জিহ্বা সংযতকরন কুৎসা ও গালমন্দ অধ্যায় আজকের আলোচনার বিষয়। “জিহ্বা সংযতকরন কুৎসা ও গালমন্দ অধ্যায়” ক্লাসটি হাদিস শরীফ [ Hadith Sharif ] এর পাঠ। “জিহ্বা সংযতকরন কুৎসা ও গালমন্দ অধ্যায়” ক্লাসটি, আলিয়া মাদ্রাসার দাখিল [ Alia Madrasa Dakhil ] এর ৯ম শ্রেণী [ Dakhil Class 9 ] এর, হাদিস শরীফ [ Hadith Sharif ] বিষয় এর পাঠ।
জিহ্বা সংযতকরন কুৎসা ও গালমন্দ অধ্যায়
বাক সংযম করা খুব সহজ নয়। কেননা এর কারণে কাল কেয়ামতের মাঠে অনেক মানুষ জাহান্নামী হবে তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার প্রতি খাস রহমত করেছেন, তার জন্য খুবই সহজ। উপরন্ত সে পরকালে সফলকাম হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন কারিমে অসংখ্য জায়গায় মুমিনদেরকে বাকসংযমের নির্দেশ দান করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
অর্থাৎ: অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনম্র,যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত থাকে। (সূরা: আল মু’মিনুন, আয়াত: ১-৩)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا
‘যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়া-কথার সম্মুখীন হলে ভদ্রতার সঙ্গে পরিহার করে অতিক্রম করে। (সূরা: ফুরকার, আয়াত: ৭২)।
مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবৃদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী একজন ফেরেশতা তাদের নিকটে রয়েছে। (সূরা: ক্বাফ, আয়াত: ১৮)।
তিনি আরো বলেন,
وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً
যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সে বিষয়ে অনুমান করে কথা বলো না। কেননা কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় ওদের প্রত্যেকের বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা: বানী ইসরাঈল, আয়াত: ৩৬)।
অন্যত্রে তিনি বলেন,
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
সে দিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, হাত ও পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা: নূর, আয়াত: ২৪)।
জিহ্বা সংযত রাখার জন্য নবী (সা.) এর নির্দেশ: রাসূলুল্লাহ(সা.) এ সম্পর্কে বলেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে নয়তো বা চুপ থাকে।’ (বুখারী হা: ৬০১৮)।
সুফিয়ান বিন আব্দুল্লাহ (আ.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! সব চেয়ে বেশি কোন জিনিসকে আমার ওপর আশংকা করেন তিনি স্বীয় জিহ্বাকে ধারন করে বললেন, ‘এই টাকে।’(তিরমিযী)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘বান্দার ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। আর তার অন্তর সঠিক হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার জিহ্বা সঠিক না হবে ‘ (মুসনাদে আহমাদ)।
আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি আদম সন্তানের অধিকাংশ পাপ তার জিহ্বা দ্বারাই সংঘটিত হয়। (সিলসিলা সহীহ)।
জিহ্বা সংযত রাখার ফজিলত:
জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন: মুসলমানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কে? ‘তিনি (সা.) বলেন যে ব্যক্তির জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদে থাকে।’ (মুসলিম)।
রাসূল (সা.) আরো বলেন,
‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও গুপ্তাঙ্গের জামিন হবে আমি তার জন্য বেহেশতের জামিন হবো।’ (বুখারী হা: ৬৪৭৪)।
জিহ্বা হেফাজত না করার ভয়াবহ পরিণতি:
রাসূল (সা.) বলেন, বান্দা নির্বিচারে এমনও কথা বলে ফেলে যার দরুন সে পূর্ব ও পশ্চিমের সমপরিমাণ স্থান জাহান্নামে নিপতিত হয়।’(বুখারী ও মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ এমনও কথা বলে যাতে সে কোনো ক্ষতি আছে বলে মনেই করে না। অথচ তার দরুন সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়। (সহিহহুল জামে)।
প্রত্যেক প্রভাতে মানব দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে সতর্ক করে: হাদিসে এসেছে, ‘প্রত্যেক প্রভাতে আদম সন্তানের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, যেহেতু আমরা তোমারই অনুগামী। সুতরাং তুমি সোজা হলে আমরা সোজা হই, নচেৎ তুমি টেড়া হলে আমরাও টেড়া হয়ে যাই।’ (সহিহুল জামে)।
জিহ্বার হেফাজত সম্পর্কে সালাফদের মূল্যবান উক্তি:
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তার কসম যিনি ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই। জিহ্বা ছাড়া ভূপৃষ্ঠে আর কোনো বস্তু নেই যাকে দীর্ঘ কারাবদ্ধ (সংযত) রাখার প্রয়োজন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা)।
ইবনে উমর (রা.) বলেন, মুসলিমের জন্য সবচেয়ে সংশোধনযোগ্য অঙ্গ হলো তার জিহ্বা। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা)।
ইমাম শায়েফী (রা.) রাবীকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, হে রাবী! অনর্থক কথা বলো না। যেহেতু তোমার বলে ফেলা কথা তোমাকে এক দিন পাকড়াও করবে। সুতরাং জিহ্বাকে সংযত রাখো।
ওমর বিন আব্দুল আযীয (রা.) বলেন, হৃদয় হলো রহস্যের সিন্দুক, ওষ্ঠাধার হলো তার তালা, আর জিহ্বা হলো তার চাবি। অতএব, প্রত্যেকের উচিত, নিজের গুপ্ত রহস্যের (গুপ্ত ভাণ্ডারের) চাবি হেফাজত রাখা, কেন না মানুষের প্রকৃত পরিচয় গোপন থাকে তার জিহ্বায়।
ইবনুল কাইয়্যুক (রা.) বলেন: মানুষের জন্য মদ্য পান, চুরি যিনা, জুলুম, হারাম ভক্ষণ করা ও অবৈধ দৃষ্টিপাতসহ আরো অন্যান্য বিষয়ে নিজেকে হেফাজত করা খুবই সহজ। কিন্তু জিহ্বাকে সংযত করা তার জন্য অনেক কঠিন ব্যাপার। আপনি অনেক লোককে দেখতে পাবেন যে, তারা অশ্লীনতা ও জুলুম থেকে বেঁচে থাকে কিন্তু তাদের জি্বো সর্বদা মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদের মান-সম্মান নষ্ট করতেও পরোয়া করে না।’
জিহ্বা সংযতকরন কুৎসা ও গালমন্দ অধ্যায় নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ