বৃষ্টি ও ঘুম | বদরের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

বৃষ্টি ও ঘুম | বদরের যুদ্ধ-৩, সাদ ইবনে মুআদ পরামর্শ দিলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমরা কি আপনার জন্য এখানে একটি বিশেষ জায়গা প্রস্তুত করতে পারি যেখান থেকে আপনি পুরো যুদ্ধের ওপর নজর রাখতে পারবেন?” নবি করিম (সা) তাতে সায় দিলে সাহাবিরা উপযুক্ত একটি জায়গা খুঁজে বের করলেন। তারপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নবিজির (সা) জন্য একটি ‘সদরদপ্তর’ তৈরি করা হলো। এর মধ্যে রাত হয়ে এল এবং এক সময় দিগন্তের দিক থেকে কুরাইশ বাহিনীকে আসতে দেখা  গেল । এখন আর কোনো সন্দেহ রইল না যে, যুদ্ধটা পরের দিনই সংঘটিত হতে যাচ্ছে।

 

বৃষ্টি ও ঘুম | বদরের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বৃষ্টি ও ঘুম | বদরের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ইমাম আহমদের মুসনাদে বর্ণিত আছে, নবি করিম (সা) সারা রাত জেগে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে দীর্ঘ সেজদা সহযোগে দোয়া করে কাটিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহ, আপনি যদি এখন এই দলটিকে ধ্বংস করেন, তবে পৃথিবীতে আপনাকে ইবাদত করার আর কেউ থাকবে না।” মধ্যরাতের দিকে হালকা বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। লোকজন জিনিসপত্র নিয়ে কেউ গাছের নিচে, কেউ তাদের উটের ছায়ায়, আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো। ওদিকে নবিজি (সা) ভোর না হওয়া অবধি নামাজ আদায় ও দোয়া করতে থাকলেন। ফজরের সময় হলে তিনিই সবাইকে নামাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। এভাবেই হিজরতের দ্বিতীয় বছরের ১৭ই রমজানের দিনটি শুরু হলো। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে, দিনটি ছিল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে শুক্রবার, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ ।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের সুরা আনফালে সেদিনের সেই বৃষ্টি ও ঘুম উভয়ই তাঁর কাছ থেকে আসা মিরাকল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “স্মরণ করো, তিনি তাঁর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য তোমাদের তন্ত্রায় আচ্ছন্ন করেন ও আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টি ঝরান তা দিয়ে তোমাদের পবিত্র করার জন্য, তোমাদের কাছ থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য, তোমাদের বুক শক্ত করার জন্য আর তোমাদের পা স্থির রাখার জন্য।”

[সুরা আনফাল, ৮:11] আমরা জানি, মরুভূমিতে শুকনা বালুর ওপর দিয়ে হাঁটা বেশ কঠিন, আবার প্রচুর বৃষ্টি হলেও সেখানে হেঁটে চলা প্রায় অসম্ভব। তবে সঠিক পরিমাণে বৃষ্টি বালিকে দৃঢ় করে তোলে । মুসলিমরা মাঠের যে পার্শ্বে অবস্থান করছিলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেদিকের বালুকে হাঁটার জন্য দৃঢ় করে দিয়েছিলেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইমাম আহমদের মুসনাদে বর্ণিত আছে, আলি (রা) বলেন, “বদরের রাতে একমাত্র নবিজি (সা) ছাড়া আমরা প্রত্যেকেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম; নবিজি (সা) একটি গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে সারারাত ধরে নামাজ পড়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন।” এটি সত্যিই একটি মিরাকল । কারণ, যে কোনো বড় ও উত্তেজনাকর ঘটনার আগের রাতে আমরা অনেকেই ঘুমাতে পারি না । কিন্তু সাহাবিরা দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

অন্যদিকে কুরাইশদের কথা চিন্তা করুন। একে তো তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে, উপরন্তু ঘুমও নেই। জানা যায়, বদরের সমতলের কুরাইশদের অংশে বেশ ভারী বৃষ্টি হয়েছিল, যা ছিল তাদের জন্য অসুবিধাজনক। তবে এই ব্যাপারে ইসনাদটি ততটা বিশ্বাসযোগ্য নয় । আবার নবি করিমের (সা) উদ্বেগের ব্যাপারটিও লক্ষ করুন। যদিও তিনি আল্লাহর নবি, আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা সত্ত্বেও নেতা হিসেবে তাঁর লোকদের জন্য কী করতে পারেন তা নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন। সে কারণেই তিনি সারা রাত ধরে আল্লাহর কাছে সেজদায় পড়ে ছিলেন। আল-তাবারানির বর্ণনা অনুসারে, ইবনে মাসউদ বলেছেন, “নবিজি (সা) বদরের রাতে যেমন কাতরতার সাথে প্রার্থনা করেছেন, আমি আর কাউকে তেমনভাবে প্রার্থনা করতে দেখিনি।”

 

বৃষ্টি ও ঘুম | বদরের যুদ্ধ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এখন প্রশ্ন হলো, নবিজি (সা) কি আদৌ সেই রাতে ঘুমিয়েছিলেন? ইবনে কাসির বলেন, তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা সেই সময় তাঁকে একটি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কী ছিল সেই স্বপ্ন? এ বিষয়ে পবিত্র কোরানে উল্লেখ আছে: “স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে তারা সংখ্যায় কম, যদি তোমাকে দেখাতেন যে তারা সংখ্যায় বেশি তবে তোমরা সাহস হারাতে ও যুদ্ধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের রক্ষা করেছেন (আসল পরিমাণ না দেখিয়ে)।”

[সুরা আনফাল, ৮:৪৩] এখানে উল্লেখ্য, ‘আসল পরিমাণ না দেখানো ভুল তথ্য দেওয়া নয়। আল্লাহ কখনও ভুল কিছু করেন না। যদি কোথাও ১০০ জন লোক থাকে এবং আপনি তাদের মধ্যে ১০ জনকে দেখতে পান, তবে তা ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন। এখানে ভুল কিছু নেই। আল্লাহ যদি ১০০ এর মধ্যে ১৫০ জন দেখাতেন, তবে তা ভুল হতো, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি নবিজিকে (সা) স্বপ্নে কুরাইশ বাহিনীর একটি অংশ দেখিয়েছিলেন। যেহেতু আল্লাহ তাঁকে কুরাইশ বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা যা ছিল তার চেয়ে কম দেখিয়েছিলেন, তাই নবিজি (সা) জেগে ওঠার পর আত্মবিশ্বাস অনুভব করেন এবং যুদ্ধজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment