকে দেব।” উমাইয়া আসলে প্রকারান্তরে প্রাণভিক্ষা চাইল। যুদ্ধের ময়দানেও আবদুর রহমানের ব্যবসায়িক জ্ঞান ঠিকই কাজ করছিল; তাই তিনি উমাইয়া ও তার পুত্রকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে মুসলিম শিবিরে নিয়ে গেলেন।

এখানে দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে: ১. মুসলিমরা তখন পর্যন্ত জানত না যুদ্ধবন্দি, মুক্তিপণ, যুদ্ধলব্ধ মালামা ইত্যাদি বিষয়ে তাঁরা কী করবে। এ সংক্রান্ত সব বিধানই আরও পরে নাজিল হয়। ২. বলতে গেলে তারা (উমাইয়া ও আবদুর রহমান) তখনও যুদ্ধের ময়দানে আছেন। পরিবেশটা নিরাপদ নয়, কারণ যুদ্ধ তখনও চলছিল। সুতরাং সে অবস্থায় কী করতে হবে তা মোটেই পরিষ্কার ছিল না।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উমাইয়া ও তার পুত্রকে বন্দি হিসেবে নিয়ে যাওয়ার সময় বেলাল (রা) তাদের দেখতে পেয়ে আবদুর রহমানকে বললেন, তুমি উমাইয়া ইবনে খালাফকে সুরক্ষা দিচ্ছ, যে কি না মুশরিকদের নেতা! এটা করতে হলে তোমাকে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে যেতে হবে।” আবদুর রহমান অনুনয়ের সুরে বললেন, “শান্ত হও, বেলাল। দয়া করে শহও। এরা আমার হাতে বন্দি।” কিন্তু বেলাল মোটেই শান্ত হলেন না। তিনি আশেপাশের আনসারদের ডেকে উচ্চস্বরে বললেন, “এই সেই লোক যে আমাকে অন্যায়ভাবে অত্যাচার করত।”

উমাইয়া ইবনে খালাফ যে বেলালকে অত্যাচার করত তা ছিল সর্বজনবিদিত। সাহাবিদের কাছেও সেই কাহিনি অজানা ছিল না। ফলে আনসাররা বেলালের সমর্থনে এগিয়ে এলে আবদুর রহমান আবারও যুক্তি দিতে থাকেন, “এরা আমার হাতে বন্দি অবস্থায় আছে। এরা আমার ওপর আস্থা রেখে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু বেলাল তাঁর বক্তব্যে অটল, “তুমি কোনোভাবেই উমাইয়াকে সুরক্ষা দিতে পার না!”।

আশেপাশের আনসারদের কাছে আবদুর রহমানের যুক্তির চেয়ে বেলালের আবেগময় কথাই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হলো। তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে উমাইয়াকে ও তার পুত্রকে আক্রমণ করে বসলেন। আবদুর রহমান তাদের রক্ষার সাধ্যমত চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে তারা দুজনই আনসারদের আক্রমণে মারা গেল। বাধা দিতে গিয়ে আবদুর রহমানও পায়ে আঘাত পেলেন।

 

উমাইয়া ইবনে খালাফের শেষ পরিণতি | বদরের যুদ্ধ-৪ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এখানে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালা কীভাবে এই পৃথিবীতেই বেলালের (রা) প্রাপ্য সম্মান তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে উমাইয়াকে উপযুক্ত শাস্তি দিলেন। সুবহানআল্লাহ! যে কণ্ঠস্বর একদা শত অত্যাচারের মধ্যেও আহাদুন আহাদ’ (এক ঈশ্বর, এক ঈশ্বর) বলা বন্ধ করেনি, তাঁর দুর্বিনীত আহ্বানেই আনসারদের সাহায্যে অত্যাচারকারী উমাইয়া ইবনে খালাফের জীবনাবসান হলো। মুসলিম শিবিরের নিরাপত্তার ভেতরে পৌঁছানোর আগেই।

উমাইয়া ইবনে খালাফই বদরের যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যার মৃতদেহ দাফন করা হয়নি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে উমাইয়ার মৃতদেহ শক্ত নুড়িপাথরের উপর পড়ে ছিল, যেমন করে সে বেলালকে উত্তপ্ত পাথরের উপর ফেলে নির্যাতন করত। কেউ তা পাথরের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলেই  গলিত মাংস খুলে পড়ছিল। ফলে লোকেরা মৃতদেহটি সেখানেই ফেলে রেখে আসে। আসার সময় দেহটি তাঁরা কিছু নুড়িপাথর দিয়ে ঢেকে দেন। বলা বাহুল্য, তা ছিল মরুভূমির সেই উত্তপ্ত নুড়িপাথর।

আল্লাহ তায়ালা যে একজন অসীম প্রজ্ঞাবান ন্যায়বিচারক, বদরের যুদ্ধে উমাইয়া ইবনে খালাফের মর্মান্তিক পরিণতির মধ্য দিয়ে আমরা আবার তার প্রমাণ পাই। সত্যিই, আপনি অন্যের প্রতি যেমন আচরণ করবেন, আপনি নিজেও ঠিক একই আচরণের শিকার হবেন ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment