জাহান্নামের শাস্তি | হাদিস শরীফ

জাহান্নামের শাস্তি আজকের আলোচ্য বিষয়। জাহান্নামের শাস্তি [ The punishment of hell / Punishment in jahannam ] ক্লাসটি মাদ্রাসার দাখিল [Dakhil] ১০ম শ্রেণীর [ Class 10] [ হাদিস শরীফ ] [ Hadith Sharif ] বিষয়ের ২৪ তম অধ্যায়ের [ Chapter 24 ] পাঠ।

 

জাহান্নামের শাস্তি

 

জাহান্নাম আরবি শব্দ। ফারসিতে বলে দোজখ। বাংলাতে নরক। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় পরকালে পাপীদের বাসস্থান হিসেবে জাহান্নামের কথা উল্লেখ করেছেন। আবার কোথাও উল্লেখ করেছেন নার বলে। অবশ্য নার শব্দের অর্থ দোজখের আগুন। প্রত্যেক মুসলমানের পরকালে জান্নাত-জাহান্নামের ওপর ঈমান আনা ফরজ।

 

জাহান্নামের শাস্তি

জাহান্নামের পরিচয় : জাহান্নাম একটি বিভীষিকাময় ও ভয়ানক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্থান। জাহান্নামের শাস্তি বিভিন্ন ধরনের হবে যেমন- সাপ-বিচ্চুর দংশন, ফেরেশতাদের লৌহদণ্ড দিয়ে প্রহার, খাবার হিসেবে কাঁটাযুক্ত তিতা জাক্কুম ফল, দুর্গন্ধময় পুঁজ-রক্ত, ভীষণ ফুটন্ত পানি, তাতে আরো থাকবে অত্যুষ্ণুবায়ু, কৃষ্ণবর্ণ ধূম্রছায়া ইত্যাদি। তবে জাহান্নামের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তা আগুনে ভরা। তাই জাহান্নামের সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো পাপীদের অগ্নিতে দগ্ধকরণ।

জাহান্নামের আগুনের তিব্রতা নিয়ে মহানবী সা: বলেন, ‘জাহান্নামের আগুনকে এক হাজার বছর প্রজ্ব¡লিত করা হলো তাতে তা লাল বর্ণ ধারণ করল। তারপর তাকে আরো এক হাজার বছর প্রজ্বলিত করা হলো তাতে তা সাদা রূপ ধারণ করল। পুনরায় তাকে আরো এক হাজার বছর প্রজ্ব¡লিত করা হলো তাতে তা কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করল। সেটিই হলো তার (বর্তমান) কৃষ্ণবর্ণ অবস্থা’ (তিরমিজি)।

নবী করিম সা: আরো বলেন, ‘তোমাদের এ পৃথিবীর আগুন তাপের দিক দিয়ে জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ’ (বুখারি-মুসলিম)।

এমন কঠিন অগ্নিতে মানুষ কিভাবে দিনাতিপাত করবে একটু ভাবুন তো! এটি কি কোনো মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব? তবে বাস্তবতা হবে এমনই।

কাফিরদের শাস্তি : কাফির আরবি শব্দ বাংলাতে বলে নাস্তিক। কাফিরদের শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা সে আগুনকে ভয় করো যার জ্বালানি হবে মানুষ এবং পাথর যা কাফিরদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে’ (সূরা বাকারা-২৪)। পাথরে আগুন ধরলে তা আর নিভতে চায় না, ঠাণ্ডা হতে চায় না। মহান আল্লাহ যখন সে জ্বলন্ত অঙ্গারে মানুষ এবং পাথর একত্রিত করে জ্বালাবে তখন সে মানুষটির যন্ত্রণা কেমন হবে? একটু চিন্তা করি তো!

তিনি আরো বলেন- ‘অতএব যারা কাফির, তাদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাথার ওপরে ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে। তাদের (শাস্তির) জন্য রয়েছে লোহার হাতুড়ি। তারা যখনই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবে- দহন শাস্তি আস্বাদন করো’ (সূরা হাজ : ১৯-২২)।

মুশরিকদের শাস্তি : মুশরিক যারা স্র্রষ্টাকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে শরিক স্থাপন করে কল্পিত বিভিন্ন দেব-দেবীর। বাংলাতে তাদের অংশীবাদী বলা হয়। মুশরিকদের পরিণতি নিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- ‘এদের (মুশরিকদের) আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং আগুনে এরা স্থায়ীভাবে বসবাস করবে’ (সূরা তাওবা-১৮)।

 

জাহান্নামের শাস্তি 1 জাহান্নামের শাস্তি | হাদিস শরীফ

উল্লেখ্য, আজ মুসলমানদের মধ্যে দেব-দেবীর পূজা নেই সত্য, তবে মাজার পূজা, কথিত বুজুর্গ ব্যক্তির সিজদা করা, মনের বাসনা সিদ্ধির জন্য দরগাহতে মানত, গাছের গোঁড়ায়, নদীতে মানত- এ ধরনের প্রকাশ্য শিরকের কাজ কোথাও কোথাও প্রচলিত আছে। এ ছাড়া কোথাও কোথাও মুসলিমদের মধ্যে অমুসলিমদের আপত্তিকর রসম-রেওয়াজ,আকিদা-বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে আছে- এ গুলোও প্রকাশ্য শিরক।

মহান আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দেন’ (সূরা নিসা-৪৮)। সুতরাং মুসলমানদের কেউ যদি এমন শিরকে লিপ্ত থাকে তাহলে তাদেরকেও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আবার কেউ বলে অমুকের দয়ায় বা সাহায্যে বেঁচে আছি, অমুক পাশ থেকে সরে গেলে নিষ্কৃতি নেই, অমুক খাওয়ায়, পরায়, উদ্ধার করে এগুলো অপ্রকাশ্য শিরক। মুসলমানদের এসব শিরকের গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে।

জালিমদের শাস্তি : যারা দ্বীন চেনে না তারা মূলত তাদের হাত-পা, চোখ-মুখ তথা শরীরের ওপর জুলুম করে। উপরন্তু এদের অধিকাংশই দ্বীনের পথে দায়ীদের প্রতি চরম জুলুম করে থাকে তাদের শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন- ‘তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুনের শয্যা এবং তাদের ওপরে থাকবে ( ঢেকে দেয়া হবে) আগুনের চাদর। আমি জালিমদের এমনি শাস্তি প্রদান করি’ (সূরা আরাফ-৪১)। ভাবুন তো! এ কেমন অসহ্যকর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি!

মুনাফিকদের শাস্তি : মুশরিকদের থেকে মুনাফিকদের শাস্তি আরো ভয়াবহ। এর কারণ মুনাফিকরা মুখে কালেমার বাণী স্বীকার করেও অন্তরে ইসলামের বিধি-বিধানের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করে। ইসলামের বিনাশ সাধনে অর্থ, শ্রম, মেধা দিয়ে ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করে থাকে। ইসলামের ওপর এদের আঘাত হলো কাফিরদের থেকেও মারাত্মক।

এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে এবং তাদের জন্য তুমি কখনো কোনো সাহায্যকারী পাবে না’ (সূরা নিসা-১৪৫)। নিশ্চয়ই আল্লাহ দোজখের মধ্যে মুনাফিকদের ও কাফিরদের একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (সূরা নিসা-১৪০)। ‘এর (জাহান্নামের) সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্য একেকটি পৃথক দল আছে’ (সূরা হিজর-৪৪)।

 

জাহান্নামের শাস্তি নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুনঃ 

Leave a Comment