তুলায়হা ইবনে গুওয়ালিদ ইবনে নওফাল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২, আহজাবের আরেক নেতা ছিল বনু আসাদের তুলায়হা ইবনে গুওয়ালিদ ইবনে নওফাল। তার কাহিনিটিও বেশ চমকপ্রদ। সে আহজাবের যুদ্ধে (পঞ্চম হিজরি) মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়তে অন্যদের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বটে, কিন্তু কয়েক বছর পর নবম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণ করে। আবার, নবিজির (সা) মৃত্যুর পরপরই যে দশ ব্যক্তি নিজেকে নবি বলে দাবি করেছিল, সে ছিল তাদের অন্যতম।
তুলায়হা ইবনে গুওয়ালিদ ইবনে নওফাল | খন্দকের (আহজাবের) যুদ্ধ-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তুলায়হা অদ্ভুত নানা কথা বলে দাবি করত যে সেগুলো কোরানের আয়াত। তাকে শায়েস্তা করার জন্য খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে অভিযানে পাঠানো হলে তার গোত্রের সবাই অনুতপ্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু তুলায়হা আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে যায়। আবার সিরিয়ায় গিয়ে সে সত্যিকারভাবেই ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর সে মদিনায় ফিরে এসে অনুতাপ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইলে তৎকালীন খলিফা আবু বকর (রা) তাকে ক্ষমা করে দেন।
তুলায়হা নিজের কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধে ভুগত। সে দোয়া করত আল্লাহ যেন তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ তাকে শহিদের মৃত্যু দান করেন। ১৫ হিজরিতে খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে পারস্যের বিরুদ্ধে আল-কাদিসিয়ার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শেষ পর্যন্ত সে সত্যিই শাহাদাত বরণ করে।

বনু গাতাফান
কুরাইশের পরে আহজাবের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলটি ছিল গাতাফান উপজাতিদের। তাদের সংখ্যা ছিল দুই থেকে চার হাজার। আমরা আগের পর্বে উল্লেখ করেছি, তারা আসলে যুদ্ধে আগ্রহী ছিল না। তাই তারা মদিনায় মুসলিমদের কাছে দূত পাঠিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। তারা বলে, “ইহুদিরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তো আমাদের খায়বারের অর্ধেক ফসল দিতে চেয়েছে; তবে তোমরা যদি আমাদের মদিনার ফসলের এক-তৃতীয়াংশও দাও, তাহলে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না।”
বনু গাতাফানের এই প্রস্তাবের বিষয়ে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য নবিজি (সা) একটি সভা ডাকলেন। তিনি আউস উপজাতির নেতা সাদ ইবনে মুআদ (রা) এবং খাজরাজ উপজাতির নেতা সাদ ইবনে উবাদার (রা) মত জানতে চাইলেন। কিছু সিরাহগ্রন্থে বলা হয়েছে, নবিজি (সা) নিজে বনু গাতাফানের প্রস্তাবটি মেনে নিতে রাজি ছিলেন; তা জেনে সাদ ইবনে মুআদ (রা) ও সাদ ইবনে উবাদা (রা) উভয়েই তাঁকে বললেন, “এটাই কি আল্লাহ আদেশ করেছেন? না এখানে ইজতিহাদের কোনো অবকাশ আছে? যদি ওহি হিসেবে নাজিল হয়ে থাকে, তাহলে আমরা তা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যদি তা না হয়, তাহলে আমরা যেখানে জাহেলি যুগেই নিজেদের অপদস্থ হতে দিইনি, সেখানে ইসলামের যুগে কেন তা হতে দেব?”
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, মদিনার আরবরা এর আগে অন্য কারও কাছে পরাজিত হয়নি। তারা ছিল অত্যন্ত স্বাধীনচেতা প্রকৃতির । নবিজি (সা) ওই দুই সাহাবির জবাবে খুশি হলেন। তিনি বনু গাতাফানের সেই দূতকে বললেন, “তোমাদের সঙ্গে আমাদের এ নিয়ে আর কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই।” তারপর তাকে ফিরে যেতে বললেন।
পরিখা (খন্দক) খনন করতে কত সময় লেগেছিল?
পরিখা খননের সময় নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইবনে সাদ বলেছেন, ৬ দিন লেগেছিল। আবার কেউ কেউ বলেছেন ১৫ দিন। একটি সিরাহের বইয়ে এক মাসের কথাও বলা আছে, যা স্পষ্টতই ভুল। বেশির ভাগ পণ্ডিতের মতে, ৬ দিন থেকে দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিল। যেহেতু এ সময়ের মধ্যে আহজাব চলে এসেছিল, তাই মুসলিমদের দুই সপ্তাহের বেশি সময় পাওয়ার কথা নয়।
আরও পড়ুনঃ