অলৌকিক কিছু ঘটানোর জন্য নবিজিকে সা চ্যালেঞ্জ | কুরাইশদের বিরোধিতা-১, কুরাইশরা নবিজিকে (সা) অলৌকিক কিছু করে দেখানোর জন্য চ্যালেঞ্জ জানাল। তারা দাবি করল, তাঁকে এমন কিছু করে দেখাতে হবে যা চাক্ষুষ দেখা যায়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এরকম বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন।
অলৌকিক কিছু ঘটানোর জন্য নবিজিকে সা চ্যালেঞ্জ | কুরাইশদের বিরোধিতা-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
“আর তারা বলে, ‘আমরা তোমার ওপর ইমান আনব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি থেকে একটি প্রস্রবণ সৃষ্টি করতে পারবে; অথবা তোমার খেজুরের বা আঙুরের বাগান (তৈরি) হবে যার মধ্য দিয়ে অজস্র নদীনালা বইয়ে দেবে। অথবা যেমন করে তুমি (কেয়ামত দিবসে এসব ঘটবে বলে) মনে কর, সে অনুযায়ী (এখনই) আকাশকে টুকরো টুকরো করে আমাদের ওপর ফেলে দেবে, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে, অথবা তোমার জন্য একটি স্বর্ণের তৈরি বাড়ি হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে; কিন্তু আমরা তোমার আকাশে আরোহণ করাকেও বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না তুমি (আকাশ থেকে) আমাদের পড়ার জন্য একটি কিতাব নিয়ে আসবে।
(হে নবি) বলো, “মহান পবিত্র আমার প্রতিপালক! আমি তো কেবল (তাঁর পক্ষ থেকে আসা ) একজন সুসংবাদদাতা রসুল বই কিছুই নই?’” [সুরা বনি ইসরাইল, ১৭:৯০-৯৩] প্রশ্ন আসতে পারে, কেন আল্লাহ তাঁর রসুলের (সা) মাধ্যমে কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেননি? প্রথমত, আল্লাহ কিন্তু তাদের কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল চাঁদের বিভাজন। যখন আল্লাহ তায়ালা তা করে দেখিয়েছিলেন, তখন তারা এটাকে স্রেফ জাদু বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।
কোরানে এর উল্লেখ আছে এভাবে: “কেয়ামত আসন্ন, আর চাঁদ বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (কাফেরদের অবস্থা হচ্ছে) তারা কোনো নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর বলে, ‘এ তো চিরাচরিত জাদু | সুরা কমর, ৫৪:১-২] দ্বিতীয়ত, পবিত্র কোরানই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সবচেয়ে বড় অলৌকিক ঘটনা। তৃতীয়ত, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানতেন, তারা শুধু একগুঁয়েমি ও অহংকার থেকে এগুলো জিজ্ঞেস করছে।
এটা প্রমাণিত সত্য যে যখন তাদের কোনো অলৌকিক ঘটনা দেখানো হয়, তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করে (যেমন, চাঁদের বিভাজন)। আল্লাহ কোরানে বলেছেন, “আমি তাদের (কাফেরদের) কাছে ফেরেশতা পাঠালেও এবং মৃত ব্যক্তিরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সব জিনিস তাদের সামনে হাজির করলেও তারা ইমান আনবে না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।” [সুরা আনআম, ৬:১১১] চতুর্থত, আল্লাহ তায়ালা এত ছোটোখাটো বিষয়ের অনেক উর্ধ্বে; যখন যে যা চাইবে সঙ্গে সঙ্গেই তা পাবে এমন কোনো কথা নেই। আল্লাহ তায়ালা যথেষ্ট লক্ষণ রেখে দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তি চাইলে সেগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে।
পঞ্চমত, আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। আর তা কেউ প্রত্যাখ্যান করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সহিহ বুখারির বর্ণনা অনুসারে, একবার তারা নবি করিমের (সা) কাছে গিয়ে সাফাকে সোনায় রূপান্তরিত করার জন্য অনুরোধ করে। নবিজি (সা) তাদের আন্ত রিক ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পেরে তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করার জন্য আল্লাহর কাছে একটি বিশেষ দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা জিব্রাইলকে (আ) নবিজির (সা) কাছে পাঠিয়ে বলেছিলেন, “তুমি যদি চাও তবে আমি সাফাকে সোনায় রূপান্তর করব। কিন্তু তারা যদি পরবর্তীতে তোমার নবুয়তে অবিশ্বাস করে, তবে তাদের আর সুযোগ দেওয়া হবে না।”
নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে এটি একটি নগণ্য বিষয়। যদি তারা অধীকার করে তবে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি নেমে আসবে। এটা তামাশা নয়। নবিজি (সা) বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা না হওয়াই ভালো। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে কমপক্ষে ২০টি আয়াত রয়েছে। যেমন: “পূর্ববর্তীরা নিদর্শন অস্বীকার করায় আমি নিদর্শন প্রেরণ করা বিরত রাখি।”
[সুরা বনি ইসরাইল, ১৭:৫৯] থেকে নিজেকে “আর তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের কাছে যদি কোনো নিদর্শন আসে তাহলে অবশ্যই তার ওপর ইমান আনবে। তুমি বলো, ‘নিদর্শন তো আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। আর তুমি কি জান যে, নিদর্শন এলেও তারা কিন্তু ইমান আনবে না।” [সুরা আনআম, ৬:১০৯] এখানে দেখা যাচ্ছে, নবিজিকে (সা) জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে অলৌকিক কিছু না দেখানোর কারণ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসুলকে (সা) কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন, আবার অন্য কিছু বিষয়ে রসুলের (সা) অনুরোধ অগ্রাহ্য করেছেন।
আরো পড়ুনঃ