মহানবি মুহাম্মদের (সা) নিকটতম পূর্বপুরুষ : কুসাই ও আবদ মানাফ | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর, আমরা মহানবি মুহাম্মদের (সা) নিকটতম পূর্বপুরুষদের মধ্যে যাঁদের সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি তথ্য জানা আছে তাঁদের নিয়ে আলোচনা করব। শুরুতেই আলোচনা করব কুসা’ই, তারপরে আবদুল মানাফ, এরপরে হাশিম এবং সব শেষে আবদুল মুত্তালিব সম্পর্কে।

Table of Contents
মহানবি মুহাম্মদের (সা) নিকটতম পূর্বপুরুষ : কুসাই ও আবদ মানাফ | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
কুসাই
‘ছোট কুরাইশ’ নামে খ্যাত কুসাই ছিলেন বংশের অন্যতম তারকা, তাঁর সময়েই কুরাইশদের উত্থান শুরু হয়েছিল। মুহাম্মদের (সা) জন্মের সময় কুরাইশরা যে তাদের খ্যাতি ও সম্মানের শীর্ষে ছিল সেটার শুরু ওই কুসা’ইয়ের সময় থেকেই। তার পাঁচ প্রজন্ম পরে মুহাম্মদ (সা) বংশের মর্যাদাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান।
কুসা’ইয়ের জন্ম আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, মুহাম্মদের (সা) জন্মের প্রায় ১৭০ বছর আগে। কুসা’ইয়ের কীর্তিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মক্কা শহরের রাজনৈতিক ক্ষমতা কুরাইশদের বংশধরদের কাছে ফিরিয়ে আনা। সে সময় মক্কার কর্তৃত্ব ছিল খুজা উপজাতির হাতে। তারা ছিল ইসমাইলের (আ) বংশধরদের আরেকটি শাখা (যারা ফিহরের বংশধর নয়)। তারা এক সময় মক্কা শহরের আধিপত্য নিয়ে নিয়েছিল। কথিত আছে, ইসমাইল (আ) প্রাচীন আরবের ‘জুরহুম’ গোত্রের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন।
জুরহুমরা এক সময় মক্কায় কর্তৃত্ব করত। সে সময় তারা প্রজাদের উপর অত্যাচার করত এবং অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিত বলে খুজা উপজাতি তাদের এবং ফিহরের অন্যান্য বংশধরদের বিতাড়িত করে মক্কা শহর করায়ত্ত করে। তখন থেকে ফিহরের বংশধরেরা (অর্থাৎ কুরাইশরা ) মক্কার বাইরের একটি ছোট্ট ছাউনিতে বাস করছিল।

তাহলে কু’সাই কীভাবে খুজা উপজাতির কাছ থেকে মক্কার কর্তৃত্ব পুনরায় দখল করে নিয়েছিলেন? তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত একটি কৌশলের আশ্রয় নেন: তিনি খুজাদের সর্দারের মেয়েকে বিয়ে করে জামাতা হিসেবে সেই পরিবারের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি খুজা উপজাতির মধ্যে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা ও সক্ষমতার প্রমাণ দিতে থাকেন। এভাবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে, সর্দার মারা যাওয়ার পর খুজার লোকেরা সর্দারপুত্রদের মধ্য থেকে কাউকে নয়, বরং সরদারের জামাতা কুসা’ইকেই নেতা হিসেবে বেছে নেয়।
তারপর অন্য গোত্রগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় তিনি ফিহরের বংশধরদের (অর্থাৎ কুরাইশ উপজাতিকে) অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ফিহরের বংশধরদের সাহায্য নিয়ে খুজার গোত্রগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিলেন। ধারণা করা হয় যে, এই একত্রিত হওয়া লোকদের কারণেই তাদেরকে ‘কুরাইশ’ বলা হয়। এভাবেই এক সময় তিনি খুজা উপজাতিকে বহিষ্কার করে তাঁর নিজের বংশ কুরাইশদের সঙ্গে নিয়ে ম নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
কুসাই মক্কায় ‘দারুল নাদওয়া গঠন করেছিলেন, যেটাকে এখনকার যুগের পার্লামেন্টের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সমাজের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার বিধান তিনিই প্রথম চালু করেন। তিনি কাবার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। তিনি কাবার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বগুলো কয়েক ভাগে ভাগ করে একটি তালিকা তৈরি করেন; যেমন পানীয় জলের সরবরাহ, আতিথেয়তার দায়িত্ব, কাবার চাবিগুলোর সংরক্ষণ ইত্যাদি। তিনি বেঁচে থাকা পর্যন্ত কাবার সব দায়িত্বই তাঁর কাছে ছিল, যা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
কুসা’ই-ই মক্কায় আগত হাজিদের যত্ন নেওয়ার কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন। সেখানে হাজিরা বিনামূল্যে খাবার ও পানি পেতেন, যে ব্যবস্থা আগে ছিল না। প্রতিটি হজের মওসুমে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে তহবিল সংগ্রহ করতেন। তিনি বলতেন, “হে কুরাইশ সম্প্রদায়। আল্লাহ তোমাদের তাঁর গৃহের যত্ন নেওয়ার নেয়ামত দান করেছেন। এই হাজিরা আল্লাহর অতিথি, আমাদের আতিথেয়তা তাঁদের প্রাপ্য।” এই মহৎ উদ্যোগে মক্কার লোকেরা অর্থ, খাদ্য ও পানি দিয়ে সাহায্য করত, যা তিনি হাজিদের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা করতেন।
এছাড়া, কুসা’ই সহজভাবে হজ পালন করার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি হাজিনের জন্য মুজদালিফায় আগুনের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সেখানে পানি সরবরাহের জন্য একটি কূপ খনন করেছিলেন। এখানে মনে রাখতে হবে, কুসা’ইয়ের সময় জমজম ছিল না। যখন খুজা সম্প্রদায় জুরহুম গোত্রকে আক্রমণ করেছিল এবং জুরহুমরা বুঝতে পেরেছিল যে তারা হারতে চলেছে, তখন তারা (জুরহুমরা) জমজমের কূপটি ঢেকে বন্ধ করে দিয়েছিল।
খুঁজারা অনেক চেষ্টা করেও কূপটি আর খুঁজে পায়নি। তারপর থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মক্কার লোকেরা অন্যান্য উৎস থেকে পানির ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছিল। কুসা’ইয়ের মৃত্যুর পর তাঁকে হুজুন নামক এক স্থানে কবর দেওয়া হয়েছিল। আজ অবধি হুজুন মক্কা শহরের অন্যতম বিখ্যাত কবরস্থান।
আবদ মানাফ
আলোচনা করব কুসাইয়ের পুত্র আবদ মানাফ সম্পর্কে। আবদ মানাফের আসল নাম ছিল মুগিরা। মানাফ অর্থ ‘যা উত্থিত হয়েছে। আবদ মানাফ ছিলেন। একজন সুদর্শন পুরুষ। তিনি নেতৃত্বের দক্ষতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। পিতার জীবদ্দশাতেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। আবদ মানাফের ওপর অনেক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। তিনি সাধারণ মানুষের প্রিয়পাত্র ছিলেন।
আরো পড়ুনঃ