বির মাউনার ঘটনা | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

বির মাউনার ঘটনা | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা, বির মাউনার এবং আল-রাজির ঘটনা ঠিক একই সময়ে ঘটেছিল। এক বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) একই রাতে এই দুটি দুঃখজনক ঘটনার খবর পেয়েছিলেন। মুসলিমদের জন্য এ ছিল এক দুঃসহ ট্র্যাজেডি। বির মাউনার ঘটনাটি হতাহতের সংখ্যার দিক থেকে ছিল আল-রাজির চেয়েও মারাত্মক। প্রকৃতপক্ষে, এটি সিরাহের সবচেয়ে মারাত্মক গণহত্যার এবং ঠান্ডা মাথায় খুনের ঘটনা। ঘটনাটি ছিল এমন:

সেই সময় আরবের উত্তর দিকে নাজদ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান নেতা আবু বারা আমির ইবনে মালিক মদিনা সফরে আসেন। নাজদের লোকেরা তখন হেজাজের লোকদের চেয়ে সভ্যতার মাপকাঠিতে পিছিয়ে ছিল। আৰু বারা বেশ কিছুদিন মদিনায় অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। নবিজি (সা) তাঁকে দাওয়াত দিলেন। কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তাই তিনি বললেন, “হে মুহাম্মদ, আপনি যদি আপনার একদল সাহাবিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য নাজদের লোকদের কাছে পাঠান, তাহলে আমি নিশ্চিত যে তাদের মধ্যে অনেকেই তাতে সাড়া দেবে। তারপর আমরা আপনার বার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেব।”

বির মাউনার ঘটনা | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বির মাউনার ঘটনা | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইসলাম প্রচারের জন্য যেসব সাহাবি নাজদে যাবেন তাঁদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন আবু বারা। যদিও তিনি নিজে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি, তবু তাঁর মধ্যে অসততা ছিল না । [তখনকার দিনে আরব অঞ্চলে এমন রীতি ছিল যে কোনো গোত্র যদি কোনো ব্যক্তিকে সুরক্ষা দেয়, তাহলে সেই গোত্রের সঙ্গে জোটবদ্ধ প্রত্যেক গোত্রই ওই ব্যক্তিকে সুরক্ষা দেবে। এই বিষয়টিকে আরবিতে ‘হালিফ’ বলা হয় ।

আবু বারা বলেন, নাজদের সব গোত্রের সঙ্গে তাঁর জোট রয়েছে, সুতরাং তাঁর দেওয়া সুরক্ষা সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে। তা ছাড়া তিনি সেখানকার একজন প্রবীণ নেতা। কিন্তু সে সময় তিনি অনুধাবন করতে পারেননি যে, তাদেরই অন্য একজন চরম ইসলামবিদ্বেষী নেতা তখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পরিকল্পনা করছিল ।

আবু বারার সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মুসলিমদের জন্য একটি বড় সংবাদ ছিল। কারণ নাজদ ছিল হেজাজের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় (চিত্র দেখুন) এবং জনসংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। সেখানে সফল হলে তা নবগঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্রের চেহারা আমূল পাল্টে দেবে। নবিজি (সা) সেরা ৭০ জন তেলাওয়াতকারী এবং প্রচারককে বেছে নিলেন;

তাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন সুফফার লোক। আমরা জানি, সুফফার লোকেরা কোরান সম্পর্কিত জ্ঞান এবং ধার্মিকতার জন্য খ্যাত ছিলেন। ৭০ জন সাহাবি মাউনার কূপের কাছে পৌঁছার পর হারাম ইবনে মিলহান নামের এক সাহাবির মাধ্যমে সেখানকার এক স্থানীয় উপজাতির নেতা আমির ইবনুল তুফায়েলের কাছে একটি চিঠি পাঠান। আমির ইবনুল তুফায়েল ছিল উদ্ধত স্বভাবের ব্যক্তি। সে এক সময় ইসলাম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছিল, কিন্তু নবিজিকে (সা) শর্ত দিয়েছিল:

(১) নবিজি (সা) শহরগুলোতে নেতৃত্ব দেবেন, আর বাকি সব এলাকার নিয়ন্ত্রণ তাকে (আমিরকে) ছেড়ে দিতে হবে; অথবা (২) নবিজির (সা) মৃত্যুর পরে তাকে মুসলিমদের নেতা হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। নবিজি (সা) স্বাভাবিকভাবেই এই শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানান, ফলে আমির আরও বেশি উদ্ধত হয়ে ওঠে। সে ভালো করেই জানত যে, মুসলিমদের সেখানে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তবু সে পত্রবাহক হারাম ইবনে মিলহানকে হত্যা করার জন্য তার লোকদের ইশারা করে। আমিরের ইশারা পেয়ে এক বেদুইন বর্শা দিয়ে হারামের কাঁধ বরাবর আঘাত করে। বর্শাটি হারামের দেহ ভেদ করে সামনে পর্যন্ত চলে এলে তিনি বলে ওঠেন, “কাবার মালিকের কসম! আমি জিতে গেছি (অর্থাৎ আমি শহিদ হতে পেরেছি)!” এটিই ছিল তাঁর শাহাদাতবরণের আগে শেষ কথা।

এখানে তিনটি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে:

১) হারাম ইবনে মিলহান ছিলেন একজন দূত। বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃত রীতি অনুসারে দূতদের কোনো ক্ষতি করা যায় না। আমাদের আজকের সময়েও রাষ্ট্রদূতরা সর্বদা সুরক্ষা পেয়ে থাকেন।

২) হারামের জন্য ওই অঞ্চলের একজন বর্ষীয়ান নেতার সুরক্ষা ছিল। সেই সুরক্ষার চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করা ছিল আমিরের এখতিয়ার-বহির্ভূত কাজ। আমির খুব ভালো করেই জানত যে সে চুক্তি ভঙ্গ করছে।

৩) আমির ইবনুল তুফায়েল ইশারার মাধ্যমে গোপনে তা করেছিল। ততক্ষণে আমির ইবনুল তুফায়েল বুঝে যায় যে সে খুব বাজে একটি কাজ করে ফেলেছে এবং সে জন্য বড় রকমের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। বাকি ৭০ জনের ব্যাপারেও তার কিছু করা দরকার। সে তখন অন্য সব গোত্রের কাছে জানতে চাইল, তারা ওই ৭০ জনকে হত্যা করার জন্য তার সঙ্গে যোগ দিতে ইচ্ছুক কি না। বেশির ভাগ গোত্রই তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল, কারণ তারা জানত যে আবু বারা মুসলিমদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু তিনটি গোত্র আমিরের আহ্বানে সাড়া দেয়: আসিয়া, রাআল এবং দাকওয়ান। তারা সবাই মিলে প্রায় ৪০০-৫০০ জনের দল নিয়ে বির মাউনায় গিয়ে ৭০ জন সাহাবিকে ঘেরাও করে। সাহাবিরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা তো যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে যাননি, তাঁদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র বলতে কিছুই ছিল না। অবশেষে তিনজন বাদে বাকি সব সাহাবিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যে তিনজন বেঁচে যান, তাঁরা হলেন:

১) কাব ইবনে জায়েদ; তিনি আহত হয়ে একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তারপর তাঁর দেহের ওপর অন্য মৃতদেহগুলো একের পর এক জমতে থাকে। আমির ইবনুল তুফায়েলের লোকজন জানতে পারেনি ওই স্তূপীকৃত মৃতদেহগুলোর নিচে একজন জীবিত ব্যক্তি রয়ে গেছে। কাব ইবনে জায়েদ শেষ পর্যন্ত মদিনায় ফিরে যান।

২) আমর ইবনে উমাইয়া; তিনি একজন মুহাজির।

৩) আল-মুনজির ইবনে মুহাম্মদ; তিনি একজন আনসার। আমর ও মুনজির সম্ভবত পানি আনতে বা অন্য কোনো কাজে শিবিরের বাইরে গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে এসে দেখেন, সাহাবিরা যেখানে শিবির স্থাপন করেছিলেন সেই স্থান থেকে কিছুটা সামনের দিকে আকাশে অনেক শকুন চক্কর দিচ্ছে। তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেন, নিশ্চয়ই কিছু সমস্যা হয়েছে; কারণ অনেক খাবারের সমাহার না থাকলে শকুনদের এভাবে আসার কথা নয় ।

তাঁরা ভাবলেন: স্পষ্টতই এখানে কোনো বিপদ হয়েছে। কী ঘটছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের এখন কী করা উচিত? এখন কি আমরা সামনে এগিয়ে যাব? নাকি নবিজির (সা) কাছে ফিরে যাব? আমর বললেন, “আমি মনে করি, আমাদের এখন নবিজির (সা) কাছে ফিরে যাওয়া উচিত, যাতে আমরা তাঁকে খবর দিতে পারি যে এখানে কোনো একটা

বিপদ হয়েছে। আসুন আমরা ফিরে যাই এবং আরও শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসি।” আল-মুনজির বললেন, “আমার মত হলো, আমি সেই স্থান থেকে একচুলও নড়ব না যেখানে আমার সঙ্গীসাথিদের হত্যা করা হয়েছে। আবার আমি চাই না, অন্য মানুষরা আমার কাহিনি বর্ণনা করুক (অর্থাৎ যেখানে আমার সঙ্গীসাথিরা শাহাদাত লাভের সৌভাগ্য পাচ্ছে, সেখানে আমি তাদের কাহিনি বর্ণনা করার জন্য বেঁচে থাকতে চাই না)।”

এভাবে মুনজির আমরকে উদ্বুদ্ধ করে এগিয়ে গেলে দুজনেই একসঙ্গে ধরা পড়েন। মুনজিরকে হত্যা করা হয় এবং কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে, আমির ইবনুল তুফায়েল চেয়েছিল যে মুসলিমদের একজন দূত ফিরে যাক। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়: সাহাবিদের মধ্যে যিনি ফিরে যেতে চেয়েছিলেন, আল্লাহ তাঁকে ফিরে যেতে দিয়েছেন; আর যিনি শহিদ হতে চেয়েছিলেন, আল্লাহ তাঁকে শহিদের মর্যাদা দিয়েছেন।

সুবহানাল্লাহ! আমর ইবনে উমাইয়া ফিরে আসার পথে আমির ইবনুল তুফায়েলের গোত্রের দুজন লোকের সাক্ষাৎ পান, যারা মদিনা থেকে ফিরছিল। ওদিকে কী ঘটেছে এই দুজন তার কিছুই জানত না। তারা দুজনেই নবিজির (সা) কাছে সুরক্ষা চেয়েছিল এবং নবিজি (সা) তাদের তা দিয়েছিলেন; কিন্তু আমর তা জানতেন না। তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে এই দুজন সেই গোত্রের লোক যারা সদ্যই তার ৭০ জন সঙ্গীকে হত্যা করেছে। তাই তিনি কৌশল করেন এবং তারা ঘুমিয়ে গেলে উভয়কে হত্যা করেন।

তারপর তিনি তাদের কাছ থাকা নবিজির (সা) সুরক্ষার সেই চিঠিটি খুঁজে পান। তখন তাঁর মনে অপরাধবোধ জাগে। তিনি নবিজির (সা) কাছে ফিরে গিয়ে যা যা ঘটেছে তার সবকিছু খুলে বলেন। নবিজি (সা) তখনই আমর ইবনে উমাইয়ার কাছ থেকে বির মাউনার ভয়ংকর সংবাদটি জানতে পারেন । একসঙ্গে এতজন সাহাবিকে হারানোর কষ্টে নবিজি (সা) অনেকটাই মুষড়ে পড়েন। জানা যায়, তিনি এর পরের এক মাস ধরে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে শহিদদের জন্য একটি বিশেষ কুনুত (দীর্ঘ দোয়া) পাঠ করতেন।

এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে অনেক আয়াত নাজিল করেছিলেন। কিন্তু তিনি পরে ওই আয়াতগুলো রহিত করেন। সুনান আবি দাউদে ওই আয়াতগুলো অবশিষ্টাংশ লিপিবদ্ধ আছে। যেমন একটি হাদিসে আছে: ‘কে গিয়ে আমাদের ভাইদের জানাবে যে আমরা বেহেশতে জীবিত ও নিরাপদে আছি?’ কেন ওই আয়াতগুলো রহিত করা হয়েছিল তা মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম প্রজ্ঞার বিষয়, তিনিই তা ভালো জানেন ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বির মাউনার ঘটনা থেকে শিক্ষণীয়

ক) ইসলামের প্রসার আপনাআপনি ঘটেনি, তার পেছনে রয়েছে অনেক ক্ষতি, ত্যাগ বেদনাদায়ক ঘটনা। নবিজি (সা) ও তাঁর সাহাবিদের ক্ষেত্রেই যদি এমন হয়, তবে আমাদেরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

খ) খুবায়ের ইবনে আদি এবং আমির ইবনুল তুফায়েলের চরিত্রের তুলনা করুন। খুবায়েবের হাতের কাছে ছিল একটি শিশু যার ক্ষতি করার মধ্য দিয়ে তিনি চাইলে প্রতিশোধ নিতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। অন্যদিকে আমির ইবনুল তুফায়েল এতটাই নোংরা মনের মানুষ ছিল যে, সে সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও এতগুলো লোককে হত্যা করেছিল। এখানেই ইমানি ও কুফরি হৃদয়ের মধ্যে পার্থক্য।

গ) এখান থেকে আমরা কয়েকটি ফিকহ বিষয়েও জানতে পারি। কখন কুনুত করা যাবে তা নিয়ে ফিকহ শাস্ত্রবিদদের মধ্যেও মতপার্থক্য আছে। এ বিষয়ে প্রতিটি মাজহাবের নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। যেমন, শাফেয়ি মতে ফজরের নামাজে, হানাফি মতে বিতরের নামাজে; এমনিভাবে অন্যদেরও আলাদা অবস্থান রয়েছে । আল্লাহ ভালো জানেন।

কুনুতের সময় নিয়ে আনাস ইবনে মালিকের একটি হাদিস অনুসারে, নবিজি (সা) বির মাউনার ঘটনার পরে নামাজের শেষ রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলার পর হাত উঠিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সমীপে কুনুত করতেন। এই হাদিস অনুসারে কুনুতকে ফজর কিংবা বিতরের নামাজের সঙ্গে মেলানো উচিত নয়। তবে এটি ফিকহের বিষয়, যাতে মতপার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মতটি হলো, কুনুত কোনো বিশেষ ওয়াক্তের নামাজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং তা কেবল উম্মাহ যখন কোনো বিপর্যয়ে পড়ে তখন করা যেতে পারে।

 

বির মাউনার ঘটনা | আল-রাজি ও বির মাউনার গণহত্যা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ঘ) স্পষ্টতই নবিজি করিমের (সা) অদৃশ্যের জ্ঞান (‘ইলমুল গায়েব’) ছিল না। এ ক্ষেত্রে ৭০ জন (এবং আল-রাজিতে ১০ জন) সাহাবি যে মারা যাবেন তা তিনি জানতেন না, যদিও ওই গোত্রগুলোর নেতাদের সম্পর্কে তিনি কিছু বর্ণনা দিয়েছিলেন। মূল কথা হলো, আল্লাহ তাকে যা জানাতে চেয়েছেন, তা-ই জানিয়েছেন। তার চেয়ে বেশি অদৃশ্যের কোনো জ্ঞান তাঁর ছিল না। সন্দেহ নেই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবিজিকে (সা) দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক বিষয় সম্পর্কে আর সকলের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান দিয়েছিলেন (যেমন ইসরা ও মিরাজ), যা আমাদের জন্য অদৃশ্যের জ্ঞান। আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলেছেন:

“কিন্তু তাঁর অনন্ত জ্ঞানের সেটুকুই মানুষ জানতে পারে যেটুকু তিনি ইচ্ছা করেন (তারা জানুক।” [সুরা বাকারা, ২:২৫৫] তবে শর্তহীন অদৃশ্যের জ্ঞান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানে না, যেমনটি তিনি বলেছেন: “(হে নবি) বলো, ‘আল্লাহ ছাড়া আকাশ ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” [সুরা নমূল, ২৭:৬৫]

৫) আমর ইবনে উমাইয়া মদিনায় ফেরার পথে যে দুজন লোককে হত্যা করেছিলেন, নবিজি (সা) তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ভার স্বীকার করেন এবং তাদের আত্মীয়দের রক্তমূল্য পরিশোধ করেন। এখানে আমাদের শিক্ষণীয় হলো: কোনো ব্যক্তিকে তার সম্প্রদায়ের লোকদের অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। আমির ইবনুল তুফায়েলের গোত্রের ওই দুই ব্যক্তি ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাই নবিজি (সা) ঘটনার দায়-দায়িত্ব মেনে নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরানেও স্পষ্টভাবে বলা আছে:

“(কেয়ামতের দিন) কেউ কারও (পাপের) বোঝা বইবে না; কোনো ব্যক্তির ওপর পাপের বোঝা ভারী হলে সে যদি (অন্যকে কাউকে) তা বইবার জন্য ডাকে, তবু কেউ তা বইবে না, নিকটাত্মীয় হলেও না।” [সুরা ফাতির, ৩৫:১৮]

চ) আমির ইবনুল তুফায়েলের মৃত্যু ছিল অত্যন্ত করুণ। সে এক ধরনের কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছিল যা তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তার নিজের গোত্রের লোকেরা তাকে মরুভূমিতে একা ফেলে রেখে চলে যায়। সেখানে সে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে মারা যায়। অবশ্যই এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে এক শাস্তি ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment