আনসার ও মুহাজিরের মধ্যে বিরোধ | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১, দুই মুসলিম যুবক—একজন আনসার, অন্যজন মুহাজির-ক্যারাভানে গিয়েছিল পানি আনতে। পথে কোনো একটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। তর্কের একপর্যায়ে একজন অন্যজনকে লাথি মারলে অন্যজন তাকে পাল্টা আঘাত করে। এভাবে দুজনের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যায়। এক সময় মুহাজির চিৎকার করে বলে, “হে মুহাজিরগণ, এসো, আমাকে সাহায্য করো।”
আনসার ও মুহাজিরের মধ্যে বিরোধ | আয়েশার (রা)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আনসারটিও নিজের লোকদের ডেকে বলে, “হে আনসারগণ, আমাকে সাহায্য করো।” ডাক পেয়ে মুহাজির ও আনসাররা কী ঘটেছে তা দেখার জন্য এগিয়ে আসে। তর্কটি কী নিয়ে বেধেছিল তা আমরা জানি না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মুহাজির ও আনসাররা নিজেদের যুবককেই সমর্থন করতে শুরু করে। এভাবে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়ে যায়। উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে পুরোদস্তুর অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে করার উপক্রম।
নবিজি (সা) হইচই শুনে তাঁবু থেকে বেরিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হচ্ছে এসব?” উপস্থিত সাহাবিদের মুখ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে তিনি অত্যন্ত কঠোর স্বরে বললেন, “তোমরা কি আবার জাহেলি যুগে ফিরে যাচ্ছ? বাদ দাও। ঝগড়াঝাটি তো নোংরা ও জঘন্য কাজ।” তারপর উভয় পক্ষ বিবাদ থামায় এবং অচিরেই বিষয়টি ভুলে যায়।

আনসার ও মুহাজিরের মধ্যে বিরোধ থেকে শিক্ষণীয়
ক. মানুষ কত সহজেই না তার অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়। আমরা জানি, সাহাবিরা ছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বকালের সেরা প্রজন্ম। [৩:১১০] দুই যুবক তুচ্ছ কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক করতে করতে নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে; ইবলিস তো এমন সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকে যাতে সে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি মুসলিমদের সেরা প্রজন্ম যে সাহাবিরা, তাঁদের মধ্যেও এমন ঘটনা অসম্ভব ছিল না। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা সাহাবিদের মানবিক বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাই—তাঁরাও রেগে যেতে পারেন।
খ. নবিজি (সা) জাতিগত বিভাজন থেকে উদ্ভূত রেষারেষিকে নোংরা ও জঘন্য বলে অভিহিত করেছেন। এখানে আমরা আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে যে বিভাজন লক্ষ করছি তা একান্তই নতুন, পাঁচ বছর আগেও ছিল না। পবিত্র কোরানে [৯:১০০] আনসার ও মুহাজিরদের কথা দুটি আলাদা গ্রুপ হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তাদের মধ্যে সংঘাত ও রেষারেষি ইসলাম সমর্থন করে না। কোরানে উল্লিখিত দুটি গ্রুপের মধ্যকার রেষারেষিই যেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে গোটা মানব জাতির মধ্যে বিভক্তি ও রেষারেষি কীভাবে সমর্থন করা যায়? নবিজির (সা) কথা থেকে স্পষ্ট যে, বর্ণবাদ ও সামাজিক ভেদাভেদের ধারণাটি সম্পূর্ণভাবে অনৈসলামিক ।
গ. এখানে আমরা দেখেছি, নবিজি (সা) মুহাজির ও আনসারদের বিরোধের মীমাংসা করতে গিয়ে কে কী বলেছে সেসব আমলেই নেননি। তিনি স্রেফ বলেছেন, “বাদ দাও”, অর্থাৎ ঝগড়াবিবাদ ছাড়ো। এ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় হলো, কিছু বিবাদ মেটাতে ঝগড়াবিবাদের খুঁটিনাটিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুই ব্যক্তির ঝগড়া মেটাতে গেলে আপনাকে বুদ্ধি খাটাতে হবে; কখনও বিষয়ের গভীরে যেতে হবে (কে কখন কী বলেছে ইত্যাদি), কখনও বিশদ গভীরে না যাওয়াই বেশি কার্যকর হতে পারে ।
আরও পড়ুনঃ