বনু কায়নুকার বহিষ্কার | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা, আল-ওয়াকিদির বর্ণনা অনুসারে, বনু কায়নুকাকে বহিষ্কার করার ঘটনাটি ঘটে হিজরতের দ্বিতীয় বছরের শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখে, বদরের যুদ্ধের ঠিক সাড়ে তিন সপ্তাহ পরে। এই বিষয়ে বেশি বিবরণ নেই। কারণ, সাধারণভাবে আমরা যখন ইতিহাস সংরক্ষণ করি, তখন শুধু ইতিবাচক বিষয়গুলোই বিশদভাবে উল্লেখ করি; নেতিবাচক বিষয়গুলো কিছুটা দায়সারাভাবে উল্লেখ করে কাজ শেষ করি। প্রথম যুগের মুসলিম ইতিহাসবিদরা নেতিবাচক বিষয়গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি।
ইবনে ইসহাকের সিরাহে বনু কায়নুকার বিবরণ এক পৃষ্ঠারও কম। তিনি মাত্র একটি লাইনে উল্লেখ করেছেন, বনু কায়কা ইসলামের বিরুদ্ধে বৈরিতা বাড়িয়ে তোলে। তারা আসলে কী করেছিল সে বিষয়ে ইবনে ইসহাক বিস্তারিত বর্ণনা দেননি । তিনি শুধু উল্লেখ করেছেন, বদরের যুদ্ধের পরে বনু কায়নুকা কুরাইশদের পরাজয় ও মুসলিমদের বিজয়ে ব্যথিত হয়েছিল। তবে আমরা যে দুটি নির্দিষ্ট ঘটনার কথা জানি তা থেকে বিষয়টির অনেকটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বনু কায়নুকার বহিষ্কার | বদর ও ওহুদের মাঝে সংঘটিত ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
একটি ঘটনায় নবি করিম (সা) একদিন বনু কায়নুকার বাজারে গিয়েছিলেন। মদিনায় সবচেয়ে বড় বাজারটি ছিল বনু কায়নুকার। স্বর্ণকার হিসেবেও তাদের খ্যাতি ছিল। নবিজি (সা) সেখানে বনু কায়নুকা গোত্রের উপস্থিত সবাইকে একত্রিত করে তাদের সাম্প্রতিক মনোভাব ও কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন। তিনি তাদের মদিনার সংবিধানের একটি বিশেষ অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “তোমরা আমাদের সুরক্ষা দেবে, আমরাও তোমাদের সুরক্ষা দেব।
আমরা সবাই বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করব।” একথা শুনে তাদের এক নেতা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “হে মুহাম্মদ, তোমাদের সাম্প্রতিক বিজয়ে বিভ্রান্ত হয়ো না। তোমরা যাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছ তারা আসলে তেমন কোনো শক্তিই নয়। তোমরা যদি আমাদের মতো আসল ‘পুরুষদের’ বিরুদ্ধে লড়তে তাহলে দেখতে কী ফল হতো।”
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, বনু কায়নুকার ছিল ইহুদিদের মধ্যে বৃহত্তম উপজাতি। যুদ্ধ করার জন্য তাদের প্রায় ৭০০ লোক ছিল। তাদেরই একজন নেতা নবিজির (সা) মুখের ওপর সরাসরি এই চ্যালেঞ্জ জানালে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ।
তারপর দ্বিতীয় ঘটনায় বনু কায়নুকার মনোভাব পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায়। এই ঘটনাটি অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ। আনসারদের এক নারী একদিন বনু কায়নুকার বাজারে কিছু বেচাকেনা করতে যান। তিনি একটি পণ্য বিক্রি করে বেশ কিছু টাকা পাওয়ার পর তা দিয়ে কিছু স্বর্ণ কিনতে একটি স্বর্ণের দোকানে গিয়ে বসেন। স্বর্ণকার তাঁকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বলা শুরু করে, একপর্যায়ে তাঁর দেহের কিছু অংশ অনাবৃত করে দেখাতে বলে।
আনসারি নারীটি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বর্ণকার ওই নারীর পেছনে দাঁড়ানো এক লোককে কিছু একটা ইশারা করে। লোকটি সম্ভবত নারীটির বোরকা/পোশাক কোনো কিছুর সঙ্গে আটকে/বেঁধে দিয়েছিল। তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সম্পূর্ণ পোশাকটি খুলে নিচে পড়ে যায়; অর্থাৎ তার দেহে কোনো পোশাকই থাকে না। এ অবস্থায় তিনি চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের ইহুদিরা হাসাহাসি ও ঠাট্টামস্করা শুরু করে।
তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করলে আশেপাশে অবস্থানরত মুসলিমদের একজন তলোয়ার নিয়ে এসে যে লোকটি এই কাজ করেছে, তার মাথা কেটে ফেলেন। এলাকাটি ছিল বনু কায়নুকা অধ্যুষিত, ফলে মুহূর্তের মধ্যে সেই গোত্রের লোকেরা মুসলিম লোকটিকে ঘিরে ফেলে এবং হত্যা করে ।
এই খবর নবিজির (সা) কাছে পৌঁছলে তিনি বনু কায়নুকার কাছে এই বার্তা পাঠান যে, চুক্তির বরখেলাপ হয়েছে। কেন তিনি এই বার্তাটি পাঠালেন? কারণ, ইসলামের বিধান অনুসারে, কারও সঙ্গে চুক্তির বরখেলাপ হলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে জানাতে হয় যে, চুক্তিটি আর কার্যকর নেই। আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলেছেন:
“যদি কোনো সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তোমার এ আশঙ্কা হয়, তারা (চুক্তিভঙ্গ করে) বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তাহলে তুমিও (তাদের সঙ্গে সম্পাদিত) চুক্তি একইভাবে ছুড়ে ফেলে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসভঙ্গকারীদের ভালোবাসেন না।” [সুরা আনফাল, ৮:৫৮ ) তবে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা শোনার পরও বনু কায়নুকার লোকেরা ধারণা করতে পারেনি যে নবিজি (সা) এই প্রেক্ষিতে প্রতিশোধমূলক কিছু করতে পারেন। সম্ভবত বেশি লোকসংখ্যা, দুর্গ ইত্যাদি থাকার কারণে তাদের আত্মবিশ্বাস বেশি ছিল। মদিনায় ইহুদিরা বড় বড় দুর্গে বাস করত। তারা পুরু প্রাচীর তৈরি করার কৌশল জানত। তাদের প্রত্যেক উপাজাতিরই এমন দুর্গ ছিল।
বনু কায়নুকার এমন শক্তিসামর্থ থাকা সত্ত্বেও নবিজি (সা) মুসলিমদের একটি বাহিনী নিয়ে তাদের দুর্গ অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করেন। তাঁর আসার খবর পেয়ে বনু কায়নুকার লোকজন দৌড়ে তাদের দুর্গের ভেতরে ঢুকে পড়ে নিজেদের আটকে রাখে। পুরু প্রাচীরওয়ালা ওই দুর্গ ভাঙার মতো যথেষ্ট কারিগরি জ্ঞান তখন মুসলিমদের ছিল না। তাই তাঁরা দুর্গ অবরোধ করে এবং দুর্গের ভেতরে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় । আধা মাস ধরে নবিজি (সা) ও মুসলিমরা দুর্গটি চারদিক থেকে ঘিরে রাখেন। একপর্যায়ে বনু কায়নুকা আত্মসমর্পণ করে। নবিজি (সা) আদেশ দেন, তাদের সব পুরুষকে বেঁধে ফেলতে হবে, তারপর তাদের ব্যাপারে কী করা হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাহেলি যুগে ইয়াসরিবে বনু কায়নুকার দুই প্রধান সহযোগী ছিল মুনাফেকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল এবং উবাদা ইবনুল সামিত নামের সাহাবি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বনু কায়নুকার সঙ্গে খাজরাজের জোট ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও উবাদা উভয়েই ছিল খাজরাজ উপজাতির। তাই বনু কায়নুকার লোকেরা ওই দুই ব্যক্তির সাহায্য চেয়ে বলে, “তোমরা তো আমাদের মিত্র । এখন আমাদের সাহায্য করো।”
বনু কায়নুকার লোকজন উবাদা ইবনুল সামিতের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি নবিজির (সা) কাছে গিয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি আপনাকে জানাতে চাই যে, আমি আর তাদের মিত্র নই। আমার অভিভাবক তো আল্লাহ ও তাঁর রসুল। আমি বনু কায়নুকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছি। আমার মৈত্রী তো আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গেই থাকবে।”
অন্যদিকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল সোজা সেই শিবিরে গিয়ে হাজির হয়, যেখানে বনু কায়নুকার লোকজনকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে সে তাদের মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলে, “আমি যা বলছি তা করো, নইলে যা করার তা আমি নিজেই করব।” বন্দিদের দায়িত্বে থাকা সাহাবি আল-মুন্দির ইবনে কুদামা জবাবে তাকে বলেন, “আপনি যদি তেমন কিছু করার সাহস দেখান, তাহলে আমি আপনাকে হত্যা করব।” উবাই সেখানে ঝামেলা বাড়িয়ে নিজের প্রাণ হারানোর ঝুঁকি না নিয়ে নবিজিকে (সা) খুঁজে বের করে বলে, “হে মুহাম্মদ, আমার মিত্রদের প্রতি তুমি উদার হও।”

এখানে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ব্যাপারে দুটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন:
১. সে খুব কম সময়ই নবিজিকে (সা) আল্লাহর রসুল (‘রসুলুল্লাহ’) বলে ডাকত, যদিও আল্লাহ পবিত্র কোরানে স্পষ্টভাবে বলেছেন, “তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো, রসুলকে সেভাবে ডেকো না।” [সুরা নুর, 24:63]
২. এটি শুরুর দিকের কথা; তখনও মুনাফেকদের নেতা হিসেবে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ভূমিকা পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি এবং মুসলিমরা তখনও তাকে নিয়ে আশা ছেড়ে দেয়নি। পরবর্তী সময়ে ওহুদের যুদ্ধে আমরা দেখব, তার মুনাফেকির বিষয়টি ভালোভাবেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। নবিজি (সা) আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথায় নীরব থাকলে সে আবার বলল, “হে মুহাম্মদ, আমার মিত্রদের প্রতি তুমি উদার হও।” নবিজি (সা) নীরবই রইলেন এবং পেছন দিকে ঘুরে গেলেন।
কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নবিজির (সা) বর্ম ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে আবার বলল, “আমার মিত্রদের প্রতি তুমি উদার হও।” এবার নবিজি (সা) জবাব দিলেন, “তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাও।” ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, সেই সময় নবিজির (সা) মুখে পরিষ্কারভাবে রাগের ভাব ফুটে উঠেছিল। কিন্তু তারপরও আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নবিজিকে (সা) আরও শক্তভাবে ধরে বলল, “না, আমি ছেড়ে যাচ্ছি না।” নবিজি (সা) রাগত স্বরে বললেন, “ধিক তোমাকে! তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাও।”
আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তবু হাল ছাড়ল না। সে বলল, “আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ছাড়ছি না যতক্ষণ না আমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ যে তুমি আমার মিত্রদের সঙ্গে উদার আচরণ করবে। এই ৭০০ জন লোক আমাকে একসময় রক্ষা করেছে, আর এখন তুমি কী করে ভাবলে যে একদিনের মধ্যেই তাদের শেষ করে দেবে?” সে বোঝাতে চাইছে, যেহেতু তারা এক সময় তাকে সাহায্য করেছিল, তাই এখন তার পক্ষ থেকে তাদের সাহায্য করতে হবে।
সে আরও বলল, “তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু করলে আমার ভাগ্যেও আমি খারাপ কিছু আশঙ্কা করছি।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এভাবে অনেকক্ষণ ধরে পিড়াপীড়ি করার কারণে নবিজি (সা) একপর্যায়ে তাকে বললেন, “আমি তাদের তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি অর্থাৎ আমি তাদের মেরে ফেলব না।
প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নবিজি (সা) বনু কায়নুকার লোকদের প্রাণে মারেননি। তিনি তাদের সবাইকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য তিন দিন সময় দেন। তারা আরও কিছু বেশি সময় দেওয়ার জন্য অনুনয়বিনয় করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। তারা উবাদা ইবনুল সামিতের কাছেও গিয়েছিল আরেকবার চেষ্টা করে দেখার জন্য। কিন্তু উবাদা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, “আমার কাছে এসো না। আমি সিদ্ধান্ত নিলে তোমাদের তিন দিনও সময় দিতাম না।” এই তিন দিনের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই সিদ্ধান্তটি পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল; কিন্তু নবিজি (সা) তার কথায় আর কর্ণপাত করেননি।
বনু কায়নুকার লোকজন তিন দিনের মধ্যে সত্যিই চলে যাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল উবাদা ইবনুল সামিতের ওপর। তারা চলে যাওয়ার সময় যা যা নেবে তা বেছে নিতে হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের সোনাদানা নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য জিনিসপত্র, ঘরবাড়ি, সম্পত্তি, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি নিয়ে যেতে পারেনি। যেসব জিনিস তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছিল শুধু তা নিয়েছিল। তারা বাধ্য হয়ে বাকি সম্পদ ফেলে রেখে যায়, এবং তা মুসলিমদের মালিকানায় চলে আসে।
সন্দেহ নেই, বনু কায়নুকার লোকেরা নিজেরাই এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তারা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে, তাদের উপস্থিতি মুসলিমদের জন্য হয়ে উঠেছিল হুমকিস্বরূপ। স্বাভাবিকভাবেই নবিজির (সা) জন্য তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তায়ালা সুরা মায়েদার চারটি আয়াত নাজিল করেন:
“হে মুমিনগণ! ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন (রূপে পরিগণিত) হবে। আল্লাহ তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” [5:21]
ইসলাম-বিদ্বেষীরা এই আয়াতটি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই আয়াত নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট লক্ষ করলে দেখবেন, এখানে অসুবিধার কিছু নেই। যে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই আয়াত নাজিল হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সে জাতীয় পরিস্থিতিতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে ‘আউলিয়া’ (সাহায্যকারী, রক্ষাকারী, অভিভাবক) হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
“আর যাদের অন্তরে (মুনাফেকির) ব্যাধি রয়েছে তাদের তুমি দেখবে, তারা তৎপরতার সাথে এই বলে তাদের (ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের) মাঝে গিয়ে মিলিত হচ্ছে, ‘আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, কোনো বিপর্যয় এসে আমাদের ওপর আপতিত হবে।’ অতঃপর হয়তো আল্লাহ ( তোমাদের) দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে তাতে অনুতপ্ত হবে।” [5:02 ]
আল্লাহ এখানে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলকে উদ্ধৃত করেছেন। সে বলেছিল, “আমার ভাগ্যেও আমি খারাপ কিছু আশঙ্কা করছি।’ সুতরাং এই আয়াতটি সরাসরি তাকে উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে, পরবর্তী আয়াতগুলোতে আল্লাহ উবাদা ইবনুল সামিতের প্রশংসা করেছেন।
“তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ ও তাঁর রসুল এবং সেইসব মুমিন ব্যক্তি যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং (সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার সামনে) বিনত হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসুল ও মুমিনদের নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে (তারা যেন জেনে রাখে), কেবল আল্লাহ তায়ালার দলটিই বিজয়ী হবে।” [5:55-56] উবাদা ইবনুল সামিত ঠিকই বলেছিলেন, “আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুল এবং মুমিনদের বেছে নিয়েছি।”
আরও পড়ুনঃ