বেদুইনদের মুখোশ উন্মোচন | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১, মদিনার আশেপাশের বেদুইনদের ওমরার জন্য যাত্রায় অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতির বিষয়টির উল্লেখ কোরানেও আছে: “(আরব) বেদুইনদের যারা (তোমার সাথে যোগ না দিয়ে) পেছনে পড়ে থেকেছে, তারা অচিরেই তোমার কাছে এসে বলবে, ‘(হে নবি), আমাদের মাল- সম্পদ ও পরিবার-পরিজন আমাদের ব্যস্ত করে রেখেছিল, আপনি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’
বেদুইনদের মুখোশ উন্মোচন | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

(হে মুহাম্মদ, তুমি তাদের কথায় প্রতারিত হয়ো না,) তারা মুখে এমন সব কথা বলে যার কিছুই তাদের অন্তরে নেই; বরং তুমি (তাদের) বলে দাও, আল্লাহ তায়ালা যদি তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংবা কোনো উপকার করতে চান, তাহলে কে তোমাদের ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছা থেকে তাঁকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে; বরং তোমরা যা যা করছ আল্লাহ তায়ালা সেসব সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন।
তোমরা সবাই মনে করেছিলে, রসুল ও (তাঁর সাথী) মুমিনরা কোনোদিনই (এ অভিযান থেকে) নিজেদের পরিবার-পরিজনের কাছে (জীবিত) ফিরে আসতে পারবেন না। আর এই ভেবে তোমরা আনন্দে ছিলে । তোমরা ভুল ধারণা করেছিল। তোমরা তো এক ধ্বংসোন্মুখ সম্প্রদায়।” [সুরা ফাতহ, ৪৮:১১-১২] এভাবে আল্লাহ তায়ালা তাদের চরিত্র কোরানের মাধ্যমে উন্মোচিত করে দিয়েছেন।
বেদুইনরা নিজেদের বলেছিল, “এই লোকটি আমাদের সেই জাতির কাছে নিয়ে যেতে চায় যারা আমাদের হত্যা করতে এখানে এসেছিল। তাহলে তো আমরা নিজের হাতেই মৃত্যু ডেকে আনব। আমরা এটা কোনোভাবেই করতে পারি না । চলো, আমরা তাকে বলার জন্য একটি অজুহাত দাঁড় করাই।” সাহাবিরা সবাই সমান নন, ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদার অধিকারী। সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী জান্নাতের প্রতিশ্রুতিপ্রাপ্ত সেই দশজন।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হলেন তাঁরা যাঁরা বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আছেন তাঁরা, যাঁরা ‘রিদওয়ানের প্রতিশ্রুতিতে’ (যা হুদায়বিয়ায় সংঘটিত হবে) অংশ নিয়েছিলেন। আমরা এখানে একটি কারণিক সম্পর্ক দেখতে পাই: যাঁরা সাহসী তাঁদের আল্লাহ অসীম বরকত দিয়েছিলেন। নবিজি (সা) তাঁর সঙ্গে হুদায়বিয়ায় আসা সাহাবিদের সম্পর্কে বলেছিলেন, “পৃথিবীতে আর কেউ এদের চেয়ে বেশি ধার্মিক ও ন্যায়নিষ্ঠ নয়।”
কতজন মুসলিম ওমরা করার জন্য মদিনা ত্যাগ করেন?
সিরাহের বিভিন্ন গ্রন্থ, সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিমে উল্লিখিত ভাষ্য অনুসারে আনুমানিক ১,৪০০ মুসলিম মদিনা ছেড়ে মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। বদরের যুদ্ধে তিন শতাধিক, ওহুদের যুদ্ধে সাত শতাধিক, খন্দকের যুদ্ধে আনুমানিক এক হাজারের বেশি পুরুষ মুসলিম অংশ নিয়েছিলেন। ওমরা করার জন্য ১,৪০০ পুরুষের অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে যে, মুসলিমদের সংখ্যা এখন হাজারে গণনা করতে হচ্ছে।
মুসলিমরা কি যুদ্ধের জন্য সশস্ত্র ছিলেন?
মুসলিমরা যুদ্ধের জন্য সশস্ত্র ছিলেন কি না তা নিয়ে দুই ধরনের মত আছে। কারও মতে তাঁরা সশস্ত্র ছিলেন, কারও মতে তাঁরা তা ছিলেন না। যেহেতু তাঁরা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিলেন, তাই তাঁদের পক্ষে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকার সুযোগ ছিল না। তাই যারা বলেছে ‘তাঁরা সশস্ত্র ছিলেন না’, তারা সম্ভবত বুঝিয়েছিল যে তাঁদের সাথে অস্ত্র-জাতীয় কিছু ছিল না। আবার যারা বলেছে ‘তাদের কাছে অস্ত্র ছিল’, তারা সম্ভবত বুঝিয়েছিল যে তাঁরা কাফেলাতে অস্ত্রগুলো রেখেছিলেন। তবে ধরে নেওয়া যায় যে, নবিজি (সা) সতর্কতামূলক পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া হুদায়বিয়ায় যাননি।
আরও পড়ুনঃ