বনু কুরায়জাকে অবরোধ করে রাখা | বনু কুরায়জা উপজাতি, সাহাবিরা সন্ধ্যার মধ্যে বনু কুরায়জার এলাকায় পৌঁছে যান। কিন্তু ওই বিশাল সুরক্ষিত দুর্গ ভেঙে ভেতরে কীভাবে ঢুকবেন তা শুরুতে তাঁদের জানা ছিল না। তাই তাঁরা প্রথমে দুর্গটি কেবল অবরোধ করে রাখেন। এক সময় নবিজির (সা) নির্দেশ মোতাবেক আলি ইবনে আবি তালিব (রা) তাঁর দলবল নিয়ে মুসলিমদের পতাকা দুর্গের বাইরের দেওয়ালে সেঁটে দেন।
বনু কুরায়জাকে অবরোধ করে রাখা | বনু কুরায়জা উপজাতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, বনু কুরায়জার লোকজন পতাকাটি দেখে নবিজি (সা) সম্পর্কে অত্যন্ত অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে নবিজিও (সা) বনু কুরায়জার দুর্গের পথে যাত্রা শুরু করেন। তিনি পথিমধ্যে কয়েকজন সাহাবিকে জিজ্ঞেস করলেন, “এখানে কি আগে কেউ এসেছে?”
সাহাবিরা: আমরা সাদা রঙের খচ্চরে চড়ে দিহিয়া আল-কালবিকে যেতে দেখেছি । নবিজি (সা): তিনি জিব্রাইল (আ)। আল্লাহ তাঁকে পাঠিয়েছেন তাদের (বনু কুরায়জার) পায়ের তলার মাটি কাঁপিয়ে দিতে।
নবিজি (সা) বনু কুরায়জার দুর্গের কাছে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে আলি (রা) দ্রুত ছুটে এসে তাঁকে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি দয়া করে এখানেই থাকুন।” (কারণ, আলি চাননি বনু কুরায়জার লোকেরা যেসব কুরুচিপূর্ণ কথা বলছিল তা নবিজি (সা) শুনে ফেলুক।)
নবিজি (সা): হয়তো তারা আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলছে, তাই না?
আলি (রা): হ্যাঁ।
নবিজি (সা): একবার তারা আমাকে দেখলে আর ওসব কথা বলতে পারবে না । তারপর তিনি দুর্গের ঠিক সামনেই শিবির স্থাপন করে বনু কুরায়জার উদ্দেশে বললেন, “হে ইহুদিদের দল, আল্লাহ কি তোমাদের অপমান করেননি? তোমাদের ওপর কি আল্লাহর রোষ পতিত হয়নি?” তারা জবাব দিল, “হে আবুল কাসিম!

(১) তুমি তো আগে কখনও বোকার মতো কাজ করনি।” অর্থাৎ দয়া করে আমাদের রেহাই দাও। নবিজি (সা) এই কথার সরাসরি জবাব না দিয়ে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি অবরোধ অব্যাহত রাখেন। তিনি সাহাবিদের নিয়ে দুর্গের চারপাশে শিবির স্থাপন করে অবস্থান করতে থাকেন। এভাবে এক সপ্তাহ চলে যায়, সপ্তাহ গিয়ে মাসও শেষ হবার উপক্রম। সিরাহের সব লেখকই একমত যে, অবরোধটি ২৫ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
সেই সময় দুর্গের ভেতরে বনু নাদিরের নেতা হুয়ায় ইবনে আখতাবও অবস্থান করছিল, যা আমরা আগের পর্বে উল্লেখ করেছি। সেখানে আরও ছিল বনু কুরায়জার নেতা কাব ইবনে আসাদ। কয়েক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও যখন পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছিল না, তখন কাব তার লোকদের বলে, “হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদের তিনটি বিকল্প পথের প্রস্তাব করছি (অর্থাৎ এর মধ্যে একটি মানতে হবে): ” ১. “আমরা এই লোকের ধর্মকে গ্রহণ করে নেব।
আল্লাহর কসম, আমরা তো সবাই জানি যে তিনি সেই নবি যাঁর সম্পর্কে আমাদের কিতাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমাদের জান-মাল নিরাপদ থাকবে।” কিন্তু তার লোকেরা বলল, “আল্লাহর কসম, আমরা আমাদের ধর্ম কখনই ছাড়ব না।”
এখানে লক্ষণীয়, যখন তারা মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে, কাব তখন তাদের সেই গোপন বিষয়টি প্রকাশ করে দিল যা তারা জানলেও স্বীকার করতে বিব্রত বোধ করছিল। তারা সবাই জানত যে, মহানবি মুহাম্মদই (সা) সেই ব্যক্তি যাঁর কথা তাদের ধর্মগ্রন্থে বলা আছে।
২. “আমরা আমাদের নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করব (যাতে তাদের পরিণতি নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা করতে না হয়)। তারপর তলোয়ার নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যুদ্ধ করব, যতক্ষণ না আমাদের এক পক্ষ নির্মূল হয়। যুদ্ধে আমরা মরে গেলেও আমাদের পরিবার নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবে না। আর যদি জিতি, তাহলে আমরা বিয়ে করার জন্য অনেক নারীকে পাব।” ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মুসলিমদের অর্ধেক অথবা এক-তৃতীয়াংশ। তাই যুদ্ধে তাদের জেতার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ। এই প্রস্তাবেও বাকিরা বলল, “আমরা নিজের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে পারব না!”
৩. “তোমরা যদি প্রথম দুটি প্রস্তাব গ্রহণ না কর, তাহলে একমাত্র উপায় হলো আমরা মুসলিমদের ওপর হঠাৎ আক্রমণ করব। আর দিনটি হবে শনিবার, আমাদের সাবাথের দিন। তারা ভাবতেও পারবে না যে আমরা সাবাথের নিয়ম ভেঙে ওইদিনে আক্রমণ করতে পারি।” সুবহানাল্লাহ, দেখুন সে কতটা নীচে নামতে রাজি ছিল। কিন্তু তার লোকেরা বলল, “আমরা কখনই সাবাথের নিয়ম ভাঙব না। আপনি কি জানেন না যে আমরা যদি এই নিয়ম ভাঙি, তাহলে আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেবেন?” ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, বনু কুরায়জার লোকেরা কাবের সব প্রস্তাব প্রত্যখ্যান করায় কাব হতাশ হয়ে বলেছিল, “আল্লাহর কসম, যেদিন থেকে তোমাদের মায়েরা তোমাদের জন্ম দিয়েছে, সেদিন থেকে তোমরা জীবনে একটি সিদ্ধান্তও নিতে পারনি।”
আরও পড়ুনঃ