ফিকহের বিধানের ক্ষেত্রে হুদায়বিয়ার ঘটনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ফিকহের বিধানের ক্ষেত্রে হুদায়বিয়ার ঘটনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৫, ক. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিকহ বিধান হলো, আমরা আমাদের ঘোরতর শত্রুর সঙ্গেও শান্তিচুক্তি করতে পারি। নিঃসন্দেহে কুরাইশরা ছিল মুসলিম উম্মাহর জঘন্যতম শত্রু। তারা ছাড়া আর কেউ আল্লাহর রসুলের সরাসরি বিরোধিতা করেনি। এমনকি তারা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল। এর চেয়ে বড় শত্র “তা আর কী হতে পারে? তারপরও নবিজি (সা) তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, শান্তিচুক্তি করেছেন ।

তবে শান্তিচুক্তির মেয়াদ ১০ বছর হবে কি না তা নিয়ে পণ্ডিতদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম শাফেয়ি বলেছেন, যে কোনো চুক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য হতে পারে, তা নবায়ন করার সুযোগও থাকতে পারে। ইমাম আবু হানিফার মতে, নবিজি (সা) হুদায়বিয়ার চুক্তিটি ১০ বছরের জন্য করলেও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে চুক্তির মেয়াদ কম বা বেশি করা যেতে পারে – তবে এটিই অধিকাংশ পণ্ডিতের মত। আবার ড. ওয়াহবা আল-জুহায়লি ও শায়েখ ইউসুফ আল- কারাদাউয়ির মতো কিছু আধুনিক পণ্ডিতের মতে, পরিস্থিতির প্রয়োজনে স্থায়ী শান্তিচুক্তিও হতে পারে।

ফিকহের বিধানের ক্ষেত্রে হুদায়বিয়ার ঘটনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ফিকহের বিধানের ক্ষেত্রে হুদায়বিয়ার ঘটনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

খ. কেউ যদি কোনো কারণে হজ বা ওমরার জন্য যাত্রা করে শেষ পর্যন্ত তা করতে না পারে, তবে সে যেখানে বাধা পাবে সেখানেই থামতে হবে, প্রাণী কোরবানি করতে হবে, মাথা কামাতে হবে বা চুল ছোট করতে হবে, তারপর সে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করতে পারবে।

গ. যুক্তিযুক্ত কারণ থাকলে ইহরামের পোশাক বদলে অন্য কোনো পোশাক পরা যেতে পারে। হুদায়বিয়ার যাত্রায় কাব ইবনে উজরা নামের একটি সাহাবি ত্বকের অসুখে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নবিজি (সা) তাঁকে দেখতে গিয়ে বলেন, “তোমার অবস্থা যে এতটা খারাপ তা আমাকে বলনি কেন? তোমার মাথা কামিয়ে নাও, তারপর ‘ফিদিয়া’ {২} দিয়ে দাও।” অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য অন্য পোশাক পরা যাবে, যদি আপনি ফিদিয়া দিয়ে দেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ঘ. বিশ্বাসযোগ্য কোনো ব্যক্তি পৌত্তলিক হলেও তার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে । ইবনুল কাইয়িমের বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) বুসর ইবনে সুফিয়ান আল-খুজাই নামের যে স্কাউটকে মক্কার কুরাইশদের যুদ্ধপরিকল্পনার খবর নিতে পাঠিয়েছিলেন সে ছিল পৌত্তলিক। তবে কারও কারও মতে সে ছিল নতুন ধর্মান্তরিত মুসলিম। যা-ই হোক না কেন, হিজরত ও ওহুদের যুদ্ধের উদাহরণ থেকেও আমরা এই একই শিক্ষা পেতে পারি।

ঙ. কোনো চুক্তির কথা আক্ষরিকভাবে বোঝার অনুমতি রয়েছে, এমনকি তার অর্থ চুক্তির মর্মকথার পরিপন্থি হলেও। এর উদাহরণ উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা ও আবু বাসিরের ঘটনা। চুক্তির অক্ষরে মানুষ বা ব্যক্তি বোঝাতে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আক্ষরিক অর্থ বিবেচনায় নিয়ে নবিজি (সা) উম্মে কুলসুমকে কুরাইশদের কাছে ফেরত পাঠাননি।

 

ফিকহের বিধানের ক্ষেত্রে হুদায়বিয়ার ঘটনা | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

চ. কঠিন অসুবিধা বা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সময় (যেমন টর্নেডো, তুষারঝড় ইত্যাদি) জামাতে ফরজ নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতে হবে না। হুদায়বিয়ার ঘটনার সময় একদিন প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সেই রাতে মুসলিমরা মাগরিব ও এশার নামাজ জামাতে আদায় করেননি। এমনকি, মুয়াজ্জিন আজানে ‘হাইয়া আলা আস-সালাহ, হাইয়া আলা আল-ফালাহ’ (নামাজের জন্য এসো, কল্যাণের জন্য এসো) পরিবর্তন করে বলেছিলেন, ‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ (আপনারা তাঁবুর ভেতরে প্রার্থনা করুন)। বর্তমান সময়েও যদি কোনো কারণে মসজিদে যেতে নিষেধ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে ‘হাইয়া আলা আস-সালাহ, হাইয়া আলা আল-ফালাহ’ না বলে ‘সাল্লু ফি বুইউতিকুম’ (আপনার বাড়িতে নামাজ পড়ুন)বলা হয় । 

ছ. অতিরিক্ত ঘুমের জন্য ফজরের নামাজ পড়তে না পারলে ঘুম থেকে উঠে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা আদায় করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment