মহানবির সা নামসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ ১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

মহানবির সা নামসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ, মহানবি মুহাম্মদ (সা) উদ্দেশ করে আল্লাহ তায়ালা নিজেই পবিত্র কোরানে বলেছেন, “আমরা তোমার স্মরণকে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’ [সুরা ইনশিরাহ, 58:8] আল্লাহ তায়ালা নবি করিমকে (সা) এতটাই মর্যাদা দিয়েছেন যে, পবিত্র কোরানের অনেক স্থানেই আল্লাহ নিজের নামের পাশাপাশি তাঁর রসুলের কথাও উল্লেখ করেছেন। কোরান ছাড়াও আমাদের ‘শাহাদা’ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ), আজান, সালাত ইত্যাদি সবকিছুতেই নবিজিকে (সা) স্মরণ করা হয়। এমন কোনো খুৎবা পাঠ করা হয় না যাতে তাঁর সম্পর্কে প্রশংসাসূচক কথা নেই।

 আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন ‘রাহমাতাল্লিল আলামিন’ (অর্থাৎ ‘বিশ্বজগতের রহমত’) নামে। নবিজির (সা) কথা, কাজ, শিক্ষা অর্থাৎ সবকিছুতেই রয়েছে রহমত। আল্লাহ তায়ালা যাকে এতটাই সম্মানিত করেছেন তাঁর সম্পর্কে আমাদের কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।

 

মহানবির সা নামসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ ১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

মহানবির সা নামসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ ১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

মহানবির (সা) নামসমূহ

মহানবি মুহাম্মদকে (সা) অনেক নামে বা বিশেষণে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ওই নাম এবং বিশেষণগুলো মূলত এসেছে সাহাবি, তাবেয়িন, তাবেয়ি-তাবেয়িন ও ইসলামের প্রথম যুগের পণ্ডিত-গবেষকদের কাছ থেকে। কোনো কোনো গবেষক তো নবিজির (সা) ২৫০ টা প্রজন্ত নামের  কথা উল্লেন করেছেন। এ নিয়ে তাঁর আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আবার অল্প পরিসরে সব বৈশিষ্ট্য আলোচনা করাও দুষ্কর। সে জন্য আমরা এখানে নবিজির (সা) কয়েকটি নাম ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করব, বিশেষ করে যেগুলো আল্লাহ তায়ালা (সা) সম্পর্কে পবিত্র কোরানে উল্লেখ করেছেন।

 সন্দেহ নেই যে মানুষের দেওয়া নামের চেয়ে আল্লাহর দেওয়া নামের অর্থের গভীরতা, ব্যাপকতা ও গুরুত্ব হবে অনেক অনেক বেশি। পবিত্র কোরানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবিজির (সা) দুটি নামের উল্লেখ করেছেন। সে দুটি হলো মুহাম্মদ ও আহমাদ। এর মধ্যে ‘মুহাম্মদ’ নামটি চারবার উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘আহমাদ’ নামটি এসেছে দুই অথবা তিনবার। তবে আহমান নামটি প্রতিবারেই ইসার (আ) জবানিতে উল্লিখিত হয়েছে। যেমন, “আমি তোমাদের বলতে চাই যে, আমার পরে একজন নবির আগমন ঘটতে যাচ্ছে, তাঁর নাম হবে আহমাদ।” সহিহ মুসলিমে উল্লেখিত এক হাদিস অনুসারে, নবিজি (সা) বলেছেন, “আমার একাধিক নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মদ এবং আমি আহমাদ।”

 এই দুটি নামই এসেছে মূল ধাতু ‘হামদ’ থেকে, যার অর্থ প্রশংসা করা। তবে এ প্রশংসা যে কোনো ধরনের সাধারণ প্রশংসা নয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যখন কোনো ব্যক্তি আমাদের কোনো ধরনের অনুগ্রহ, সাহায্য, সহযোগিতা বা ভালো কিছু করে আমাদের মনে জায়গা করে নেয়, তখন আমরা তার প্রশংসা করি। কিন্তু ‘হামদ’ শব্দটি যে প্রশংসার অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, তা আরও গভীর ও ব্যাপক। এই প্রশংসা সে ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যে ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণেই প্রশংসিত হওয়ার যোগ্যতা ও দাবি রাখে।

 মহানবি মুহাম্মদ (সা) পরিপূর্ণ ও প্রশংসার দাবিদার বলেই প্রশংসিত। আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতারা এবং অন্যান্য নবিও তাঁর প্রশংসা করেছেন। বিভিন্ন যুগে পৃথিবীতে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই তাঁর চরিত্র এবং গুণাবলির প্রশংসা করেছেন। তাঁর চেয়ে বেশি প্রশংসিত মানুষ এই পৃথিবীতে আগেও কেউ ছিল না, এখনও নেই, এবং ভবিষ্যতে আর কাউকে পাওয়া যাবে না। এক দীর্ঘ সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে:

 বিচার দিবসে প্রত্যেকেই জানবে যে ইসলামই সত্য, কিন্তু তখন তো আর ভুল শোধরানোর সময় থাকবে না। আর তাই মানুষেরা প্রথম আদমের (আ) কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করে বলবে “হে আদম! তুমি তো আমাদের পিতা, এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর রুহকে তোমার ভেতর ফুঁকে দিয়েছিলেন: তুমি কি দেখছ না যে তোমার সন্তানরা কী অবস্থায় আছে?” উত্তরে তিনি বলবেন, “আমি এমন একটি পাপ করেছিলাম যা আমার করা উচিত হয়নি, ফলে আমি এখন নিজেই নিজেকে নিয়ে চিন্তিত।”

এবং বলবেন “নাফসি”১, অর্থাৎ “অন্য কারও কাছে যাও এরপরে মানুষেরা নুহের (আ) কাছে যাবে। কিন্তু তিনি বলবেন, “কাউকে চালের জন্য অনুরোধ না করতে আল্লাহ আমাকে বলেছিলেন; কিন্তু আমি আমার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করে আমি তাঁকে অমান্য করেছিলাম।” সুতরাং সুরও (আ) নিজের সম্পর্কে চিন্তিত থাকবেন, এবং বলবেন, “নাফসি।”

 

islamiagoln.com google news

 

তারপরে তারা ইব্রাহিমের (আ) কাছে গেলে তিনি বলবেন, “আমি তিনটি অসত্য কথা বলেছিলাম ” যদিও সেগুলো পুরোপুরিভাবে অসত্য নয়, তবু তিনি তা নিয়ে চিহ্নিত থাকবেন। প্রথমটি ছিল: অবিশ্বাসীরা তাদের মূর্তিগুলো কে তো তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “অক্ষত বড় মূর্তিটিই এই কাজ করেন (যদিও তিনি এ কাজটি করেছিলেন মানুষদের বোঝানোর জন্য যে, মূর্তিগুলোর আসলে কোনো ক্ষমতা নেই)। দ্বিতীয়টি ছিল: যখন লোকেরা শহরের বাইরে গিয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাদের সাথে যেতে চটি না, আমি অসুস্থ।

এটা তিনি করেছিলেন কেবল প্রতিমাগুলো ধ্বংস করার অভিবারে থেকে যাওয়ার জন্য। এবং শেষটি ছিল। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর ‘বোন’ ভেবেছিলেন, কেবল তাকে রাজার আক্রোশ থেকে বাঁচানোর জন্য (এখানে উনি ধ্বনি শোনা’ বোঝাতে চেয়েছিলেন)। তারপরে সবাই মুনার (আ) কাছে যাবে। তিনিও বলবেন, “আমি রাগের বশবর্তী হয়ে একজনকে হত্যা করেছিলাম।” (যদিও এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা ছিল ) । তারপরে তারা ইসার (আ) কাছে গেলে তিনিও বলবেন যে তিনি এর উপযুক্ত নন।

সবশেষে তারা সবাই মহানবি মুহাম্মদের (সা) কাছে যাবে, এবং তাঁকে অনুরোধ করবে যাতে তিনি সমগ্র মানবজাতির প্রতিনিধি হিসেবে কেয়ামতের ক্ষণ শুরু করার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে সুপারিশ করেন। সেই দিনটি এতটাই কঠিন ও কষ্টকর হবে যে মানুষেরা অধৈর্য হয়ে বলবে, “যা-ই হোক না কেন কেয়ামত আসুক।” নবি করিম (সা) মানুষদের অনুরোধের জবাবে বলবেন “এটি আমার কাজ।” এ কথা শুনে সমগ্র মানবজাতি তাঁর অনেক প্রশংসা করবে।

মহানবি মুহাম্মদকে (সা) দেওয়া হবে ‘আল-মাকাম আল-মাহমুদ’। আরবি ভাষার ‘মাকাম’ শব্দের অর্থ স্থান বা মর্যাদা, আর ‘মাহমুদ’ অর্থ প্রশংসিত। ‘আল- মাকাম আল-মাহমু’ অর্থ হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থান। হাশরের দিন এমন কোনো মানুষ থাকবে না, যে কি না নবি করিমের (সা) প্রশংসা করবে না। এমনকি ফেরেশতারাও তাঁর প্রশংসা করবে। অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টিকুলই তাঁর প্রশংসা করতে থাকবে। মুহাম্মদ ও আহমাদ নামের এই বিশেষ ব্যক্তিটি ছাড়া আর কে-ই বা সেই সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানটিতে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে?

অর্থগতভাবে বলতে গেলে, আহমাদ মানে সর্বোচ্চ গুণগত প্রশংসা আর মুহাম্মদ মানে সর্বাধিক পরিমাণগত প্রশংসা। সুতরাং দুটিকে একত্র করলে সর্বোচ্চ এবং সর্বাধিক (অর্থাৎ ধারাবাহিক) প্রশংসা বোঝাবে। এই সর্বোচ্চ গুণগত ও সংখ্যাগত প্রশংসার সংমিশ্রণেই সৃষ্ট আমাদের প্রিয় নবি (সা)। এখানে উল্লেখ্য, আল্লাহ তায়ালার জন্য যে প্রশংসা তা ঐশ্বরিক; সৃষ্টিকুলের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। পবিত্র কোরানের বর্ণনা অনুসারে, মুসা (আ) ‘মুহাম্মদ’ নাম ব্যবহার করে নবি করিমের (সা) আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আর ইসা (আ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ‘আহমাদ’ নামে।

এর অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত পণ্ডিত ইবনুল কাইয়িম বলেছেন, ‘আমাদের উম্মাহ ব্যতীত কিতাবিদের মধ্যে বৃহত্তম উম্মাহ’ হচ্ছে বনি ইসরাইল বা ইহুদিরা।’ এখানে উল্লেখ্য, ইসার (আ) মূল অনুসারীদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। বর্তমানে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হিসেবে যে বিশাল জনগোষ্ঠীকে আমরা দেখি, তারা ইসার (আ) মূল ধারা থেকে অনেকটাই বিচ্যুত। তারা পল ও কনস্ট্যান্টাইন দ্বারা লিখিত ও প্রবর্তিত বাইবেলের ধর্মীয় ব্যাখ্যার অনুসারী, যেখানে ইসাকে (আ) ঈশ্বরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

সুতরাং নবিজির (সা) অনুসারীদের পরে মুসার (আ) অনুসারীরাই একেশ্বরবাদীদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হবে। তাই মুসা (আ) আমাদের নবিকে ‘মুহাম্মদ’ হিসেবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। অন্যদিকে ইসার (আ) সত্যিকারের অনুসারীদের সংখ্যা অনেক কম হলেও গুণগত মানে তারা অনেক ওপরে থাকবে। [তাঁর শিষ্যদের অনেক অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল বিশেষ করে পৌত্তলিক রোমানদের দ্বারা। সেই সময়ে কিভাবে বিশ্বাসী। সত্যসন্ধানীদের এমনকি হিংস্র জন্তু-জানোয়ারদের সামনে ফেলে দেওয়া হতো।] তাই ইসা (আ) আমাদের নবিকে ‘আহমাদ’ হিসেবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

 

মহানবির সা নামসমূহ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ ১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

নবিজির (সা) আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম নিয়ে এখন আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করব:

আল-মাহি:

এই নামটি নবিজি (সা) নিজের সম্পর্কে যেসব নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ‘মাহি’ শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘মাহা’, যার অর্থ “মুছে ফেলা’। নবিজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমার মাধ্যমে কুফরিকে নিশ্চিহ্ন করবেন (অর্থাৎ মুছে ফেলবেন)।’

আল-হাশির:

এই নামটি এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেন নবি করিম (সা) হচ্ছেন কেয়ামতের পূর্ব নিদর্শন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর আগমনই আসন্ন কেয়ামতের প্রথম নিদর্শন। নবিজি (সা) বলেছেন, ‘আমিই সর্বপ্রথম পুনরুত্থিত হব, এবং বাকি সবাই আমার পরে পুনরুত্থিত হবে।’

আল-আকিব:

এই নামটির অর্থ হচ্ছে ‘সর্বশেষ’। অর্থাৎ তিনি সর্বশেষ নবি, তাঁর পরে আর কোনো নবির আগমন ঘটবে না। নবি আর-রাহমা এবং নবি আত-তাওবা: নবিজি (সা) নিজেই নিজের সম্পর্কে এই দুটি নামের উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করার মধ্য দিয়ে মানুষ রহমত এবং নাজাত বা ক্ষমা পাবে।’

আল-মুকাফা:

এই নামের অর্থ হচ্ছে যিনি সর্বশেষে আসেন এবং পূর্বসূরিদের পরিপূর্ণতা দান করেন। পূর্ববর্তী নবিদের আল্লাহর পথে যে দাওয়াত, তা মহানবি মুহাম্মদের (সা) মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে। ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো নবি আসার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে । আল-মালাহিম: মালাহিম শব্দের অর্থ হচ্ছে পরীক্ষার নিদর্শন। এর মানে হলো, তাঁর উম্মতদেরকেই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ

 

Leave a Comment