আল-মুরাইসি / বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান, পরবর্তী বড় ঘটনাটি হলো আল-মুরাইসি অথবা বনু ‘আল-মুস্তালিকে অভিযান। এখানে দুটি নাম বলা হচ্ছে: আল-মুরাইসি অভিযানের স্থানের নাম, আর বনু ‘আল-মুস্তালিক গোত্রের নাম।
আল-মুরাইসি / বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | আল-মুরাইসি ও বনু আল-মুস্তালিকের অভিযান | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

বনু আল-মুস্তালিক গোত্রটি মুরাইসি নামের একটি পুকুরের পাড়ে বাস করত। এই জলাধারটি মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল। বনু আল- মুস্তালিকের কাছে ছিল ‘মানাত’ নামের আরবের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিমা। আল-লাত, উজ্জা ও মানাত ছিল ইসলাম-পূর্ব আরবের প্রধান তিনটি প্রতিমা, যা পবিত্র কোরানেও বর্ণিত আছে।
বনু ‘আল-মুস্তালিক জাহেলি যুগে আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল। ফলে কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করার সময় বনু ‘আল-মুস্তালিক মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুরাইশদের পক্ষ অবলম্বন করে। তারা ওহুদ যুদ্ধেও কুরাইশদের সাহায্য করেছিল। তাছাড়া তাদের ভৌগোলিক অবস্থানও ছিল কুরাইশের জন্য একটি সুবিধাজনক ও সুরক্ষিত এলাকা; মদিনা থেকে খুব বেশি দূরে নয়, মাত্র এক-দুদিনের যাত্রাপথ।

ওহুদে মুসলিমদের ‘পরাজয়ের’ সংবাদ পাওয়ার পর বনু ‘আল-মুস্তালিকের নেতা হারিস ইবনে আবি দিরার মুসলিমদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে। কারণ, অন্য কিছু ছোট গোত্রের মতো তারাও মুসলিম ও কুরাইশদের মধ্যকার বিরোধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। নবিজি (সা) প্রথমেই খবরটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বুরায়দা ইবনুল হুসায়েব নামের এক সাহাবিকে মুরাইসিতে পাঠালেন। বুরায়দা বেদুইনের বেশ ধরে হারিস ইবনে আবি দিরারকে গিয়ে বললেন, “আমি শুনেছি আপনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে যাচ্ছেন। আমি সেই অভিযানে যোগ দিতে চাই, যাতে আমি যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ভাগ পেতে পারি।” এটি ছিল একটি কৌশল মাত্র। যেহেতু বুরায়দা ছিলেন একজন যোদ্ধা, তাই হারিস খুশি হয়ে বলল, “হ্যাঁ, কথাটা সত্য। তুমি আমাদের সাথে যোগ দিতে পার।”
সেই রাতেই বুরায়দা পালিয়ে গিয়ে নবিজিকে (সা) সব বৃত্তান্ত জানালেন । নবিজি (সা) খবরের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আর দেরি না করে ৩০ জন সুসজ্জিত অশ্বারোহীসহ ৭০০ জনের একটি বাহিনী গঠন করলেন। তাঁরা আল-মুস্তালিকের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে অনেকটা ‘ওয়াকওভার’ পাওয়ার মতো একটি সহজ বিজয় ছিনিয়ে নেন।
আবদুল্লাহ ইবনে উবাইসহ অনেক মুনাফেকও মুরাইসির অভিযানে অংশ নিয়েছিল। উল্লেখ্য, এই মুনাফেকরা সবাই বদর, ওহুদ ও অন্য সব যুদ্ধেই অনুপস্থিত ছিল। এই অভিযানে তাদের অংশ নেওয়ার কারণ হলো, একটি ছোট গোত্রের বিরুদ্ধে এই অতর্কিত আক্রমণে বড় ধরনের লড়াইয়ের সম্ভাবনা ছিল না।
আরও পড়ুনঃ