ঘটনার ফলাফল | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ঘটনার ফলাফল | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১, আল-মুরাইসি অভিযানে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কার্যকলাপের খবর ইতোমধ্যেই মদিনায় ছড়িয়ে পড়েছিল । এই খবর আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের পুত্র আবদুল্লাহরও জানতে বাকি রইল না। নবিজি (সা) মদিনায় প্রবেশের মুখেই আবদুল্লাহ তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমরা জানতে পেরেছি আপনি আমার পিতাকে মৃতুদণ্ড দেওয়ার কথা ভাবছেন। আপনি যদি অন্য কাউকে এই কাজ করার দায়িত্ব দেন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে মদিনায় ঘুরে বেড়াতে দেখলে আমি হয়তো সহ্য করতে পারব না, হয়তো রাগের বশে তাকে হত্যাও করে ফেলতে পারি। তা করলে তো একজন মুসলিমকে হত্যার অপরাধে আমাকে জাহান্নামে যেতে হবে। ভাই মৃত্যুদণ্ডটি কার্যকর করার জন্য আপনি আমাকেই আদেশ দিন।”

আবদুল্লাহর দুশ্চিন্তা ছিল জাহান্নামে যাওয়া নিয়ে, তাঁর পিতার মানসম্মানের বিষয়ে নয়। কিন্তু নবিজি (সা) তাঁকে বলেন, “না। বরং তোমার কাজ হলো তার একজন ভালো সঙ্গী হওয়া। যতদিন সে আমাদের মাঝে বাস করবে ততদিন আমরা তার সঙ্গে ভালো ও সদয় ব্যবহার করব।” এই কথা শুনে আবদুল্লাহ স্বস্তি পেলেন। কিন্তু পিতার ওপর তাঁর রাগ মোটেই কমল না। তিনি মদিনা শহরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তাঁর পিতার ফিরে আসার অপেক্ষা করতে লাগলেন। পিতাকে দেখতে পেয়েই তিনি বললেন, “আপনিই যদি সেই ব্যক্তি হন যে বলেছে, ‘আমরা যদি মদিনায় ফিরে যাই তবে সম্মানিতরা অবশ্যই নিকৃষ্টদেরকে বহিষ্কার করবে’, তাহলে আল্লাহর কসম, নবিজির (সা) অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে মদিনায় ঢুকতে দেব না।” নবিজির (সা) অনুমতি পেয়েই আবদুল্লাহ ইবনে উবাই সেদিন শহরে ঢুকতে পেরেছিল।

ঘটনার ফলাফল | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ঘটনার ফলাফল | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নবিজির (সা) জীবদ্দশাতেই নবম হিজরিতে মৃত্যুবরণ করে। পিতার মৃত্যুর পর আবদুল্লাহ নবিজির (সা) কাছে গিয়ে বলেন,  “আমাকে আপনার একটি চাদর দিন, আমি সেটি আমার পিতার কাফন হিসেবে ব্যবহার করব, হয়তো আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।” নবিজি (সা) তাঁকে শুধু নিজের চাদরই দেননি, তিনি নিজে কবরস্থানে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের জানাজা পড়িয়েছেন। তবে জানাজার পর মৃতদেহ কবরে নামানোর ঠিক পরেই আল্লাহ সুরা তওবার এই আয়াত দুটি নাজিল করেন:

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

“তাদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে তুমি কখনও তার জন্য (জানাজার নামাজ পড়বে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। কেননা তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে অস্বীকার করেছিল।” (৯:৮৪) “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না-কর, একই কথা। তুমি সত্তরবার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদের কখনই ক্ষমা করবেন না; কেননা তারা (জেনে-বুঝে) আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ এরূপ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।” [৯:৮০] নবিজি (সা) চেয়েছিলেন, এরকম একজন চিহ্নিত মুনাফেককেও যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। পিতার মৃত্যুর সাত বছরের মধ্যেই আবদুল্লাহ আবু বকরের (রা) খেলাফতের সময়ে ১২ হিজরিতে রিদ্দার যুদ্ধে শহিদ হন ।

ঘটনার ফলাফল

 

ঘটনার ফলাফল | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আমরা ওহুদের যুদ্ধের সময়ও আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মুনাফেকির স্বরূপ দেখেছি। এ বিষয়ে সাক্ষ্য হিসেবে পবিত্র কোরানে কিছু আয়াতও আছে। তবে এই ঘটনার মাধ্যমে তার আসল চরিত্র সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত হয়ে যায় ।

এই ঘটনার পরে মুনাফেকদের অনেকেই আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সংসর্গ ত্যাগ করে সত্যিকারের মুসলিমে পরিণত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবিজি (সা) উমরকে (রা) বলেন, “উমর, এখন তুমি কি মনে করো? যদি আমি সেদিন তোমাকে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে হয়তো আমি তার বহু অনুসারীদের দূরে সরিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন যদি আমি সেই একই লোকদের (তার একসময়ের অনুসারীদের) বলি তাকে হত্যা করতে, তাহলে তারা নিজেরাই এই কাজটি করবে।” জবাবে উমর (রা) বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি ভালো করেই জানি যে নবিজির (সা) মতামত আমার মতামতের চেয়ে অধিকতর উত্তম।”

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment