বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার ঘটনা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার ঘটনা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব, আনাস ইবনে মালিক (রা) ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। শিশু মুহাম্মাদের (সা) যখন চার বছর বয়স, তখন তিনি একদিন তাঁর সঙ্গীদের সাথে খেলাধুলা করছিলেন। এমন সময় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) সেখানে এসে উপস্থিত হন। জিব্রাইল (আ) তাঁকে একটু নির্জনে নিয়ে গিয়ে চিৎ করে শুইয়ে দেন এবং তাঁর বুক চিড়ে হৃৎপিণ্ডটি বের করে আনেন। হৃৎপিণ্ডের মধ্য থেকে কিছু জমাট রক্ত বের করে এনে মুহাম্মদকে (সা) বলেন, ‘শয়তানের যে অংশটি আপনার মধ্যে ছিল তা হচ্ছে এই।’ তারপর তিনি তা ছুড়ে ফেলে দেন।

আসলে, যখন কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করে, শয়তান তখন হিংসা ও ক্রোধের বশে তাকে খোঁচা দেয়। নবিজি (সা) বলেছেন, এ কারণেই শিশুরা মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়েই কেঁদে ওঠে। মানবশিশু পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে শয়তান দুলর বশবর্তী হয়ে তার ক্ষতি করতে চায়। আল্লাহ মানুষকে খাঁটি ও নিষ্পাপ হিসেবে সৃষ্টি করেন। কিন্তু শয়তান একদম প্রথম মুহূর্ত থেকেই তাকে বিভ্রান্ত ও কলুষিত করার কাজে নেমে পড়ে। সম্ভবত এখান থেকেই ওয়াসওয়াসা’ (ফিসফিস করে কুমন্ত্রণা) কথাটি এসেছে।

 

বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার ঘটনা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার ঘটনা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তবে মনে রাখতে হবে, শয়তান কখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বা জোর করে আমাদের দিয়ে কিছু করাতে পারে না। পবিত্র কোরান থেকেই আমরা জানি যে বিচারের দিন শয়তান মানবজাতির উদ্দেশে বলবে “আমার তো তোমাদের ওপর কোনো আধিপত্য ছিল না। আমি কেবল তোমাদের আহ্বান করেছিলাম, আর তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। অতএব তোমরা আমাকে দোষারোপ করো না, তোমরা বরং নিজেদের প্রতি দোষারোপ করো।” [সুরা ইব্রাহিম, 14:22 ] যদি আমাদের মনে খুব খারাপ কোনো বিষয় বা ধারণা আসে, তাহলে বুঝতে হবে যে তা শয়তানের কাছ থেকে এসেছে। আমাদের কাজ হলো শয়তানের ওই কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এটাই আমাদের জন্য পরীক্ষা। মনে রাখবেন, শয়তান আপনাকে কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, সে ফিসফিস করে কুমন্ত্রণা দিতে পারবে।

সুতরাং শয়তানের ওই অংশটি নবিজির (সা) মধ্য থেকে তাঁর চার বছর বয়সে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। একটি হাদিসে আছে, নবিজি (সা) বলেছেন, “প্রত্যেক মানবশিশু জন্মগ্রহণের পরে শয়তান (ইবলিস) তাদের জন্য একজন করে কারিন’ নিযুক্ত করে।” সেই কারিন আমাদের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকে, এবং সে অন্য যে কারও চেয়ে আমাদের ভালো চেনে। তার একমাত্র কাজই হলো আমাদেরকে ফিসফিস করে কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজ করতে প্রলুব্ধ করা। এভাবেই শয়তান ঈর্ষা ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদেরকে ভুল পথে চালিত করার জন্য তার পুরো জীবনটা ব্যয় করে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আল্লাহ যে মানুষকে মর্যাদায় ইবলিসের ওপরে স্থান দিয়েছেন, সেটাই আমাদের প্রতি তার এই অপরিসীম ঘৃণার কারণ। সাহাবিরা নবি করিমকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিলেন করলেন, ”এমনকি আপনার সাথেও [কারিন আছে?” নবিজি (সা) জবাবে বলেছিলেন, “এমনকি আমার সাথেও আছে। তবে আল্লাহ আমাকে তার বিরুদ্ধে (জয়ী হতে) সাহায্য করেছেন। এখন সে ইসলাম গ্রহণ করেছে, এবং আমাকে কেবল ভালো ভালো কথাই বলে থাকে।” এ থেকে দেখা যায়, নবিজির (সা) মধ্যে শয়তানের সম্পর্কের কোনো অস্তিত্বই আর নেই।

জিব্রাইল (আ) শিশু মুহাম্মদের (সা) বুক চিড়ে হৃৎপিণ্ড বের করে আনলে অন্য শিশুরা ভয় পেয়ে দৌড়ে চলে যায়। কিন্তু মুহাম্মদ (সা) কষ্ট পেলেও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। জিব্রাইল (আ) তাঁর হৃৎপিণ্ড একটি সোনার অঙ্কুরিতে রেখে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন, তারপর আবার তা যথাস্থানে সন্নিবেশিত করে কাটা অংশ জোড়া লাগিয়ে দেন। [বলা যায়, পৃথিবীতে প্রথম ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ জিব্রাইল (আ) করেছিলেন নবি করিমের (সা) ওপর; কারণ তা শরীর থেকে হৃৎপিণ্ড বের করার মাধ্যমেই করা হয়েছিল।

মুহাম্মদকে (সা) এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁর ভাই ও বোন শায়মা দৌড়ে গিয়ে হালিমাকে চিৎকার করে বলে, “আমাদের ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে!” হালিমা ও তাঁর স্বামী একথা শুনে খুবই উদ্বিগ্ন ও অস্থির হয়ে সেখানে ছুটে গিয়ে দেখতে পেলেন, মুহাম্মদ (সা) মলিন ও ফ্যাকাশে মুখে বসে আছেন। লক্ষ করুন, তিনি কিন্তু চিৎকার করছিলেন না বা কাঁদছিলেন না। তবে তিনি কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় নবিজি (সা) অল্প বয়সেও কত সাহসী ছিলেন। সে সময় তাঁরা (হালিমা ও তাঁর স্বামী) শিশু মুহাম্মদের (সা) বুকে একটি রেখা দেখতে পেয়েছিলেন।

 

বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার ঘটনা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

পরবর্তী সময়ে আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন, “আমি তাঁর বুকে একটি চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলাম।” নধি করিমের (সা) বয়স যখন ৬০ বছরের মতো, তখন আনাস (রা) এই কথা বলেছিলেন । আরও লক্ষ করুন, আল্লাহ ইচ্ছা করলে নবিজির (সা) দেহে কোনো চিহ্ন নাও রাখতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে ঘটনাটি দৈহিকভাবেই ঘটেছিল। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, বক্ষ উন্মুক্ত করার ঘটনা আরেকবার ঘটেছিল তখন থেকে আরও প্রায় ৪৫ বছর পর, যখন নবি করিম (সা) ইসরা ও মিরাজের রাতে যাত্রা করেছিলেন। আমরা ২১তম পর্বে এই বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিতভাবে বলব ।

বক্ষ উন্মুক্ত করার ঘটনায় হালিমা উদ্বিগ্ন হয়ে শিশু মুহাম্মদকে (সা) তাঁর মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মহানবি মুহাম্মদকে (সা) বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানজনক জীবনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। এর কারণ হলো, আল্লাহ তাঁর সকল নবি-রসুলকে বড় ধরনের পাপ থেকে মুক্ত রাখেন। তাঁরা ছোটোখাটো ভুলে জড়িয়ে পড়তে পারেন; যেমন: মুসার (আ) মতো সাময়িকভাবে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে পড়া কিংবা ইউনুসের (আ) মতো তাড়াহুড়ো করে কাজ করা।

তবে তাঁরা কখনোই বড় ধরনের পাপ করতে পারেন না।সুতরাং বক্ষ উন্মুক্ত করার ব্যাপারটি ছিল মহানবিকে (সা) আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র করার একটি প্রক্রিয়া, যা শারীরিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল । পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেছেন, “আমরা কি তোমার (জ্ঞান ধারণের জন্য) বক্ষ উন্মুক্ত (বা প্রশস্ত) করিনি?” [সুরা ৯৪:১] সংখ্যাগরিষ্ঠ স্কলারের মতে, এই আয়াতটিতে নবি করিমের (সা) বক্ষ উন্মুক্ত করার ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অন্য কিছু মত অনুসারে, আয়াতটিতে নবিজিকে (সা) ইসলামের দিকে পরিচালিত করার বিষয় বোঝানো হয়েছে। 

আরো পড়ুনঃ

মুহাম্মাদ

Leave a Comment