জোট-আহজাব গঠন | খন্দকের যুদ্ধ-১, কুরাইশদের সঙ্গে জোট বাঁধার বিষয়ে সফল আলোচনার পর বনু নাদির আরব উপদ্বীপের উত্তর দিকের বৃহত্তম উপজাতি গাতাফানের কাছে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় । কিন্তু গাতাফানের লোকেরা এই বিরোধে জড়াতে আগ্রহ দেখায় না; কারণ তারা বাণিজ্যপথের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। ইহুদিরা তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণে রাজি করানোর এই বলে লোভ দেখায় যে, তারা এই যুদ্ধে অংশ নিলে তাদের পুরো এক বছরের জন্য খায়বারের অর্ধেক ফসল দিয়ে দেওয়া হবে।

এ ছিল বিপুল পরিমাণ সম্পদ। গাতাফান ছিল সংস্কৃতহীন ও বর্বর হিসেবে পরিচিত একটি বেদুইন উপজাতি। ব্যাপারটা ছিল উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক: গাতাফান পাবে অর্থ, আর ইহুদিরা পাবে যুদ্ধজোটে এক বর্বর উপজাতির অংশগ্রহণ। আসলে ব্যাপারটা দাঁড়াল, ইহুদিরা অর্থ দিয়ে গাতাফানের সৈন্যসামন্ত ভাড়া করতে করল।
জোট-আহজাব গঠন | খন্দকের যুদ্ধ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
গাতাফানের পর কুরাইশরা আশেপাশের কয়েকটি ছোট গোত্রের কাছে সমর্থন চেয়ে দূত পাঠায়। যেমন বনু আসাদ, বনু সুলায়েম, বনু মুররা, বনু আসজা, বনু কিনানা ইত্যাদি। এই গোত্রগুলোও কুরাইশদের মতো সিরিয়ার বাণিজ্যপথ বন্ধ হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই গোত্রগুলো অস্ত্র, ঘোড়া, যোদ্ধা ইত্যাদি দিয়ে যুদ্ধজোটে অংশ নিতে রাজি হয়। আসলে ইসলামকে চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় তাদের সকলেরই কিছু না কিছু স্বার্থ জড়িত ছিল। তবে অন্যতম কারণ ছিল এই নতুন ধর্মের প্রতি ঘৃণা ।

ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেছেন, কুরাইশের নেতৃত্বে মুসলিমবিরোধী জোট বা আহজাৰ প্ৰায় ১০ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহ করেছিল। অন্যদিকে মুসলিমদের মধ্যে যোদ্ধা ছিলেন সর্বোচ্চ আড়াই হাজার। অর্থাৎ আহজাবের আকার ছিল মুসলিমদের তুলনায় কমপক্ষে তিন-চার গুণ বড়। আরবের ইতিহাসে এর আগে কখনও এমনটি ঘটেনি; আগে কখনই ১০-১৫টির বেশি গোত্র একত্রিত হতে পারেনি।
এতগুলো উপজাতি ও গোত্রের সমন্বয়ে গঠিত আহজাবের নেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় আবু সুফিয়ানকে। কারণ সে ছিল একজন জ্যেষ্ঠ সেনাপতি ও সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। আহজাব গঠনের পর যুদ্ধ অভিযানে অংশ নিতে গাতাফান, কুরাইশ, বনু নাদিরসহ জোটের অন্য দলগুলো মদিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। আৰু সুফিয়ান সবাইকে পূর্বনির্ধারিত একটি স্থানে সমবেত হতে আগেই বলে রাখে।
আরও পড়ুনঃ