তায়েফ যাওয়ার সিদ্ধান্ত | তায়েফের ঘটনা, আবু তালিবের মৃত্যুর পর আবু লাহাব গোত্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে নবিজিকে (সা) সুরক্ষা দেওয়া শুরু করে। কিন্তু আবদুল মুত্তালিবের পরিণতি কী হবে এ বিষয়ে আবু জেহেলের উস্কানিতে সে সুরক্ষা তুলে নেয়। এর ফলে নবিজির (সা) জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলে তিনি মক্কা ত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করেন। লক্ষ করুন, এর আগের ১০ বছরে মক্কা ত্যাগের কথা তাঁর কল্পনায়ও আসেনি। কিন্তু রাজনৈতিক সুরক্ষা চলে যাওয়ার পর সেখানে থাকা তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। কেবল তখনই তিনি মক্কা ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনায় নেন।

তায়েফ যাওয়ার সিদ্ধান্ত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
সিরাহের এই ঘটনা থেকে আমরা যে শিক্ষাটি নিতে পারি তা হলো, কোনো ব্যক্তির পক্ষে যতদিন সম্ভব নিজের সমাজে ও সম্প্রদায়ের মধ্যেই থাকা উচিত নবিজির (সা) পক্ষে যখন সেটা একেবারেই অসম্ভব হয়ে উঠেছিল, শুধু তখনই তিনি নিজের শহর মক্কা ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছিলেন। নবিজি (সা) তায়েফে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তায়েফকে বেছে নেওয়ার অনেক কারণ ছিল:

(১) তায়েফ ছিল মক্কার নিকটবর্তী সবচেয়ে বড় শহর। প্রকৃতপক্ষে, তায়েফ ও মক্কা ছিল দুটি ‘টুইন’ শহরের মতো। তাদের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর: যেমন সৌহার্দপূর্ণ, তেমনই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণও। ভৌগোলিকভাবে কাছে হওয়ায় খুব বেশি শত্রুতার সম্পর্ক কোনো পক্ষের জন্যই ভালো ছিল না। আসলে, তাদের মধ্যে একটা শান্তিচুক্তি হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে মক্কা ও তায়েফকে ‘দুটি জনপদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন: “আর এরা বলে, ‘কোরান কেন অবতীর্ণ হলো না দুই জনপদের (মক্কা ও তায়েফ) কোনো প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির ওপর।” [সুরা জুখরুফ, ৪৩:৩১ )
২) শহর দুটি খুব কাছাকাছি হওয়ায় তাদের অধিবাসীদের মধ্যে ভালো জানাশোনা ছিল, এমনকি বৈবাহিক সম্পর্কও ছিল। তায়েফের এক গোত্রপ্রধান নবিজির (সা) দূর সম্পর্কের এক ফুপুকে বিয়ে করেছিলেন। সে হিসেবে নবিজির (সা) সঙ্গে তায়েফবাসীর এক আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তিনি যদি তায়েফে না গিয়ে দূরের কোনো অচেনা শহরে যেতেন, তাহলে সেখানকার অধিবাসীদের কাছে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করা এমন সহজ হতো না, যতটা তায়েফে হয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ