মদিনার প্রতি ভালোবাসা | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

মদিনার প্রতি ভালোবাসা | সুফ্ফার লোকেরা, প্রথমদিকের হিজরতকারীদের (মুহাজিরদের) মদিনা কেমন লেগেছিল? সত্যি বলতে কী, ভালো লাগেনি। এমন নয় যে তাঁরা সেখানে গিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলেন। আসলে তাঁরা মক্কায় ফেলে আসা বাড়িঘর ও পরিচিত পরিবেশ খুব মিস করছিলেন। এই সত্য তো অস্বীকার করা যায় না যে নিজের শহর, নিজের ঘরবাড়ির মতো আপন আর কিছুকেই মনে হয় না। অন্য বাড়িতে আপনাকে কতটা সমাদর করা হলো, আপনি কোন বিলাসবহুল হোটেলে থাকলেন, তার সঙ্গে কি নিজের বাড়িতে থাকার কোনো তুলনা হয়? নিজের বাড়িতে থাকার যে আয়েশ তা আপনি অন্য কোথাও পাবেন না।

 

মদিনার প্রতি ভালোবাসা | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

মদিনার প্রতি ভালোবাসা | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

মদিনায় কিছুদিন থাকার পর মুহাজিররা মক্কার জন্য বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করেন। এক সময় কেউ কেউ আক্ষরিক অর্থেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, তিনি মদিনায় আসার পর আবু বকর (রা) ও বেলালকে (রা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কেমন আছেন?” দুজনের কণ্ঠেই ছিল হাহাকার। আবু বকর (রা) তো মদিনায় পৌঁছার পর তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে তিনি রোগশয্যায় মৃত্যুর কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন। আর বেলাল (রা) আয়েশার (রা) প্রশ্নের উত্তর দেন কবিতার ভাষায়: “আহা! আমি যদি একটি শাখাকণ্টক ভরা উপত্যকায় রাত কাটাতে পারতাম!” অর্থাৎ মক্কা নগরীর শাখাকস্টক ও শুষ্কতা তিনি খুব মিস করছিলেন। তিনি আরও বলেন, “আল্লাহর গজব নেমে আসুক অমুক অমুকের ওপর।” তিনি বেশ কয়েকজন কুরাইশ নেতার নাম উচ্চারণ করেছিলেন, যারা তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল’।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আয়েশা (রা) নবিজিকে (সা) মুহাজিরদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। সব শুনে নবিজি (সা) সব মুহাজিরের (এবং সাধারণভাবে মুসলমানদের) জন্য একটি বিশেষ দোয়া করেছিলেন: “হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন করে ভালোবাসতাম, আমাদের মনের মধ্যে মদিনার জন্যও সেরকম, কিংবা তার চেয়েও বেশি, ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! আমাদের সব ধরনের খাবারের ওপর আপনার আশীর্বাদ বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! মদিনা থেকে মন্দ আবহাওয়া ও রোগ মহামারি দূরের জনমানবহীন এলাকা জুহফাতে পাঠিয়ে দিন।” উল্লেখ্য, সেই সময় মক্কার চেয়ে মদিনায় রোগ-মহামারি একটু বেশি হতো।

 

মদিনার প্রতি ভালোবাসা | সুফ্ফার লোকেরা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তারপর থেকে ধীরে ধীরে মদিনার প্রতি মুহাজিরদের অন্তরে ভালোবাসা জাগতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে মদিনার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা এতটা বেড়ে যায় যে, কখনও তাঁরা শহরের বাইরে গেলে আবার সেখানে ফিরে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে দিন শুনতেন। নবিজিও (সা) বাইরে থেকে ফেরার সময় দূর থেকে মদিনাকে দেখতে পেলেই তাঁর উট বা ঘোড়াকে দ্রুত চালনা করতেন, যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছা যায়। আজকের দিনেও আমরা মদিনায় গেলে এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করি। নবিজির (সা) শহরের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসার অনুভূতি, তা আমরা অন্য কোথাও অনুভব করি না।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment