ভাষ্যগুলোর পক্ষে বিভিন্ন স্কলারের অবস্থান | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ভাষ্যগুলোর পক্ষে বিভিন্ন স্কলারের অবস্থান | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা,  প্রথম ভাষ্যটি সহিহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি বুখারিতে রয়েছে। তবে স্কলাররা সবাই এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি।

 

ভাষ্যগুলোর পক্ষে বিভিন্ন স্কলারের অবস্থান | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ভাষ্যগুলোর পক্ষে বিভিন্ন স্কলারের অবস্থান | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

প্রথম ভাষ্যের পক্ষে।

  • কিছু স্কলার আছেন যারা শুধু ভাষাটি গ্রহণ করেছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নাকচ করে দিয়েছেন। যেমন:
  • ইবনে কাসির, পবিত্র কোরানের তাফসিরের সর্বাধিক বিখ্যাত স্কলার।
  •  আল-কাদি আইয়াদ, সিরাহ বিশেষজ্ঞ
  • ফখরুদ্দিন আল-রাজি
  • নাসিরুদ্দিন আল-আলবানি (মৃ. ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ)।

আল-আলবানি ছিলেন আমাদের সময়ে হাদিস বিশারদদের মধ্যে অন্যতম। তিনি শুধু এই কাহিনিটির ওপরই একটি সম্পূর্ণ বই রচনা করেছেন। বইয়ে তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষ্যের পক্ষের প্রতিটি বর্ণনাকে দুর্বল বলে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুজায়মা (মৃ. ৩১১ হিজরি) সহিহ গ্রন্থ রচনাকারীদের মধ্যে একজন। তাঁকে এই কাহিনি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এটা ইসলামের শত্রুদের ইসলামকে ধ্বংস করার চেষ্টা।” তিনি একথা বলেন ৩১১ হিজরির আগে।

১৯৬৬ সালে মিশরের কায়রোতে এই একটি কাহিনি নিয়েই একটি বিশ্বসম্মেলন হয়েছিল। সেখানে অংশগ্রহণকারী অনেক বড় বড় স্কলার গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত রেফারেন্স ও প্রমাণাদিসহ উপস্থাপন করেছিলেন। সম্মেলনে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাষ্য বানোয়াট। সুতরাং আমরা বলতে পারি, স্কলাররা এই দুটি ভাষ্য বাতিল করে দিয়েছেন। আধুনিক কোনো সিরাহ গ্রন্থে এই কাহিনিটির উল্লেখ নেই, অথবা থাকলেও এটি মনগড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সুন্নি ইসলামের সব স্কলার এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। কিছু স্কলার দ্বিতীয় ভাষ্য, এমনকি কিছু স্কলার তৃতীয় ভাষা সত্য বলে গ্রহণ করেছেন। এই স্কলাররা যদি অখ্যাত হতেন, তাহলে আমরা তাঁদের মত প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম। কিন্তু তাঁরা সবাই ইসলামের ইতিহাসের বড় বড় ব্যক্তিত্ব।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

দ্বিতীয় ভাষ্যের পক্ষেঃ

দ্বিতীয় ভাষ্যটি যেসব স্কলার গ্রহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবনে হাজার আল-আসকালানি; তিনি সহিহ বুখারির ওপর অন্যতম সেরা বিশেষজ্ঞ। তাঁর বক্তব্য, ‘সত্য যে এ কাহিনির প্রতিটি স্বতন্ত্র বর্ণনার যোগসূত্রগুলো দুর্বল, কিন্তু আপনি যখন সব সূত্র ও কাহিনি একত্র করে দেখবেন, তখন তা গ্রহণযোগ্য হবে।’ এখানে হাদিস বিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটি নিয়মের কথা উল্লেখ করতে হয়। যদি একই কাহিনি নিয়ে অনেক হাদিস থাকে, তাদের সব যোগসূত্র দুর্বল হলেও সেগুলো একত্র করলে গ্রহণযোগ্য সেটাকে বলা যেতে পারে। ইবনে হাজার এই ঘটনার ব্যাপারে ওই নিয়মটি প্রয়োগ করেছিলেন।

কিন্তু নাসিরুদ্দিন আল আলবানির মত অনুসারে, ইবনে হাজার যা বলেছেন তা সত্য যে দুর্বল বর্ণনাগুলো একত্র করলে তা অথেনটিক হয়ে যায়, তবে তা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। আল-আলবানি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন যে, এক্ষেত্রে আমরা এই নিয়মটি প্রয়োগ করতে পারব না।

 

ভাষ্যগুলোর পক্ষে বিভিন্ন স্কলারের অবস্থান | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তৃতীয় ভাষ্যের পক্ষে।

তৃতীয় ভাষাটি ইসলামের অন্যতম সেরা স্কলার ইবনে তাইমিয়া দ্বারা সমর্থিত। তিনি এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই ও তাফসির লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সব বর্ণনা একত্র করলে কাহিনিটি সত্য মনে হয়। তা ছাড়া সুরা হজের আয়াত (‘আমি তোমার পূর্বে যেসব নবি ও রসুল পাঠিয়েছিলাম’) বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। অর্থাৎ কেবল তুমিই নও, আগের অনেক নবিও এর মুখোমুখি হয়েছিল। এই আয়াতে ‘তামান্না’ শব্দের মূল অর্থ আবৃত্তি বা তেলাওয়াত করা (ইবনে আব্বাসের মতেও শব্দটির অর্থ আবৃত্তি / তেলাওয়াত)। তবে পরবর্তীকালে শব্দটির আরেকটি অর্থ গ্রহণ করা হয়, তা হলো ইচ্ছা করা’। সুতরাং এই আয়াতটিকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:

“আমি তোমার পূর্বে যেসব নবি ও রসুল পাঠিয়েছিলাম তারা যখনই কিছু তেলাওয়াত করত তখনই শয়তান তাদের আবৃত্তিতে বাইরে থেকে কিছু ছুড়ে ফেলত (অর্থাৎ কিছু ভুল বোঝাবুঝি ঢুকিয়ে দিত)। কিন্তু শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে আল্লাহ তা দূর করে দেন। তারপর আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো সুসংবদ্ধ করেন। আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। এটা এজন্য যে, শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে তা দিয়ে তিনি পরীক্ষা করেন তাদের, যাদের অন্তরে ব্যাধি (কপটতা ও কুফর) রয়েছে, এবং যারা পাষাণহৃদয়।”

[ 22:52-53] ইবনে তাইমিয়ার মত অনুসারে, এই স্যাটানিক ভার্সেস দুর্বল ইমানের ব্যক্তির জন্য একটি পরীক্ষাস্বরূপ। অন্য ব্যাখ্যাটি হলো, সুরা হজের ৫২ নম্বর আয়াতের সঙ্গে সুরা নাজমের (বা স্যাটানিক ভার্সেসের) কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি সাধারণ আয়াত, এর সঙ্গে কোনো কিছু না মিলিয়ে আলাদাভাবেই বিবেচনা করতে হবে।

“আমি তোমার পূর্বে যেসব নবি ও রসুল পাঠিয়েছিলাম তারা যখনই কিছু ইচ্ছা করত তখনই শয়তান তাদের আবৃত্তিতে বাইরে থেকে কিছু ছুড়ে ফেলত (অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে ভেজাল মেশানোর চেষ্টা করত)। কিন্তু শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে আল্লাহ তা দূর করে দেন। তারপর আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলোকে সুসংবদ্ধ করেন। আল্লাহ তো সর্বতা, প্রজ্ঞাময়।” [22:02 ] ইবনে তাইমিয়া বলেছেন: আপনি যদি এই আয়াতটিকে একটি আলাদা আয়াত হিসেবে মেনে নেন তাহলে পরবর্তী আয়াতটি (“এজন্য যে, শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে তা দিয়ে তিনি পরীক্ষা করেন তাদের যাদের অন্তরে ব্যাধি (কপটতা ও কুফর) রয়েছে, এবং যারা পাষাণহৃদয়।’ [২২:৫৩]) কীভাবে বুঝবেন? ইবনে তাইমিয়ার মতে, এর অর্থ হলো, নিশ্চয়ই তাঁরা কিছু শুনেছেন।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment